ঈদের আমেজ শুরু হওয়ায় রাজশাহীর বাজারে কমে গেছে আমের ক্রেতা। কেটাকাটাতেও ভাটা পড়েছে। ফলে আমচাষি ও ব্যবসায়ীরা হতাশায় পড়েছেন। আমের ক্রেতা ও দাম কমে যাওয়ায় গাছে গাছে পাকা আম ঝুললেও নামানোর সাহস পাচ্ছেন না চাষিরা। বাজারেও তোলা যাচ্ছে না আবার গাছ থেকে নামানোও যাচ্ছে না। ফলে গাছেই পচে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে এবার আম। কৃষকরা বলছেন আমের ভর মৌসুমে রোজা ও ঈদের আমেজ শুরু হওয়ায় আমের প্রতি আগ্রহ কমে গেছে। এ কারণে বাজারেও পড়ে গেছে আমের দাম।
গত বছর আম চাষ করে লাভের মুখ দেখলেও এবার লোকসান গুনতে হবে বলে আশঙ্কা করছেন তারা। আর এর কারণ হিসেবে প্রশাসনের আম পাড়া ও বাজারজাতকরণে নিষেধাজ্ঞাকে তারা দায়ি করছেন ব্যবসায়ীরা।
জানা যায়, গত বছরের তুলনায় আবহাওয়া অনেকটা অনুকূলে থাকায় এ বছর মৌসুম শুরুতে প্রচুর পরিমাণ গাছে মুকুল আসে। গাছে আশানুরূপ আমের ফলন হয়। তবে আমে ফরমালিনের ব্যবহার ঠেকাতে প্রশাসনের কঠোর অবস্থানের ফলে চাষিরা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন বলে জানিয়েছেন। কারণ এ বছর তীব্র তাপদাহ ও গরম আবহাওয়ার কারণে সময়ের আগে গাছেই আম পাকতে শুরু করে। কিন্তু প্রশাসন থেকে আম চাষিদের ১ জুনের আগে গাছ থেকে আম পাড়া ও বাজারজাতকরণের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। জারি করা সময়ের আগেই গাছে গাছে আম পাকতে শুরু করে। কিন্তু, আইন অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির ঘোষণার ফলে এ বছর গাছেই আম পেকে ঝরে পড়ে যায়। আর ১ জুনের পর সব আম চাষি এক সঙ্গে গাছ থেকে আম নামিয়ে বাজারজাত করতে গিয়ে প্রচুর আমদানি ও সামনে ঈদের কারণে বাজারে আমের দাম নেমে যায়। ফলে আম চাষি ও বিক্রেতাদের লাভের পরিবর্তে ক্ষতির ক্ষতির শঙ্কা করছেন।
জেলার পুঠিয়া উপজেলার বানেশ্বরের এক আম চাষি জানান, এবারের গরমে তাপমাত্রা বেশি থাকায় সব ধরনের আম সময়ের আগেই পেকে গেছে। কিন্তু, বাজারে বিক্রি নিষিদ্ধ থাকার কারণে তা বাজারে তোলা যায়নি। এ কারণে অনেক আম পেকে নষ্ট হয়ে গেছে। আর এক সঙ্গে সব চাষিরা বাজারে আম তোলায় দাম অর্ধেকে নেমে এসেছে।
সোমবার জেলার বড় আম বাজার বানেশ্বরে ঘুরে জানা যায়, গত বছর হিমসাগর আম মণপ্রতি বিক্রি হয়েছে ১ হাজার পাঁচশত থেকে ২২০০ টাকা করে। যা এ বছর বিক্রি হচ্ছে ৮০০শ থেকে ১৩০০ টাকায়। গোপালভোগ গত বছর ১২শ থেকে ১৬শ টাকা, এ বছর ৯শ থেকে ১৩ শ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ল্যাংড়া গত বছর ১ হাজার চারশত থেকে ২ হাজার পাঁচশ টাকায় বিক্রি হলেও এবার এক হাজার থেকে ১২শ টাকা পর্যন্ত।
পুঠিয়া উপজেলা কৃষি অফিসার মুনজুর রহমান বলেন, ‘এখানে তুলনামূলকভাবে আমের দাম অনেক কম। বাজারজাতের সমস্যার কারণে ভালো ফলন হলেও দাম পাচ্ছেন না চাষিরা। তাছাড়া রমজান মাস হওয়ায় এ বছর ঢাকা-চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে প্রয়োজনীয় সংখ্যক পাইকার না আসায় আমের দাম কম পাচ্ছেন চাষীরা। তবে রমজান মাসের পর আমের দাম বাড়তে পারে বলেও জানান তিনি।
এদিকে এখনও গাছে গাছে ঝুলছে পাকা আম। সাধারণত গাছে পাকা আম খুব একটা দেখা না গেরেও এবার ব্যাতিক্রম ঘটনা ঘটেছে। দাম কমে যাওয়ায় অনেক কৃষক এখনো আম নামাতে পারেন নি। তবে গেল কয়েকদিন ধরে গরম পড়ছে রাজশাহীতে। তাই গাছেই দ্রুতই পাকছে আম। বানেশ্বর আমের হাটের ইজারাদার ওসমাণ গণি জানান, প্রতিদিন অন্তত হাজার মণ আম কেনাবেচা হচ্ছে হাটে।
বানেশ্বর হাটের আম বিক্রেতারা জানান, গত কয়েকদিন ধরে আবহাওয়া উষ্ণ থাকায় গাছে আম পেকে যাচ্ছে। তাই হাটে প্রচুর আম। কিন্তু রোজার কারণে আমের চাহিদা কিছুটা হলেও কম। এ জন্য আমের দামও কম। তবে ঈদের পর আমের চাহিদা বেড়ে যাবে। তখন আমের দামও বাড়বে।
খবর কৃতজ্ঞতাঃ ডেইলি সানশাইন