রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের (রাসিক) দুই নম্বর ওয়ার্ড বাসিন্দানা এখনও নাগরিক সেবা থেকে বঞ্চিত। ওয়ার্ডটিতে বসবাসরতদের অভিযোগ বিদ্যুৎপোলের স্বল্পতা, ময়লা-আবর্জনা, মশা ও পানির সমস্যা, অপরিকল্পিত ড্রেনেজ ব্যবস্থা, জলাবদ্ধতা, ভাঙা রাস্তাঘাট, অপরিচ্ছন্নতা তাদের নিত্যদিনের সঙ্গি।
গত নির্বাচনে আগে ওয়ার্ডবাসীর নগরিক সমস্যা নিরসনের আশ্বাস দিয়ে ওয়ার্ডবাসীর মন জন করলেও গত পাঁচ বছরে বাস্তবায়ন চোখে পড়েনি ওয়ার্ডবাসীর। বিষয়টি নিয়ে ওয়ার্ডবাসীর মধ্যে রয়েছে ক্ষোভ ও অসন্তোষ। হড়গ্রাম নতুনপাড়া, কোর্ট কলেজপাড়া, রানীদীঘি, মোল্লাপাড়া, নগরপাড়াসহ আশপাশের এলাকা নিয়ে এই ওয়ার্ডটি সাজান হয়েছে। নির্বাচন কমিশনের দেয়া তথ্য মতে এই ওয়ার্ডটিতে মোট ভোটারের সংখা ১৩হাজার ৪শ ২৪জন। ৩০ জুলাই আসন্ন সিটি নির্বাচনে দুই নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থী হিসেবে মোট সাত জন মনোনয়ন পত্র জমা দিয়েছেন।
সরেজমিন এই ওয়ার্ডের পশ্চিম মোল্লাপাড়া এলাকা পরিদর্শনে দেখা যায়, এখনও এই এলাকায় পর্যপ্ত বিদ্যুতের পোল স্থাপন করা হয়নি। বাড়িতে বিদ্যুত নিতে স্থানীয়রা পোলের পরিবর্তে বাধ্য হয়েই অবৈধ ভাবে ব্যবহার করছেন বাঁশ। রাস্তাগুলো এখনও ভাঙ্গাচোরা, কোথাও এখনও রয়েছে কাঁচা মাটির রাস্তা। একটু বৃষ্টিতেই সড়কগুলো পানিতে তিলিয়ে যায় নয়তো কাদাপানিতে চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়ে। সেই সাথে এখানে নেই ড্রেন। এমনকি এই এলাকার অধিকাংশ বাড়িতে ওয়াসার সাপ্লাই পানি পর্যন্ত এসে পৌছায়নি।
পশ্চিম মোল্লাপাড়া এলাকার বাসিন্দা হালিমা আক্তার অভিযোগ করে বলেন, প্রায় ১৫ বছর আগে এই এলাকায় জমি কিনি। গত ছয় বছর হল এখানে বাড়ি করেছি। এতদিন অপেক্ষায় ছিলাম এলাকার উন্নতি হলে বাড়ি করবো। তবে বাড়ি ভাড়া টানতে না পেরে দ্রুতই বাড়ি করতে হয়েছে। এখন পর্যন্ত এখানে পাকা রাস্তা হয়নি, বিদ্যুত পোল বসেনি, সাপ্লাই পানিও আসেনি। গেল ইলেকশনে বর্তমান কাউন্সিলর টুকু ভাই আমাদেরকে বলেছিল তিনি নির্বাচিত হলে পাকা রাস্তা তৈরি করে দিবেন, বিদ্যুত পোলের ব্যবস্থা করে দিবেন, সাপ্লাই পানি এসে দিবেন। এক নির্বাচন চলে গিয়ে আরেক নির্বাচন চলে আসল, এখন পর্যন্ত আমাদের দুর্ভোগ মিটল না। হালিমার সাথে কথা বলতে দেখে আশপাশের বাড়ির মানুষগুলোও ভিড় জমায়; প্রত্যেই তাদের দুর্ভোগের কথা গুলো তুলে ধরেন, যার সাথে মিল রয়েছে হলিমার বক্তব্যের।
রাস্তার সমস্যার কথা জানিয়ে হড়গ্রাম পূর্বপাড়া এলাকার জনৈক বাসিন্দ বলেন, আমাদের মহল্লার রাস্তাটি দীর্ঘদিন থেকে ভাঙাচোরা অবস্থায় পড়ে আছে। খানাখন্দে ভরা। এর ফলে রিকশা, অটোরিকশা বা মোটরসাইকেল নিয়ে চলাচলে সমস্যা হয়। তিনি বলেন, রাস্তাটি সংস্কারের জন্য মহল্লার লোকজন বেশ কয়েকবার কাউন্সিলরকে তাগাদা দিয়েছেন। কিন্তু তিনি কর্ণপাত করেননি। ফলে কষ্ট করেই এলাকার লোকজন চলাচল করতে বাধ্য হচ্ছেন। শুধু তাই নয়, এ ওয়ার্ডের হড়গ্রাম নতুনপাড়া, কোর্ট কলেজপাড়া, রানীদীঘি, মোল্লাপাড়া, নগরপাড়ার রাস্তাগুলোরও বেহাল অবস্থা।
