এশিয়া মহাদেশের ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপীঠ রাজশাহী কলেজ। কলেজ পর্যায়ে তিনবার দেশ সেরা হওয়া কলেজটি শুধুমাত্র একাডেমিক কার্যক্রমের জন্য প্রশংসিত নয়। কলেজের শিক্ষা উপযোগী পরিবেশ ও পরিচ্ছন্ন মনোমুগ্ধকর সবুজ ক্যাম্পাসের জন্যও সকলের কাছে সমাদৃত। শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার একঘেয়েমি দুর করতে ক্যাম্পাসে গড়ে উঠেছে বিভিন্ন রকমের ফুলের বাগান।
ফুল সৌন্দর্য ও ভালবাসার প্রতীক। ফুল ভালবাসেন না এমন মানুষ পাওয়া দুষ্কর। ফুলের মাধ্যমেই আমরা ভালবাসার বহিঃপ্রকাশ ঘটাই। ফুলের সানিধ্য মানুষের মনকে প্রফুল্ল করে তোলে। ফুলের রয়েছে ‘জাদুকরী স্পর্শ’। সেই ফুলের সমাহার যদি থাকে ক্যাম্পাসে তাহলে সেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের চিন্তা-চেতনা, সৃজনশীলতা ও কর্মদক্ষতা তো বৃদ্ধি পাবেই। তেমনই একটা ক্যাম্পাস রয়েছে রাজশাহী কলেজের। যার প্রতিটি কোনায় কোনায় রয়েছে নৈসর্গিক সৌন্দর্যের ফুল বাগান। ফুলে ফুলে সুশোভিত ক্যাম্পাস। এই ফুলেল সতেজতা রাজশাহী কলেজ ছড়িয়ে দিচ্ছে তার শিক্ষার্থীদের মাঝে।
রাজশাহী কলেজের প্রতিটি কোনায়, ভবনের সামনের ফাঁকা জায়গা, চত্ত্বর, মাঠের চারপাশসহ বিভিন্ন জায়গায় গড়ে উঠেছে ফুলের বাগান। কলেজ অধ্যক্ষ প্রফেসর মহা. হবিবুর রহমানের একান্ত প্রচেষ্টায় ক্যাম্পাসের বিভিন্ন জায়গায় শোভা পাচ্ছে বাহারী ফুল। কলেজের রবীন্দ্র নজরুল চত্ত্বর, রাষ্ট্রবিজ্ঞান ভবনের সামনে, পদার্থবিজ্ঞান ভবনের সামনে, পুলিশ ফাঁড়ির আশেপাশের ফাঁকা জায়গা, প্রশাসন ভবনের পেছনে, রসায়ন ভবনের পাশের জায়গাসহ ক্যাম্পাসের প্রতিটি কোনায় ফুঠে উঠেছে বাহারী ফুল। নিজস্ব রঙে এ স্থানগুলোতে প্রস্ফূটিত হয়েছে বাহারী গাঁদা, চায়না গাঁদা, সিনথিয়া, কসমস, সাদা গোলাপ, লাল গোলাপ ও ডালিয়া সহ বিভিন্ন ফুল। ক্লাসের ফাঁকে এসকল ফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করছে শিক্ষার্থীরা। মেতে উঠছেন আড্ডা, গ্রুপ ছবি ও সেলফি তোলায়।
কলেজের বিভিন্ন চত্ত্বরে রেলিং দিয়ে ঘেরা ফুলের বাগান যেন একগুচ্ছ ফুলের আল্পনা। চারপাশে ইট দিয়ে তৈরী করা হয়েছে নকশা। রাঙানো হয়েছে বাহারী রঙে। শুধুমাত্র চত্ত্বরগুলোতে নয়, কলেজের পরিত্যক্ত জায়গাগুলোতে ইট দিয়ে ফুলচাষের জন্য তৈরী করা হয়েছে সারি, চত্ত্বর ও বেদী। এ সুশৃঙ্খল সারি, চত্ত্বর ও বেদীগুলোতে শোভা পাচ্ছে বাহারী ফুল। বিভিন্ন জায়গায় সমান সাইজের গাঁদাগুলো তৈরী করেছে ফুলের বিছানা।
