স্যার আমরা হলে থাকতে চাই। পড়াশুনা করতে চাই। সুন্দর পরিবেশ চাই। আমাদের পড়াশনার স্বার্থে হল খুলে দেন। এটা আমাদের প্রাণের দাবী। আমরা আর বাইরে থাকতে চাই না। এমন দাবী করলেও ভিসির মন নরম হয়নি। তিনি কঠোর থেকে কঠোরতা অবলম্বন করছেন।
যা সাধারণ শিক্ষর্থীরা মানতে নারাজ। তাই তারা এই দাবী নিয়ে মাঠে নেমেছেন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলসমূহ আগামী ১১ জুনের মধ্যে খুলে দেওয়ার দাবিতে ভিসি বরাবর আবেদন জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। রোববার দুপুরে ভিসির বাস ভবনে এই আবেদন পত্র জমা দেয়া হয়।
তবে এবিষয়ে শিক্ষার্থীর সাথে ভিসি আব্দুস সোবহান সরাসরি দেখা করতে রাজি হয়নি বলে জানাগেছে। এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলো প্রশাসনের ২৪ দিন বন্ধের সিদ্ধান্তের বিষয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যেমে চলছে আলোচনা- সমালোচনা।
শিক্ষার্থীদের মধ্যে অনেকেই ফেসবুক পোস্টে কমেন্ট মাধ্যমে এবং সরাসরি ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। কয়েক জনের ফেসবুক কমেন্ট তুলে ধরা হলো। সুরেশর মন্ডল নামের একজন শিক্ষার্থী ‘রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার’ নামক এক ফেসবুক পেজে পোস্টে বলেন, “আচ্ছা,আবাসিক হলগুলো যেমন ভার্সিটির আয়ত্তাধীন, ভিসি ভবন টিচার্স কোয়ার্টারও তো
ভার্সিটির আয়ত্তাধীন।
হলসমুহ‚ বন্ধ হলেও, ভিসি ভবন বন্ধ হয় না কেন? সে কেন ভার্সিটির সুযোগ সুবিধা ভোগ করবে?” বজলুর রশিদ সজল কমেন্টে বলেন, “বাড়িতে আছি। এখান থেকেই সমর্থন জানাচ্ছি। আমাদের রাবিয়ানদের জেগে উঠতে হবে।
কারো কটু কথায় পিছপা না হয়ে এগিয়ে যেতে হবে। আমরা রাবিয়ানরা পারবোই ইনশাআল্লাহ।” জুয়েল রহমান নামের একজন ফেসবুক গ্রুপে কমেন্টে বলেন, “আমাদের তো ওরা শিক্ষার্থী মনে করে না।”
সাগর এসআরএল তার কমেন্টে বলেন, “ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হল গুলা কখনো বন্ধ করা হয়না,এমনকি তাদের অনেকেই হলে থেকেই ঈদ পালন করেন। কুরবানীর ঈদে হল গুলোতে গরু জবাই করা হই, স্টাফ দের ছুটি নাই, থাকার জন্য সাইডে হোটেল আছে।
আর আমাদের রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় হল গুলা বন্ধ হলে খোলার নাম নাই।” রিফাত আহমেদ নামের একজন শিক্ষার্থী ফেসবুক পোস্টে কমেন্টে বলেন, “ভার্সিটি না খোলায় মেসে থাকাও অসম্ভব হয়ে পড়েছে,,,,মেস, হোটেল কর্তৃপক্ষ সব জায়গার হাড়ি-পাতিল ধুয়ে রেখেছে তারা।
আমরা যদিও যাই, তাহলে খাবো কি? ভিসি হয় ভার্সিটি খোলার ব্যবস্থা করেন না হয় টাকা পয়সা দিয়ে মঙ্গল গ্রহে পাঠান। পৃথিবীতে আর থাকতে চাই না।” শিক্ষার্থীদের আবেদন পত্রে হল খোলা রাখার বিষয়ে ১০টি যুক্তি তুলে ধরেন।
১. শিক্ষার্থীদের মধ্যে অনেকেই টিউশনির টাকায় পড়াশোনা চালান, যার ফলে হল বন্ধ থাকলে তাদের টিউশনিগুলো হারিয়ে ফেলতে পারেন। ২. শিক্ষার্থীদের মধ্যে
অনেকেই পড়াশোনার পাশাপাশি খন্ডকালীন চাকুরি করেন। ৩. অনেকেরই ২৪ কিংবা ২৫ জুন একাডেমিক পরিক্ষা আছে।
এ অবস্থায় তাদের পরিক্ষা দিতে অসুবিধা হবে। জার্নি করে এসে পরিক্ষার প্রিপারেশন নেয়াটা বেশ কষ্টকর। ৪. এ মাসেরই ১৬, ১৭, ১৮ তারিখে পুলিশের উপ-পরিদর্শক পদে লিখিত পরিক্ষা আছে। শিক্ষার্থীদের অনেকেই এই পরিক্ষায় অংশগ্রহণ করবেন। বর্তমান প্রতিযোগিতার যুগে বাড়ি থেকে পড়াশুনা করে আদৌও সফল হওয়া সম্ভব না।
৫. আগামী মাসে সহকারী জজ এর নিয়োগ পরিক্ষা আছে যাতে আবাসিক শিক্ষার্থীদের মধ্যে অনেকেই অংশগ্রহণ করবেন। ৬. এছাড়াও জুলাইয়ে সরকারী ব্যাংকগুলোর (সমন্বিত ব্যাংক নিয়োগ) লিখিত পরিক্ষা আছে।
৭. আগামী মাসেই ১৬ তম শিক্ষক নিবন্ধন পরিক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। ৮. মাস্টার্সের থিসিস, রিসার্স জমা দেয়ার সময় চলছে। বাড়িতে থাকায় পর্যাপ্ত ম্যাটেরিয়ালসের অভাবে কাজ ঠিকঠাক করতে পারছে না। তাদের জন্য ক্যাম্পাসে অবস্থান করা জরুরি।
৯. হলের আবাসিক শিক্ষার্থীদের মধ্যে অনেকেই সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক সংগঠনের সাথে জড়িত। দীর্ঘদিন হল বন্ধ থাকায় তাদের সাংগঠনিক কাজ ব্যহত হচ্ছে। ১০. দীর্ঘদিন হল বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীরা পড়াশোনার পাশাপাশি সহ-শিক্ষা কার্যক্রমে অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের থেকে পিছিয়ে পড়ছে।
এদিকে রাবি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি গোলাম কিবরিয়া ও সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনু ক্যাম্পাসলাইভকে জানান, তারা শিক্ষার্থীদের দাবির পক্ষে আছেন। দ্রুত হল খোলার বিষয়ে প্রশাসনের সাথে দেখা করবেন বলে জানিয়েছেন দুই ছাত্র নেতা।
এবিষয়ে ভিসি আব্দুস সোবহানের সাথে বাস ভবনে গিয়ে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তিনি দেখা করতে রাজি হননি। উল্লেখ্য, গত ৩০ মে থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৭ টি আবাসিক হল বন্ধ করা হয় এবং আগামী ২৩ জুন পর্যন্ত হলসমূহ বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয় প্রাধক্ষ্য পরিষদ।
খবর কৃতজ্ঞতাঃ ক্যাম্পাসলাইভ২৪ডটকম