আজ ১৭ মার্চ। হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি, স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের
একশত এক তম জন্মদিন ও জাতীয় শিশু দিবস।
টুঙ্গিপাড়ায় জন্মগ্রহণ করা ‘খোকা’নামের সেই শিশুটি পরবর্তীতে হয়ে ওঠেন নির্যাতিত-নিপীড়িত বাঙালির জাতির মুক্তির
দিশারী। গভীর রাজনৈতিক প্রজ্ঞা, আত্মত্যাগ ও জনগণের প্রতি মমত্ববোধের কারণে পরিণত বয়সে হয়ে ওঠেন বাঙালির
অবিসংবাদিত নেতা। এক রাজনৈতিক সংগ্রামবহুল জীবনের অধিকারী এই নেতা বিশ্ব ইতিহাসে ঠাঁই করে নেন স্বাধীন
বাংলাদেশের রূপকার হিসাবে। বাঙালি জাতির ইতিহাসে বঙ্গবন্ধুর অবদান চিরদিন স্বর্ণাক্ষরে লিপিবদ্ধ থাকবে।
গোপালগঞ্জ মিশন স্কুলে অষ্টম শ্রেণিতে অধ্যয়নকালে তত্কালীন বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনে যোগদানের কারণে বঙ্গবন্ধু
প্রথমবারের মতো গ্রেফতার হয়ে কারাবরণ করেন। এরপর থেকে শুরু হয় তার বিপ্লবী জীবন। গোপালগঞ্জ মিশন স্কুল
থেকে ম্যাট্রিকুলেশন পাস করার পর তিনি কলকাতার ইসলামীয়া কলেজে (বর্তমান নাম মাওলানা আজাদ কলেজ) ভর্তি
হন। এই কলেজ থেকে সক্রিয়ভাবে তিনি ছাত্র রাজনীতি শুরু করেন। ১৯৪৭ সালে দেশবিভাগের বছর এ কলেজ থেকে
বিএ ডিগ্রি লাভ করেন।
পাকিস্তান-ভারত পৃথক হয়ে যাওয়ার পর শেখ মুজিবুব রহমান পূর্ব পাকিস্তানে ফিরে এসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন
বিভাগে ভর্তি হন। ১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি প্রতিষ্ঠা করেন পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ যার মাধ্যমে তিনি উক্ত
প্রদেশের অন্যতম প্রধান ছাত্রনেতায় পরিণত হন।
৬৬’র ছয় দফা আন্দোলন, ৬৯’র গণঅভ্যুত্থান পেরিয়ে ৭০ সালের নির্বাচনে নেতৃত্ব দিয়ে বঙ্গবন্ধু বাঙালির অবিসংবাদিত
নেতায় পরিণত হন। তার নির্দেশনা মোতাবেক ৯ মাসের সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে বীর বাঙালি ৭১’র ১৬ ডিসেম্বর বিজয়
ছিনিয়ে নেয়। জন্ম হয় স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের।
কবি নির্মলেন্দু গুণ তার কবিতায় লিখেছেন-
জনসমুদ্রে জাগিল জোয়ার সকল দুয়ার খোলা-
কে রোধে তাঁহার বজ্রকণ্ঠ বাণী?
গণসূর্যের মঞ্চ কাঁপিয়ে কবি শোনালেন তাঁর অমর কবিতাখানি:
এবারের সংগ্রাম- আমাদের মুক্তির সংগ্রাম।
এবারের সংগ্রাম- স্বাধীনতার সংগ্রাম।
সেই থেকে ‘স্বাধীনতা’ শব্দটি আমাদের।
বিশ্ব গণমাধ্যমের চোখে বঙ্গবন্ধু ছিলেন ক্ষণজন্মা পুরুষ। অনন্য সাধারণ এই নেতাকে ‘স্বাধীনতার প্রতীক’ বা ‘রাজনীতির ছন্দকার’
খেতাবেও আখ্যা দেয়া হয়। বিদেশি ভক্ত, কট্টর সমালোচক এমনকি শত্রুরাও তাদের নিজ নিজ ভাষায় তাঁর উচ্চসিত প্রশংসা করেন।
বিগত বিংশ শতাব্দীর কিংবদন্তী কিউবার বিপ্লবী নেতা প্রয়াত ফিদেল ক্যাস্ট্রো বাংলাদেশের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে
হিমালয়ের সঙ্গে তুলনা করেছিলেন। ক্যাস্ট্রো বলেন, ‘আমি হিমালয়কে দেখেনি, তবে শেখ মুজিবকে দেখেছি। ব্যক্তিত্ব ও সাহসে এই
মানুষটি ছিলেন হিমালয় সমান। সুতরাং হিমালয় দেখার অভিজ্ঞতা আমি লাভ করেছি।
বঙ্গবন্ধু ছিলেন জনগণের নেতা এবং তাদের সেবায় সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করেছেন। তাকে দেয়া বঙ্গবন্ধু খেতাবে এই দেশপ্রেমিক নেতার
প্রতি দেশের মানুষের গভীর ভালবাসা প্রতিফলিত হয়। মানুষের অকুণ্ঠ সমর্থন পেয়েছেন তিনি। শেখ মুজিব হয়ে উঠেছিলেন এ দেশের
মানুষের শেষ কথা, শেষ আশ্রয়।