রাজশাহীতে মেয়াদোত্তীর্ণ কোমল পানীয়ের বোতলে নতুন করে লেবেল বসিয়ে বাজারজাত করণের অভিযোগ পাওয়া গেছে। আর ভয়ংকর এ কাজ করছেন রাজশাহী নগরের খড়খড়ি এলাকার ডিলার আনোয়ারুল ইসলাম আনার।এর মাধ্যমে গত কয়েক বছরে আনোয়ার চা বিক্রেতা থেকে কোটিপতি বনে গেছেন।
ঈদের আগে বিপুল পরিমাণ মেয়াদোত্তীর্ণ ও স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর এই পানীয় নগরের বাইরে জেলা পবা, দুর্গাপুর, মোহনপুর. তানোর, গোদাগাড়ী ও বাগমারা উপজেলার বাজাগুলোতে সরবরাহ করছেন তিনি।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ডিলার আনোয়ারুল ইসলাম আনার বাজার থেকে মেয়াদোত্তীর্ণ পেপসি, সেভেন আপ, মাউন্টেনডিউ, মিরিন্ডাসহ বিভিন্ন নামিদামী ব্রান্ডের কোমল পানীয় তাঁর কর্মচারীদের দিয়ে দোকন থেকে ফেরত নিয়ে থাকেন। এরপর এসব মেয়াদউত্তীর্ণ পণ্যগুলোর ফেরত মূল্য কম্পানির কাছ থেকে আদায় করেন। কিন্তু সেগুলো ধ্বংস না করে নিজ গুদামেই রেখে দেন। পরে রাজশাহী নগরের নিউ মার্কেট এলাকার ছাপাখানা থেকে মেয়াদের লেবেল বা স্টিকার তৈরি করেন। পরে সেগুলো মেয়াদোত্তীর্ণ বোতলে লাগানো হয়। তার আগে আগের মেয়াদটি ওষুধ দিয়ে তুলে ফেলা হয়। পরে এই বোতলগুলো আবার বাজারজাত করেন আনোয়ার।
আনোয়ারের প্রতিষ্ঠান থেকে বের হয়ে আসা এক কর্মচারী এইসকল তথ্য নিশ্চিত করে আরও জানান, বোতলে নতুন মেয়াদ লাগানো ও বাজারজাতকরণের করণের মতো অবৈধ কাজ যেসব কর্মচারী করছেন, তাদেরকে অতিরিক্ত বেতন দেয়া হয়।
মেয়াদোত্তীর্ণ বোতলগুলোতে বোঝার উপায় সম্পর্কে তিনি জানান, জালিয়াতির বোতলে মোটা ও প্রায় ভাঙা ভাঙা অক্ষরে স্টিকার বা লেবেল লাগানো থাকে। কিন্তু কম্পানির লাগানো মেয়াদের স্টিকার হয় পরিষ্কার ও চিকন। ফলে একটু খেয়াল করলেই মেয়াদোত্তীর্ণ কি না তা ধরা যায়।
প্রতিদিনই গ্রাম-গঞ্জের বাজারে দোকানে এসব বোতল সরবরাহ করা হয়। সহজ-সরল মানুষ মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখটাও দেখে না। এভাবে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন আনোয়ার। এর প্রতিবাদ যেসব কর্মচারী করে তাদের স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের কয়েক নেতাকে দিয়ে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকিও দিয়ে থাকেন আনোয়ার। কয়েক বছর ধরেই এমন কাজ করছেন তিনি।
আরেক এই কর্মচারী আরও জানান, সম্প্রতি আনোয়ারের এসব অপকর্মের প্রতিবাদ করায় তাঁকে কারখানা থেকে বের করে দেওয়া হয়। তিনি রাজশাহীর ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরে অভিযোগ করেন। ২৫ ফেব্রুয়ারি ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের রাজশাহীর সহকারী পরিচালক হাসান আল মারুফের নেতৃত্বে অভিযান চালিয়ে নগরের খড়খড়ি এলাকায় আনোয়ারের গুদাম থেকে মেয়াদোত্তীর্ণ বিপুল পরিমাণ পেপসি, সেভেন আপ, মিরিন্ডা, মাউন্টেনডিউ ও মেয়াদের স্টিকার জব্দ করা হয়। তবে আনোয়ারুল পলাতক থাকায় তাঁর ম্যানেজারকে ৪০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। আনোয়ারের গুদামের আরেক কর্মচারী জানান, তিনি আনোয়ারের এই অপকর্মের প্রতিবাদ করেন। তাঁকে দিয়ে একই কাজ করানোয় তিনি আনোয়ারের কাছে প্রায় ৪০ হাজার টাকা পান। টাকাটা না দেওয়ায় তিনি আনোয়ারের অপকর্ম ফাঁস করে দেন। এরপর আনোয়ার গুদাম থেকে সব মেয়াদোত্তীর্ণ বোতল রাজশাহী থেকে রাতারাতি ট্রাকে করে সরিয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জের একটি গুদামে রেখেছেন। সেখান থেকে বোতলগুলো বাজারজাত করা হচ্ছে।
অভিযোগের সত্যতা যাচাই করতে রাজশাহীর দুর্গাপুর ও পবার কয়েকটি দোকান থেকে সেভেন আপ, মাউন্টেনডিউ, মিরিন্ডা ও পেপসির কয়েকটি নমুনা বোতল সংগ্রহ করা হয়। সেগুলোর মধ্যে সেভেন আপের অধিকাংশই ছিল মেয়াদোত্তীর্ণ হবার পরে নতুন মেয়াদ লাগানো।
ঘটনার সত্যতা স্বিকার করে রাজশাহী ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক হাসান আল মারুফ বলেন, ডিলার আনোয়ারুলের গুদামে মেয়াদোত্তীর্ণ কোমল পানীয়তে নতুন মেয়াদ লাগানোর প্রমাণ পাওয়ায় তাঁকে জরিমানা করা হয়। সতর্কও করা হয়।
এদিকে অভিযুক্ত আনোয়ারুল ইসলাম আনার নিজের ষড়যন্ত্রেন ম্বিকার উল্লেখ করে বলেন, কিছু কর্মচারী আমাকে ব্ল্যাকমেইল করেছে। ভোক্তা অধিকার থেকে লোক এসেছিল। তবে গুদামে আর কোনো মেয়াদোত্তীর্ণ বোতল নেই। এগুলো কারা বাজারজাত করেছে জানি না।
খবর কৃতজ্ঞতাঃ ডেইলি সানশাইন