দৃষ্টিনন্দন সৌন্দর্যের কারনে প্রশংসিত দেশসেরা রাজশাহী কলেজ। কলেজের দৃষ্টিনন্দন ভবন আর চোখ জুড়ানো ক্যাম্পাস মন কাড়ে সকলের। এই নৈর্সগিক সৌন্দর্যে নতুন মাত্রা যোগ করেছে বাহারী সব ফুল। কুয়াশার চাদরে ঢাকা শীতের সকালের প্রথম প্রহরে বাতাসে ভেসে আসে ক্যাম্পাসের মোহনীয় সব ফুলের সৌরভ।
প্রতিবছর শীতকালে ফুলে ফুলে সুশোভিত হয়ে ওঠে রাজশাহী কলেজ। শিক্ষক-শিক্ষার্থী ছাড়াও এর সৌন্দর্য উপভোগ করেন নানাশ্রেণির মানুষ। তাদের ভাষায়, রাজশাহী কলেজ ফুলের রাজ্য। ক্যাম্পাসে এমন অতুলনীয় ফুলের সমাহারের পেছনের কারিগর অধ্যক্ষ প্রফেসর মহা. হবিবুর রহমান। তাঁর সৃজনশীল উদ্যোগের প্রশংসা করে অনেকেই এটাকে ‘হবিবুরের ফুল গালিচা’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।
কলেজের বিভিন্ন চত্বর, ভবন, ফাঁকা জায়গা ইত্যাদি স্থানে গড়ে উঠেছে ছোট-বড় অসংখ্য ফুল বাগান। কলেজ প্রশাসনের পেছনে পুকুরপাড় সংলগ্ন বাহারী এসব ফুলের বাগান রয়েছে। এছাড়া ক্যাম্পাসের রবীন্দ্র-নজরুল চত্বর, পদার্থ বিজ্ঞান ভবন, পুলিশ ফাঁড়ি সংলগ্ন স্থান এবং কলেজ মিলনায়তনের ফটকের সামনে রয়েছে বাহারী সব ফুলের বাগান।
পুরো কলেজ ক্যাম্পাস যেনো এক ফুলের প্রাচুর্য। মনে হয় শিল্পী যেন তার নিজস্ব শৈল্পিকতায় আপন মনে প্রকৃতির পটে এঁকেছে বিশাল এক চিত্র। যার অলঙ্করণে ব্যবহার করেছেন গোলাপ, গাঁদা, চন্দন মল্লিকা, টগর, জবা, ঝাউ, হাসনাহেনা, বেলি, পাতাবাহার, টাইম ফুল, ঢালিয়া, জিনিয়া, কিয়াকটাস, বৈচিত্র্য বকুল বা কান্ডারী ইত্যাদি।
হালকা শীত উপেক্ষা করে হাঁটতে হাঁটতে হয়তো নিজের অজান্তেই প্রত্যেক শিক্ষার্থী হারিয়ে যাবে মোহনীয় চিরযৌবনা ক্যাম্পাসে। বাহারী সব ফুল আর তার থেকে ছড়ানো মাদকতার সৌরভ সব মিলিয়ে এ যেন কোনো এক নৈসর্গিক পুষ্প উদ্যান।
কলেজের শিক্ষার্থীদের কাছে বিনোদনের বড় খোরাক এ ফুলের বাগানগুলো। কথা হয় ভূগোল ও পরিবেশ বিদ্যা বিভাগের ৩য় বর্ষের শিক্ষার্থী ফারহান, হানি এবং তানিয়ার সাথে। তারা বলেন, ফুল ভালোবাসেন না এমন কাউকে পাওয়া যাবে না। আর বলতে গেলে মানসিক প্রশান্তির একটি বড় নিয়ামক এই ফুল।
পরীক্ষার ফাঁকে বা প্রতিদিনের মতো ক্লাস বিরতিতে প্রত্যেক শিক্ষার্থীই নিজেকে প্রাণবন্ত করতে ঢুঁ মারেন এই সব ফুলের বাগানগুলোতে। এসময় ফুলের স্পর্শে নিজস্ব ভঙ্গিমায় ছবি বা সেলফি তুলতে ব্যস্ত থাকতে দেখা যায় অনেক শিক্ষার্থীকে। আর সেই ছবি শোভা পাচ্ছে ফেসবুক প্রোফাইলে।
হিসাব বিজ্ঞান ৩য় বর্ষের শিক্ষার্থী ইলিয়াস উদ্দিন প্রামানিক জানান, আগে আমরা ক্লাস শেষে পদ্মার পাড়ে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতাম। এখন আমাদের কলেজ ক্যাম্পাসের পরিবেশ মনোমুগ্ধকর। আমাদের আর বাইরে যেতে হয় না। তার মূল আর্কষণ ক্যাম্পাসে বাহারী ফুলের সমরোহ। রাজশাহী কলেজ যেনো এখন ফুলের রাজ্য। কলেজ ক্যাম্পাস দৃষ্টিনন্দন করে গড়ে তোলার জন্য অধ্যক্ষ প্রফেসর মহা. হবিবুর রহমানের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান ওই শিক্ষার্থী।
কলেজের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা, কর্মচারী এবং দর্শনার্থীকেও বিমোহিত করেছে মোহনীয় এই সব ফুল। এছাড়া কলেজের মনোমুগ্ধকর পরিবেশ এবং ফুলের এই নৈসর্গিক পুষ্প উদ্যান দেখতে প্রতিদিন বাইরের অনেক দর্শনাথীও ভিড় জমান।
রাজশাহী কলেজ অধ্যক্ষ প্রফেসর মহা.হবিবুর রহমান জানান, রাজশাহী কলেজ পবিত্রতা ও এক ঐতিহ্যের অঙ্গন। আর সেই অঙ্গনে শিক্ষাবান্ধব পরিবেশ গড়তে শ্রেণিকক্ষ এবং বিভিন্ন কর্ণারে ফুলের পাশাপাশি ঔষধি গাছসহ বিলুপ্তি প্রায় একশত গাছ লাগানো হয়েছে।
এছাড়া বজ্রপাত থেকে রক্ষা পেতে ক্যাম্পাসের সীমানা ঘেঁষেও তিনশত তাল গাছ লাগানো হয়েছে। অধ্যক্ষ আরো বলেন, শিক্ষার্থীদের সৃজনশীলতা বাড়াতে ইনোভেটিভ আইডিয়ায় নান্দনিকতায় ক্যাম্পাসকে তুলে ধরার চেষ্টা করছি। বাংলাদেশ যেমন অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে, তেমনি রাজশাহী কলেজেও এগিয়ে যাচ্ছে।
কলেজের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা, কর্মচারীদের ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, সকলের প্রচেষ্টায় আজকের দেশসেরা কলেজ তার অনন্যে ভরপুর। ক্যাম্পাসের এই নৈসর্গিক সৌন্দর্য অক্ষুন্ন রাখতে শিক্ষার্থীদের প্রতিও আহ্বান জানান অধ্যক্ষ।
খবর কৃতজ্ঞতাঃ দৈনিক সানশাইন