কান্না থামছে না রাজশাহীর গোদাগাড়ী ফায়ার স্টেশনের ফায়ারম্যান মতিনের স্ত্রী-সন্তানের
কান্না থামছে না রাজশাহীর গোদাগাড়ী ফায়ার স্টেশনের ফায়ারম্যান আবদুল মতিনের স্ত্রী-সন্তানের। তাদের কান্নায় পরিবেশ ভারী হয়ে উঠেছে।
কোনো শান্তনার কথা বলেই তাদের চুপ করাতে পারছে না গ্রামবাসী। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে সাগরে ভাসছে পরিবারটি।
শুক্রবার (১২ মে) সকালে তার বাড়িতে গেলে চোখের সামনে এমনই হৃদয় বিদারক দৃশ্য দেখা যায়।
রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার মাটিকাটা ইউনিয়নের ভাটা গ্রামে আবদুল মতিনের বাড়িতে গেলে তার সহধর্মিণী তানজিলা বেগম বলেন, ঘটনার খবর পাওয়ার পর থেকে স্বামীর এমন মৃত্যু কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছেন না তিনি। বাবা হারিয়ে তার সন্তানদেরও বর্তমানে একই অবস্থা।
মেয়ে জেসমিন আরা (১৫) নবম শ্রেণির ছাত্রী। আর ছোট ছেলে আবদুল্লাহ আল মারুফ (১০) ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে। বাবার অকাল মৃত্যুতে তাদের সুন্দর ভবিষ্যৎ জীবন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। আদর-স্নেহের পরশ দিয়ে কে তাদের বড় করবে তা ভাবতেই ঢুকরে কেঁদে উঠছে। তাদের কান্না দেখে মা তানজিলাও ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠছেন। আর তাদের কান্না দেখে নিরবে চোঁখের পানি ঝরাচ্ছেন প্রতিবেশীরাও।
নিহত আবদুল মতিনের ছোটভাই সাদ্দাম হোসেন বলেন, ‘আমরা গরিব ঘরের সন্তান। বাবা অনেক কষ্ট করে আমাদের মানুষ করেছেন। মতিন ভাই ডিগ্রি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন। চাকরিটাই মতিন ভাইয়ের পরিবারে আয়ের পথ ছিলো। জমিজমা তেমন একটা নেই। ছেলেমেয়ের এখন কি হবে আল্লাহই জানে।’
১১ মে (বৃহস্পতিবার) রাতে বাড়ি ফিরে ভাত খাওয়ার কথা ছিলো ভাইয়ের। কিন্তু আর বাড়ি ফেরা হয়নি তার। ভাইয়ের দেরি দেখে তার ভাবি তানজিলা মোবাইল করে। এ সময় মৃত্যুর খবর দেওয়া হয় তাকে। এর পরই বাড়িতে শোকের ছায়া নেমে আসে জানান সাদ্দাম হোসেন।
রাজশাহীর গোদাগাড়ী ফায়ার স্টেশনের অফিসার আবদুস সাত্তার বলেন, আব্দুল মতিনের মরদেহ ময়নাতদন্তের পর বৃহস্পতিবার তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। জানাজার নামাজ শেষে ওইদিন রাত ৮টার দিকে মহিষালবাড়ি গোরস্তানে তার মরদেহ দাফন করা হয়।
এরই মধ্যে তার পরিবারকে পুলিশের পক্ষ থেকে ১০ লাখ টাকা অনুদানের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া মরদেহ দাফনের জন্য নগদ ২০ হাজার টাকা দেওয়া হয়ছে। ঘটনার খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের অপারেশন ও মেইনটেন্যান্স পরিচালক মেজর জেনারেল একেএম শাকিল নেওয়াজ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। এর আগে আবদুল মতিনের মরদেহ দেখতে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতাল মর্গে যান তিনি।
ঢাকা ফেরার আগে তিনি ঘটনা তদন্তে পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করে দেন। ওই কমিটিকে ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের রাজশাহী বিভাগীয় উপ-পরিচালক নূরুল ইসলামকে তদন্ত কমিটির প্রধান করা হয়েছে।
নিহত আবদুল মতিন গোদাগাড়ী ফায়ার সার্ভিস স্টেশনে ফায়ারম্যান হিসেবে কর্মরত ছিলেন। সকালে মাটিকাটা ইউনিয়নের বেনীপুর গ্রামের জঙ্গি আস্তানায় অভিযান শুরুর পরপরই পানি নিক্ষেপ করছিলেন তিনি। এরপর মাইকে জঙ্গিদের আত্মসমর্পণের আহ্বান জানানো হয়। কিন্তু জঙ্গিরা তাতে সাড়া দেয়নি।
এক পর্যায়ে জঙ্গিরা বাড়ি থেকে বের হয়ে আচমকা পুলিশ ও দমকল বিভাগের কর্মীদের ওপর হামলা চালায়। পুলিশ তখন পাল্টা গুলি চালায়। এ সময় আবদুল মতিনকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে খুচিয়ে গুরুতর আহত করা হয়। পরে হাসপাতালে নেওয়ার পথে তার মৃত্যু হয়। পরে নিজেদের কাছে থাকা আত্মঘাতী বোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়ে পাঁচ জঙ্গি মারা যায়। নিহত আবদুল মতিন রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার মাটিকাটা ভাটা গ্রামের মৃত এহসান আলীর ছেলে।
খবরঃ বাংলানিউজ