কোটা সংস্কার আন্দোলনে হামলায় গুরুতর আহত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী তরিকুল ইসলাম তারিকের শারীরিক অবস্থার উন্নতি হচ্ছে। আর কয়েকদিন পরে ক্র্যাচে ভর দিয়ে হাঁটা-চলাও করতে পারবেন। তবে পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠতে আরও কমপক্ষে তিন মাস সময় লাগতে পারে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসক।
তরিকুল বর্তমানে ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। তার নিরাপত্তা ও চিকিৎসার স্বার্থে হাসপাতালের নাম প্রকাশ করছেন না সহপাঠি ও তার পরিবারের লোকজন। আর তাই অনেকটা গোপনেই তার চিকিৎসা চলছে।
তরিকুলের সঙ্গে থাকা তার সহপাঠি মোর্শেদুল আলম বাংলানিউজকে জানান, ‘গত ৯ জুলাই তরিকুলের পায়ে অস্ত্রোপচার করা হয়। বর্তমানে তার অবস্থা কিছুটা ভালোর দিকে। তবে পায়ে এখনো ব্যথা রয়েগেছে। প্রতিদিনই ড্রেসিং করা হচ্ছে, পায়ের ফোলা কমে আসছে। পিঠের নিচের দিকে এখনও হাতুড়ির আঘাতজনিত কারণে রক্ত জমাট বেঁধে আছে। পিঠের বিভিন্ন স্থানে লাঠির আঘাতের চিহ্ন এখনো স্পস্ট। মাংসপেশিও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।’
তরিকুলের বোন ফাতিমা খাতুন বাংলানিউজকে বলেন, ‘ভাইয়ের পুরো শরীরজুড়ে এখনো ব্যথা রয়েছে। শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন ও রক্ত জমাট বেঁধে আছে। তাকে নিয়মিত ফিজিওথেরাপি দেওয়া হচ্ছে। কোমরে যে হাতুড়ি পেটা হয়েছিল, সেটার কারণে উঠা-বসায় বেশ কষ্ট হচ্ছে।’
তরিকুলকে কোথায় চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে? তা জানতে চাইলে তরিকুলের সহপাঠি মাসুদ মোন্নাফ বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমরা তরিকুলের নিরাপত্তার অভাব বোধ করছি। এর আগে তার অসুস্থ হওয়া সত্ত্বেও তাকে জোর করে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়। তরিকুলের নিরাপত্তার শঙ্কা ও চিকিৎসায় স্বার্থে হাসপাতালের নাম প্রকাশ করছি না।’
তিনি বলেন, ‘এখন পর্যন্ত বন্ধু, পরিচিতজনদের সহায়তায় চিকিৎসা চলছে। কিন্তু আমরা আর কুলিয়ে উঠতে পারছি না। হাসপাতালের বিল পরিশোধ করা যায়নি। পায়ে অস্ত্রোপচারের সব টাকা এখনও বাকি আছে। তরিকুলের পরিবারের অবস্থা তেমন ভালো না। পরিবারের পক্ষেও সেভাবে সম্ভব হচ্ছে না চিকিৎসার খরচ বহন করা। চিকিৎসার খরচ নিয়ে আমরা বেশ দুশ্চিন্তায় আছি।’
২ জুলাই বিকেলে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীরা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে রাজশাহী-ঢাকা মহাসড়কে পতাকা মিছিল বের করে। আন্দোলনকারীদের অভিযোগ, সেসময় তাদের মিছিলে ছাত্রলীগের কিছু নেতাকর্মী হামলা চালায়। এতে আন্দোলনকারীদের ১৫ জন আহত হয়। এদের মধ্যে তরিকুলকে ধাওয়া দিয়ে ধরে রাম দা, হাতুড়ি, লোহার পাইপ ও লাঠি দিয়ে উপর্যুপরি আঘাত করে হামলাকারীরা। আঘাতে তরিকুলের ডান পায়ের হাড় ভেঙে যায়। এছাড়া মাথায়ও গুরুতর জখম হয় তার।
পরে পুলিশ তাকে উদ্ধার করে রামেক হাসপাতালে ভর্তি করে। কিন্তু শুক্রবার তরিকুলকে ওই হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দিয়ে দেওয়া হয়। পরে তার সহপাঠীরা তাকে নগরীর রয়্যাল হাসপাতালে ভর্তি করেন। সেখানে অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় চিকিৎসক তরিকুলকে ঢাকায় স্থানান্তরের পরামর্শ দেন।
খবর কৃতজ্ঞতাঃ বাংলানিউজ২৪