বুধবার রাত্রি ৯টা। দড়িখরবোনার মোড়। ত্রিশের কোঠায় পাতলা গড়নের এক যুবক। মাথার চুলগুলো এলোমেলো হয়ে রয়েছে; চোখেমুখে ক্লান্তির ছাপ স্পষ্ট। কাঁধে ঝোলান বড় লাল ব্যাগ মাজা পর্যন্ত ঝুলে রয়েছে; এক হাতে ধরা বড় একটি বাঁশ, কাঁধ বেয়ে চলে গেছে পেছনে; আর সেই বঁশের পুরোটা জুড়েই ঝুলে রয়েছে বিভিন্ন দেশের বর্ণিল পতাকা। অন্য হাতটিও ফাঁকা নেই, সেই হাতেও মুঠো ভর্তি প্লাস্টিকের পাইপে লাগান ছোট পতাকা। পতাকার রঙের দৌরাত্বে চেনার উপায় নেই এর বাহক কে! রাস্তার ধার ঘিসে এগিয়ে আসছে নিজ মনে। সড়কের আলোয় ক্রমেই পরিস্কার হতে লাগল তার চেহারা। দড়িখরবোনা চার রাস্তার মোড়ের কাছে এসে দাড়াল।
পাশের চায়ের দোকান থেকে চার-পাঁচজন মিলে একসূরে হাঁক দিল, ‘এই পতাকা’। সেই পতাকাবাহীও অবলিলায় তাদের দিকে এগিয়ে গেল। মানুষগুলো যে যার মতো পতাকা ধরে দেখতে শুরু করতেই, নিজেদের মধ্যেই বাকবিতন্ডা শুরু করে দিল। পতাকাবাহীর সাথে কেও কোন কথাই বলছে না। এই ফাঁকে সেই পতাকাবাহীর সাথে কথা বলে জানা গেল তার নাম মো: লাবলু।
লাবলুর পৈত্রিক বাড়ি মাদারিপুর। জীবন জীবিকার তাগিদে তার রাজশাহীতে এসে থাকা। বছরের বেশিরভাগ সময় সে বিছানার চাদরসহ বিভিন্ন ধরণের কাপড় ফেরি করে বিক্রয় করে। এছাড়া ফেব্রুয়ারি মার্চ ও ডিসেম্বরের বিশেষ দিবসকে সামনে রেখে বিক্রয় করেন বাংলাদেশের পতাকা। আর এবার বিশ্বকাপ ফুটবলকে সামনে রেখে লাবলু বিশ্বকাপে অশং নেয়া দেশগুলোর পতাকা ফেরি করে চলেছে। দিন থেকে রাত সে এভাবেই দু-পায়ে ছুটে চলেছেন নগরীর এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে। ফুটবল প্রিয় মানুষগুলো তাদের প্রিয় দলের পছন্দের পতাকাটি লাবলুদের কাছ থেকে কিনে নিচ্ছেন। আর সেই আয় দিয়েই পার লবলুদের দিনকাল।
কোন দেশের পতাকা বেশি বিক্রি হচ্ছে? এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানান, ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনার পতাকাই মানুষ বেশি চায়। পাশাপাশি জার্মানির পাতকাও চায়।
চায়ের দোকানে সেই মুনুষগুলোর কথায় কান দিতেই লাবলুর কথার সত্যতা পাওয়া গেল। তারা নিজেদের মধ্যে বাকবিতন্ডায় জড়িয়েছে এবার আর্জেন্টিনা না ব্রাজিল কাপ নেবে। কেও বলছে নগরীতে আর্জেন্টিনা পতাকা বেশে, তো কেও বলছে ব্রাজিলের।
লবলু বলেন, ঢাকার চকবাজার থেকে পতাকা কিনে নিয়ে আসি। বড় পতাকা ১৬০, মাঝারি ৫০ ও ছোট হতা পতাকাগুলো ১০ টাকায় বিক্রি করি। দৈনির ২০টার মতো পতাকা বিক্রি হয়। এবারের বিশ্বকাপে লাবলু কোন দলকে পছন্দকরে? এমন প্রশ্নের উত্তরে ঘার ফিরিয়ে বাঁশে লাগান পতাকাগুলোর দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইল ও শেষে লাজুক হাসিতে উত্তর দেয় জানি না!
খবর কৃতজ্ঞতাঃ ডেইলি সানশাইন