প্রশাসন ভবনের পেছনে বাহারী ডালিয়া সৌন্দর্যে মুগ্ধ দর্শনার্থীরা। বড় বড় পাপড়ির উপর উজ্জ্বল রঙ্গের আবিরমাখা ফুলগুলো হৃদয় কেড়েছে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও দর্শনার্থীদের। রক্তিম লাল গোলাপগুলোর রুপে অভিভূত সবাই। সেই সাথে রয়েছে সাদা গোলাপের বিশেষ রুপ। সিনথিয়া ও কসমসের কোমলতা ছুঁয়ে যাচ্ছে সকলের হৃদয়। বিভিন্ন জায়গায় গাঁদা ফুলের সমাহার যেন ফুল দিয়ে তৈরী বিছানা। ফুল বাগানের এ নৈসর্গিক সৌন্দর্য রাজশাহী কলেজের শিক্ষার্থীদের এনে দেয় সজীবতা। কর্মদক্ষতা বৃদ্ধির সঙ্গে অনুরিত করে সৃষ্টিশীল কাজের জন্য।
পৃথিবীর সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য ফুল হলো স্রষ্টার উপহার। গাছ থেকেই ফুল, ফুল থেকে ফল। গাছ দেয় সুশীতল ছায়া, খাবার, জ্বালানি, বাসস্থান তৈরির কাঠ। অনেক সময় দুর্যোগ মোকাবেলায়ও বিশেষ ভূমিকা রাখে। আবার আমাদের সুন্দর পৃথিবীর ভারসাম্যও রক্ষা করে। কিছু গাছে কেবল ফুলই হয়, খাবার উপযোগী ফল হয় না। এগুলোকে ফুলগাছ বলে। ফুলের মধ্যে বিভিন্ন প্রজাতি আছে। কোনটি সুগন্ধি, আবার কোনটির তেমন গন্ধ নেই।
ফুলের কদর দুনিয়া জুড়ে। ফুল ছাড়া হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের কোনও পূজার্চনাই হয় না। শুধু পূজার্চনা কেন, অতিথি আপ্যায়নে, বিয়েবাড়িতে, জন্মদিনে, সভা-সমাবেশে, বিশেষ কোনো দিবসে ফুল লাগবেই। পৃথিবীর প্রতিটি মানুষের মাঝেই রয়েছে ফুলপ্রীতি। আর তাইতো রাজশাহী কলেজের এই সুশোভিত ফুল বাগানে ঢুঁ মারছেন সব বয়সের মানুষ। শিক্ষার্থীদের বাইরেও নানা শ্রেনীর মানুষ পরিবার, বন্ধুবান্ধব নিয়ে ক্যাম্পাসে আসছেন ফুলবাগানের সৌন্দর্য উপভোগ করতে। তুলছেন ছবিও, আপলোড করছেন ফেসবুকে। ফেসবুকের প্রোফাইল পিকচারের জন্য উপযুক্ত ছবি তুলতে কেউ আসছেন রাজশাহী কলেজ ক্যাম্পাস।
কলেজের ফুল বাগানের দেখাশোনা করেন স্বয়ং অধ্যক্ষ প্রফেসর মহা. হবিবুর রহমান। তিনি নিজ উদ্যোগে কলেজের পরিত্যক্ত জায়গাগুলো ফুল চাষের উপযোগী করে সেখানে ফুল চাষ করে চলেছেন। কর্মচারীদের পাশাপাশি সকাল-সন্ধ্যা দেখভাল করে গড়ে তুলেছেন এসব ফুল বাগান। শীতের সময় কলেজের ভেতরে এমন সুন্দর সুন্দর ফুল দেখে মুগ্ধ কলেজের সকল শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীরা ক্লাশের অবসরে সে সব ফুল বাগানে গিয়ে ফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করছে। বাগানের ফুলগুলোকে স্মরনীয় করে স্মৃতির পাতায় ধরে রাখতে শিক্ষার্থীরা তুলছেন গ্রুপ ছবি, কেউবা তুলছেন সেলফি।
ফুলবাগানের সৌন্দর্য উপভোগ করতে আশা রাজশাহী কলেজের শিক্ষার্থী নেহা, রিবিকা, ইশরাত, মীম, সাথী ও ইসমাইল। এরা সবাই কলেজের বিভিন্ন বিভাগের ও বর্ষের শিক্ষার্থী। তারা বলেন, এমন একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়াশুনা করার সুযোগ পেয়ে আমরা গর্ববোধ করি। এর আগে আমরা যেসকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়াশুনা করেছি সেখানে এমন মনোমুগ্ধকর পরিবেশ পাইনি। এখানকার শিক্ষকরা অত্যন্ত আন্তরিক। এখন আমরা কলেজে ঢুকলেই দেখতে পাই সুন্দর পরিবেশ। ক্যাম্পাসের ভেতরে যেখানে সেখানে কোন রকম ময়লা আবর্জনা পড়ে থাকে না। এজন্য আমাদের খুব ভালো লাগে। মৌসুমী ফুলের চাষ আমাদের ক্যাম্পাসকে আরও সুন্দর করে তুলেছে। ক্যাম্পাসে ঢুকলেই এসব ফুলের দর্শনে শরীর ও মন দুটোই প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে।
ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী রুকাইয়া মীম বলেন, আমাদের কলেজ যেমন দেশ সেরা, ক্যাম্পাসও ঠিক তেমনি দেশ সেরা। চারিদিকে সবুজ আর সবুজ! অবসর সময়গুলো বাইরে কোথাও না গিয়ে বন্ধুদের সাথে ক্যাম্পাসেই আড্ডা দেই। কারন বাইরে কোথায় যাবো? বাইরের থেকে ক্যাম্পাসের পরিবেশ বেশি সুন্দর! অনেকটা ছোট্ট ফুল বাগানের মত।
কলেজের উপাধ্যক্ষ প্রফেসর আল-ফারুক চৌধুরী বলেন, রাজশাহী কলেজে অবস্থান দেশের অন্য কলেজের শীর্ষে। শুধু শিক্ষার দিক থেকেই এগিয়ে নেই রাজশাহী কলেজ। যেমন শিক্ষার দিক থেকে এগিয়ে আছে ঠিক তেমনই সৌন্দর্যের দিকেও। বিভিন্নস্থান থেকে ফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে দর্শনার্থীরা এখানে আসছে। এখানে এসে কলেজের সৌন্দর্যের ছবি তুলছে। এতে আমরা গর্ববোধ করি।
অধ্যক্ষ প্রফেসর মহা. হবিবুর রহমান বলেন, একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অন্যতম শর্ত হল গ্রীন ও ক্লিন হওয়া। ক্যাম্পাস হবে আবর্জনামুক্ত। ক্যাম্পাসে এমন একটি পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে যাতে একজন শিক্ষার্থী সেখানে আনন্দ খুঁজে পায়। যেমনটি ক্লাস রুমের ভেতরে, তেমনটি হবে ক্লাসরুমের বাইরে। প্রতিষ্ঠান যদি শিক্ষার্থীকে আকর্ষিত করতে না পারে তাহলে একজন শিক্ষার্থীর মন ক্যাম্পাসমুখী হবে না। ক্যাম্পাসে সুন্দর ও সুখকর পরিবেশ বজায় থাকলে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসকে ভালোবাসতে শিখবে।
তিনি বলেন, বিশ্বায়নের এ যুগে বর্তমান সরকার বাংলাদেশকে যেমন ২০২১ সালের মধ্যে অর্থনৈতিক দিক থেকে ও পরিচ্ছন্নতায় উন্নতির দিকে নিয়ে যাবে। তেমনি আমরাও সেই তাগিদ অনুভব করি। আমাদের প্রতিষ্ঠানকে পরিস্কার পরিছন্ন রাখা, শিক্ষা ও শিক্ষার্থীদের উপযোগী করে একটি নান্দনিক পরিবেশ তৈরি করাই আমাদের লক্ষ্য।
অধ্যক্ষ বলেন, শুধুমাত্র শিক্ষার্থীদের জন্য যেমন ক্লাস রুমের দিকে নজর দিয়েছি, সেইসাথে ভৌত অবকাঠামো, গাছপালা, ফুলের গাছসহ বিলুপ্ত প্রজাতির গাছ লাগিয়ে ক্যাম্পাসকে আমরা সুসজ্জিত করেছি। এই পরিবেশ যেন অনুকরণীয় ও অনুসরণীয় হয়। আমাদের দেখাদেখি অন্যান্য কলেজও যেন ক্লীন ও গ্রীন কলেজে পরিণত হয় এটাই আমার চাওয়া। আমি নিজেই কলেজের একজন বড় মালি। আমি সকাল সন্ধ্যা এসকল গাছের পরিচর্যা করে থাকি। আর এই সুন্দর পরিবেশ যখন সবাই উপভোগ করে তখন আনন্দে আমার মন ভরে ওঠে। এই আনন্দ নিয়েই আমি বেঁচে আছি।
খবর কৃতজ্ঞতাঃ ডেইলি সানশাইন