রাজশাহী সিটি করপোরেশন (রাসিক) নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ৩০ জুলাই। এরই মধ্যে প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র উত্তোলন ও দাখিল শেষ হয়েছে। মনোনয়ন পেয়ে দলীয় প্রতীকে স্বস্তিতে রয়েছেন মেয়র প্রার্থীরা। কিন্তু প্রতীক নিয়ে কাউন্সিলর প্রার্থীদের মধ্যে দেখা দিয়েছে চাপা ক্ষোভ।
সানন্দে মনোনয়নপত্র দাখিল করলেও প্রতীক দেখেই সংক্ষুব্ধ হয়েছেন সম্ভাব্য কাউন্সিলর প্রার্থীরা। তাদের অভিযোগ, নির্বাচন কমিশনের সংরক্ষিত প্রতীকগুলোর বেশিরভাগই সাধারণ ভোটারদের অচেনা। তাই চেনা প্রতীক না থাকায় পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দেওয়ার সময় বিড়ম্বনায় পড়তে হবে তাদের।
এবার কাউন্সিলর প্রার্থীদের জন্য নির্বাচন কমিশনের নির্ধারিত প্রতীকের মধ্যে রয়েছে করাত, এয়ারকন্ডিশনার, ঝুড়ি, বেহালা ও মিষ্টি কুমড়ার মতো প্রতীক। প্রার্থীদের দাবি, এতে সাধারণ ভোটারদের আকৃষ্ট করতে সমস্যায় পড়বেন তারা। সঙ্গে ব্যালটে ভুল ভোটের শঙ্কাও করছেন প্রার্থীরা।
এ বিষয়ে রাসিকের ১নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী শহীদ আলম বলেন, একাধিক প্রতীক দেখতে অনেকটাই এক রকম। এজন্য ভোটাররা ভুল করতে পারেন। আর বহুল প্রচারিত প্রতীক বদলে নতুন প্রতীক নির্ধারণে প্রশ্নের মুখে পড়বে নির্বাচন কমিশন। আর এর সম্পূর্ণ দায় কমিশনকেই নিতে হবে।
রাসিকের ১৯নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থী নুরুজ্জামান টিটো বলেন, আমাদের আগের প্রতীকগুলোর মধ্যে হাতি ছিল, মোরগ ছিল, মোমবাতি ছিল, মাছ ছিল। এ প্রতীকগুলো যদি পুনরায় দেওয়া হয় তাহলে আমাদের ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থীদের জন্য ভালো হয়। না হলে কেবল নতুন প্রতীকের কারণেই অনেক ভোট নষ্ট হবে। এতে প্রার্থী কাঙ্ক্ষিত ফলাফল পাবেন না।
সংরক্ষিত আসনের প্রার্থী নাজমা বেগম বলেন, তাদের প্রতীকের মধ্যে দেওয়া হয়েছে স্টিল আলমারি ও গ্লাস। এর মধ্য স্টিল আলমারি ও গ্লাস ব্যালটে ছাপার পর দেখতে প্রায় একই রকম লাগবে। এতে অনেক ভোটার ভোট দিতে গিয়ে ব্যালটে ভুল করবেন। তাই প্রতীক বদল না করলে তারা নির্বাচনে প্রার্থীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।
সুজন’র রাজশাহী আঞ্চলিক সমন্বয়ক সুব্রত কুমার পাল বলেন, মেয়র প্রার্থীরা দলীয় প্রতীকে ভোট করবেন। এতে তাদের কোনো চিন্তা নেই। তবে সাধারণ ও সংরক্ষিত আসনের প্রার্থীরা বিপাকে পড়বেন। নতুন প্রতীকের কারণে কাউন্সিলর প্রার্থীদের ভোট প্রদানের ক্ষেত্রে ভোটাররা সমস্যার মধ্যে পড়বেন। নির্বাচন কমিশন এর দায় কোনোভাবেই এড়িয়ে যেতে পারে না। তাই জনগুরুত্বপূর্ণ এ বিষয়টি এখনই আমলে নেওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেন সুব্রত পাল।
তবে রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা সৈয়দ আমিরুল ইসলাম বলেন, বিধিবদ্ধ আইন দ্বারা সংরক্ষিত এ প্রতীকের বিষয়ে স্থানীয় নির্বাচন কর্মকর্তাদের কিছু করার নেই। এটা নির্বাচন কমিশন থেকে পাস হয়ে এসেছে। তাই এ বিষয়ে কমিশনের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত।
রাজশাহী সিটি নির্বাচনে এবার সাধারণ কাউন্সিলর পদের জন্য ১২টি ও সংরক্ষিত আসনের জন্য ১০টি প্রতীক সংরক্ষিত করেছে কমিশন। মনোনয়নপত্র বাছাই ও প্রত্যাহার শেষে আগামী ১০ জুলাই প্রার্থীদের জন্য কমিশনের সংরক্ষিত প্রতীকগুলো চূড়ান্তভাবে বরাদ্দ দেওয়া হবে বলেও জানান জেলা রাসিক নির্বাচনের এ রিটার্নিং কর্মকর্তা।
এবার রাজশাহী সিটি করপোরেশনের ৩০টি ওয়ার্ডের সাধারণ কাউন্সিলর পদে মোট ২২১ জন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। তবে ১৭৩ জন মনোনয়নপত্র উত্তোলন করলেও জমা দিয়েছেন ১৬৯ জন প্রার্থী। করপোরেশনের ১০টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডে ৫২ জন নারী নির্বাচনে অংশ নিতে মনোনয়নপত্র তুলেছিলেন, সবাই দাখিল করেছেন। আর মেয়র পদে ছয়জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন।
এবার মোট রাসিকের ভোটার সংখ্যা তিন লাখ ১৮ হাজার ১৩৮ জন। এর মধ্যে পুরুষের এক লাখ ৫৬ হাজার ৮৫ জন। আর নারীর সংখ্যা এক লাখ ৫৬ হাজার ৮৫ জন। ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা ১৩৭টি থেকে বেড়ে ১৩৮টি হয়েছে। বর্ধিত ভোটকেন্দ্রটি হচ্ছে অনন্যা শিশু শিক্ষালয়। এটি মহানগরীর ২৪নং ওয়ার্ড এলাকায় অবস্থিত।
এছাড়া নির্বাচন কমিশন ঘোষিত তফসিল আনুযায়ী আগামী ৩০ জুলাই সিটি করপোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তফসিল অনুযায়ী মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন ছিল গত ২৮ জুন; মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই করা হবে ১ ও ২ জুলাই; প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ৯ জুলাই এবং ১০ জুলাই প্রতীক বরাদ্দ শেষ করা হবে। ৩০ জুলাই সকাল থেকে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।
খবর কৃতজ্ঞতাঃ বাংলানিউজ২৪