বেশ অনেকদিন ধরেই লেবাননের পরিস্থিতি ঘোলাটে। সরকারের নানা অনিয়মের প্রতিবাদের পাশাপাশি অর্থনৈতিক সংকটের দ্রুত সমাধান চেয়ে মানুষ সড়কে নেমেছে বারবার।
এরমধ্যে বেশ কয়েকবার নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য এবং আন্দোলনকারীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেছে। এসবের মধ্যে দেশটির প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে সাদ হারিরি পদত্যাগ করেন। এতে কোনো সমাধান তো আসেইনি উল্টো অর্থনৈতিক সংকট দেশটিকে যেন একেবারে গলাটিপে ধরেছে। সংকট যখন পিছু ছাড়ছে না এমন সময়ে মঙ্গলবারে (০৪ আগস্ট) বৈরুতে বিস্ফোরণ দেশটির অর্থনীতিতে যে বাজে প্রভাব ফেলবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
বিভ্রান্তিকর, বিধ্বংসী এবং সর্বনাশা এ বিস্ফোরণে এ পর্যন্ত ৭৮ জনের প্রাণ গেছে বলে খবর পাওয়া গেছে। আর এতে আহত হয়েছেন আরও ৪ হাজারের মতো মানুষ।
পুরো শহরজুড়ে এবং বাইরেও অনুভূত হওয়া বৈরুত বন্দরের এ বিস্ফোরণের প্রত্যক্ষদর্শী-ভাগ্যক্রমে বেঁচে যাওয়া বেশ কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলেছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা। বৈরুতের বাসিন্দা নাদা হামজা তাদের মধ্যে একজন।
তিনি যে বেঁচে আছেন এটাই এখন তার কাছে অবিশ্বাস্য মনে হচ্ছে। তিনি বলেন, আমি একটি বৈদ্যুতিক স্থাপনার মাত্র কয়েক মিটার দূরে ছিলাম। বিস্ফোরণের সময় আমি গাড়ি থেকে দ্রুত বের হয়ে গেলাম এবং দৌড়ে একটি ভবনের প্রবেশদ্বারে পৌঁছানোর পর মনে হলো, ভবনটি ধ্বংস হয়ে গেছে পুরোপুরি। এরপর আমি বারবার বাবা-মাকে কল করার চেষ্টা করে যাচ্ছিলাম। কিন্তু কারও সঙ্গেই যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। আমি যে এখনো বেঁচে আছি তা বিশ্বাস করতে পারছি না।
আমেরিকান ইউনিভার্সিটি অব বৈরুতের সহযোগী অধ্যাপক নাসের ইয়াসিন বিস্ফোরণের সময় বৈরুতের বাইরে ছিলেন। বিস্ফোরণ এতই শক্তিশালী ছিল যে তার কাছে মনে হয়েছে ঘটনা ঘটেছে ‘কাছে কোথাও’।
তিনি বলেন, আমরা প্রচণ্ড ঝাঁকুনি অনুভব করলাম। এটি ছিল ভয়ংকর। আগে কখনো এমন ভয়ংকর দৃশ্য দেখিনি। আমি গৃহযুদ্ধ, ইসরায়েলি আক্রমণের মধ্যে জীবন কাটিয়েছি। আমার অভিজ্ঞতা এবং জ্ঞানের উপর ভিত্তি করে বলতে পারি, এটি লেবাননে হওয়া সবচেয়ে বড় বিস্ফোরণ। আমরা এখনো জানি না কী ঘটেছে। তবে, এটি যে বড় কোনো ঘটনার ইঙ্গিত তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
দেশটির সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মাদ খলিফা। আহতদের চিকিৎসায় সহযোগিতা করার জন্য ঘটনার পর ছুটে গেছেন হাসপাতালে। বিস্ফোরণের সময় তিনি বাড়িতেই অবস্থান করছিলেন বলে জানান।
তিনি বলেন, আমি পরিবারের সদস্যদের বললাম ভূমিকম্প হচ্ছে, তোমরা নিজেদের নিরাপদ রাখার চেষ্টা করো। বলতে না বলতেই সবকিছু ধসে পড়লো। আমি কোনোক্রমে এ পরিস্থিতি থেকে বের হয়ে দ্রুত হাসপাতালে চলে এসেছি আহতদের সাহায্য করতে।
সাবেক ঊর্ধ্বতন সেনা কর্মকর্তা খালেদ হামাদি এ ঘটনাকে বিপর্যয় হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তিনি জানান, ঘটনাস্থল থেকে তিনি প্রায় এক কিলোমিটারের মতো দূরে ছিলেন।
তিনি বলেন, এটা বিপর্যয় ছাড়া আর কিছু নয়। বিভিন্ন সড়কে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে টুকরো টুকরো জানালার কাচ। যেখানে-সেখানে বহু লোকজন আহত অবস্থায় পড়ে ছিলেন। সবকিছু মিলিয়ে আমাকে গৃহযুদ্ধের শেষদিনের কথা মনে করিয়ে দিল।
আহত একজনের পুরো শরীরই রক্তমাখা। তিনি বলেন, কী হয়েছে আসলে পুরোপুরি বুঝতে পারিনি।
‘আমি জানি না আসলে কী ঘটেছে। আমি মাছ ধরছিলাম। শুনলাম কোথায় নাকি আগুন লেগেছে। তাই বাড়ির দিকে গেলাম দ্রুত, শুনতে পেলাম বিস্ফোরণের শব্দ। এরপর দেখি আমি আহত। ’
এদিকে বিস্ফোরণের কারণে মন্ত্রিসভার জরুরি বৈঠক আহ্বান করেছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট মিশেল আউন। একইসঙ্গে তিনি মনে করেন, দেশে দুই সপ্তাহের জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা উচিত। অপরদিকে ভয়াবহ এ বিস্ফোরণের কারণ যাই হোক না কেন, এর জন্য দায়ী ব্যক্তিদের কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী হাসান দিয়াব।
খবর কৃতজ্ঞতাঃ বাংলানিউজ