আজ বাদল দিনের প্রথম কদম ফোটার দিন। অর্থাৎ আষাঢ়ের প্রথম দিন। কিন্তু আবহাওয়া রয়েছে উল্টো কক্ষপথে। কারণ রাজশাহীতে শুক্রবার (১৫ জুন) তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস! যা চলতি বছরের সর্বোচ্চ বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস।
ফলে রোজাদার মানুষের প্রাণ খাঁচা থেকে বেরিয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। দুঃসহ গরমে হাঁস-ফাঁস করছে মানুষ ও পশু-পাখি। প্রকৃতি যেন তপ্ত নিশ্বাস ছাড়ছে। অগ্নিক্ষরা দহনে নিসর্গ প্রকৃতিটা তামাটে বর্ণ ধারণ করছে। শহরের দক্ষিণে থাকা পদ্মার ধূ-ধূ বালুচর থেকে বয়ে আসা গরম বাতাস শরীরে বিধছে আগুনের হলকার মতো।
সূর্যের প্রখর কিরণে সকাল থেকে খালি মাথায় বাইরে বের হওয়াই দায় হয়ে পড়ে। লু হাওয়ায় হাঁপিয়ে উঠেছে পশু-পাখিরাও। তাপমাত্রার পারদ কেবল উপরেই উঠছে।
রাজশাহী আবহাওয়া অধিদফতরের জ্যেষ্ঠ পর্যবেক্ষক দেবল কুমার মৈত্র বলেন, রাজশাহী অঞ্চলের উপর দিয়ে গত কয়েক দিন থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছিল। বর্তমানে তা তীব্র আকার ধারণ করেছে। ভারী বৃষ্টি না হলে কমার সম্ভাবনা নেই।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, দুই সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে রাজশাহীর সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৫ থেকে ৩৭ ডিগ্রির মধ্যে ওঠানামা করছিল। কিন্তু শুক্রবার (১৫) জুন বেলা ৩টায় রাজশাহীতে ৪০ ডিগ্রি তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। যা চলতি বছরের সর্বোচ্চ।
আগের খতিয়ান টেনে দেবল কুমার মৈত্র বলেন, এর আগে ২০০৫ সালের ১২ জুন রাজশাহীতে মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪২ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়। এরপর ২০১৪ সালের ২১ মে উঠেছিল ৪২ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং ২০১৬ সালের ২৯ এপ্রিল উঠেছিল ৪১ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এছাড়া ১৯৭২ সালের ১৮ মে রাজশাহীতে স্মারণকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৪৫ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তাপমাত্রা বাড়লেও এখন পর্যন্ত ওই রেকর্ড ভাঙেনি।
এদিকে, ওষ্ঠাগত গরমে ঈদের ছুটিতে রাস্তা-ঘাট দুপুরের পর থেকে ফাঁকা হয়ে পড়েছে। শেষ মুহূর্তে ঈদ বাজারে দেখা দিয়েছে মন্দাভাব। তাপপ্রবাহ মাথায় নিয়ে জুমাতুল বিদার নামাজ আদায় করেছেন রাজশাহীর মানুষ। অনেককে ছাতা মাথা নিয়ে কবরস্থানে গিয়ে মা-বাবা, আত্মীয়-স্বজনের কবর জিয়ারত করতে দেখা গেছে। তাপপ্রবাহের কারণে সড়কে রিকশা চলাচল কমে গেছে। ফলে বাইরে বের হওয়া মানুষদের বাড়তি দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
এর ওপর শুক্রবার সকাল থেকে মহানগরীর মূল শহরসহ অধিকাংশ এলাকাই রয়েছে লোডশেডিংয়ের কবলে। ফলে যারপরনাই ভোগান্তিতে সাধারণ মানুষের জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। প্রখর রোদ থেকে ঘরে ফিরেও গরমে ছটফট করছেন সাধারণ মানুষ।
ঘরে-বাইরে কোথাও স্বস্তি নেই। বৃষ্টির জন্য বিশেষ প্রার্থনা করে জুমার নামাজ শেষে প্রখর রোদ ও প্রচণ্ড তাপদাহ থেকে পরিত্রাণ পেতে মহান আল্লাহর রহমত কামনা করা হয়। বিশেষ প্রার্থনা করা হয় অঝোর ধারায় বৃষ্টির জন্য। তবে আকাশে মেঘের ছিটেফোঁটাও নেই।
শুক্রবার দুপুরে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তীব্র গরমের কারণে হাসপাতালে হিটস্ট্রোক ও ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। এছাড়া হৃদরোগ, ও উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত হয়ে রোগীর ভর্তির সংখ্যা বাড়ছে। আর ইনডোরে জ্বর, সর্দি-কাশিসহ বিভিন্ন উপসর্গে আক্রান্ত হয়ে রোগীরা চিকিৎসা নিচ্ছেন।
খবর কৃতজ্ঞতাঃ বাংলানিউজ২৪