এ ওয়ার্ডটিতে বর্তমানে সবচেয়ে বড় সমস্যা নতুন রাস্তা নির্মাণ। হড়গ্রাম বাজার থেকে শুরু হয়ে লিলি সিনেমা হলের মোড় পর্যন্ত রাস্তাটির নির্মাণ কাজ চলছে। এই দুই নম্বর ওয়ার্ডের মধ্যে কোর্টস্টেশন থেকে লিলি সিনেমা হলের মোড় পর্যন্ত রাস্তার কাজ চলমান। ফলে এ এলাকায় বসবাসরতরা চরম ভোগান্তির মধ্যে পড়েছেন।
এ ব্যাপারে পিডিবি মোড়ের বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, গত ডিসেম্বর থেকে ৬০ ফুট প্রশস্ত রাস্তা নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। মার্চের মধ্যেই নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এখন পর্যন্ত রাস্তা নির্মাণের যে গতি, তাতে আগামী ডিসেম্বরের মধ্যেও শেষ হবে বলে মনে হয় না। তিনি আরও বলেন, রাস্তা নির্মানের জন্য দীর্ঘদিন থেকে মাটি ও বালুসহ বিভিন্ন ধরনের নির্মাণসামগ্রী ফেলে রাখা হয়েছে। এ কারণে এই রাস্তায় চলাচলে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে সকলকে; এখন বর্ষার পানি জমে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে।
অপরিকল্পিত ড্রেনেজ ব্যবস্থার কারণে জলাবদ্ধতাও এ ওয়ার্ডের সমস্যাগুলোর মধ্যে অন্যতম। জলাবদ্ধতা রয়েছে ওয়ার্ডটির নগরপাড়া, হলদারপাড়া, শেখপাড়া এবং হড়গ্রাম পশ্চিমপাড়ায়। হলদারপাড়ার বাসিন্দা মমতাজ বেগম বলেন, আমাদের এলাকার ড্রেনগুলো দীর্ঘ সময় থেকে সংস্কার হয় না। এমনকি নতুন ড্রেন নির্মাণেরও উদ্যোগ নেই। ফলে বর্ষা মৌসুম এলেই আমাদের এলাকার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েন।
এছাড়া এ ওয়ার্ডটির বিভিন্ন এলাকা রয়েছে অপরিচ্ছন্ন। যেখানে সেখানে ফেলা হয় ময়লা-আর্বজনা। ফলে রয়েছে মশার উৎপাত। বিদ্যুৎপোলের সমস্যার বিষয়টি উল্লেখ করে নগরপাড়ার বাসিন্দা তরিকুল বলেন, আমাদের এলাকায় বাঁশের খুঁটি দিয়ে বিদ্যুৎসংযোগ নেয়া হয়েছে। এর ফলে যেকোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কার মধ্যে থাকি আমরা। এ ব্যাপারে কাউন্সিলরসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হলেও এর সমাধান হয়নি। রাস্তা এবং জলাবদ্ধতাসহ বিভিন্ন সমস্যার ব্যাপারে ওয়ার্ড কাউন্সিলর মাহবুব সাঈদ টুকু বলেন, আমি আমার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতির শতকরা ৬০ ভাগ সম্পন্ন করেছি। অর্থ বরাদ্দ অপ্রতুল থাকার কারণে ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও ওয়ার্ডের উন্নয়নে কাজ করতে পারিনি। তবে আবারও কাউন্সিলর নির্বাচিত হলে অসমাপ্ত কাজগুলো শেষ করতে পারব।
খবর কৃতজ্ঞতাঃ ডেইলি সানশাইন