কোরবানী ঈদকে সামনে রেখে রাজশাহীতে চাহিদার তুলনায় বেশী পশু প্রস্তুত করা হয়েছে। স্থানীয় প্রয়োজন মিটিয়ে অবশিষ্ট পশু দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করা হচ্ছে। বিশেষ করে খামারি ও ব্যক্তিগতভাবে এসব গরু মোটা তাজাসহ লালন পালন করা হয়েছে। দেশী ও সাধারণ খাবার খাওয়ানো এসব গরু বেশ জনপ্রিয়ও হয়ে উঠেছে। সকল ঘাটতি কাটিয়ে এবারো জেলায় কোরবানীর লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৩৩ হাজার বেশী পশু মজুত রয়েছে।
জেলা প্রাণি সম্পদ অফিস সূত্রে জানা যায়, রাজশাহী জেলায় এবার কোরবাণীর জন্য লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩ লাখ ৪০ হাজার পশুর প্রয়োজন হবে। তবে গরুসহ পশু মজুত রয়েছে ৩ লাখ ৭২ হাজার ৯৪৪টি।
এবছর জেলায় প্রায় ১৪ হাজার খামারসহ বাড়ি বাড়ি ব্যক্তি উদ্যোগে দেশী ও বিদেশী জাতের গরু লালন পালন করা হয়েছে। বর্তমানে এসব খামারসহ বিভিন্ন বাড়িতে বিক্রির উপযোগী মজুদ পশুর সংখ্যার মধ্যে ষাঁড় ৫৬ হাজার ৩৩২টি, বলদ ৫ হাজার ১৯২ টি, গাভী (বকনা) ৩ হাজার ২৫০টি, ছাগল ৩ লাখ ৩ হাজার ৯১৬টি, ভেড়া ৩ হাজার ৮০টি ও মহিষ রয়েছে এক হাজার ১৮২টি।
গত বছর ৩ লাখ ৫৬ হাজার ৮৩১টি পশু কোরবানির জন্য লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও সেখানে ৩ লাখ ২৫ হাজার ২শ’ কোরবানির পশু জবাই করা হয়েছিল। তবে এবার গত বছরের তুলনায় প্রায় ৩৩ হাজার বেশি পশু মজুত রয়েছে। এরপরেও চোরাই পথে আসছে ভারতীয় গরু মহিষ।
ইতিমধ্যে কোরবানীর পশু বেচা কেনাও শুরু হয়েছে। বর্তমানে জেলার ছোট ছোট পশু বাজারে গরু মহিষের চেয়ে ছাগল ভেড়ার বেচা-বিক্রি বেশী হচ্ছে। আর কয়েকদিন পরেই গরু মহিষের বেচাকেনা শুরু হবে বলে জানান, গরু ব্যবসায়ীরা। তবে বেপারী বা গরু ব্যবসায়ীরা বাড়ি বাড়ি বা খামার থেকেই গরু কিনে নিয়ে যাচ্ছে।
বর্তমানে ছোট বড় প্রতিটি হাটেই পশুর কেনার চেয়ে দেখার লোকজন বেশী। গ্রামের হাট গুলোতে গরু বেচা-কেনা হলেও রাখার অসুবিধার কারণে শহরবাসীরা এখনো পশু কিনতে লাগেন নি। গত রোববার উত্তরাঞ্চলের সবচেয়ে বড় পশুহাট রাজশাহী সিটি বাইপাস পশুহাটে দেখা হয়, নগরীর সিপাইপাড়া এলাকার শামসুদ্দিনের সাথে। তিনি বলেন, পশুহাটে গরু দেখতে এসেছি। রাখার অসুবিধার জন্য দাম কম বেশী যাই হোক ঈদের দু’একদিন আগে তিনি গরু কিনবেন।
মৌসুমী পশুহাট বসে মোহনপুর মৌগাছি পান বাজারে। সেখানে দেশী জাতের গরু বেশী দেখা যায়। ওই এলাকার মানুষেরা সাধারণত গ্রামের হাটগুলো থেকে গরু ছাগল কিনে থাকেন। গত শুক্রবার হাটে দেখা হয় শিক্ষক ফজলুর রহমানের সাথে। তিনি বলেন, এই হাটে গরু কিনে সুবিধা আছে। সাধারণত ওই হাটের আশে-পাশের গ্রাম থেকেই গরু ছাগল উঠে। গরু পচন্দ হলে এবং দাম মিটমাট হলে গরু-ছাগল পালনকারির বাড়িতেই রাখা যায়। ঈদের দু’একদিন আগে আনলেই চলে।
রাজশাহী সিটি হাট ইজারাদারের হাট দেখভাল করেন তফিকুল ইসলাম। তিনি জানান, রাজশাহী সিটি বাইপাস পশুহাট এখনো জমে উঠেনি। দেশী জাতের গরুর চাহিদা বেশী। তবে কিছু ভারতীয় গরু-মহিষও হাটে আসছে।
রাজশাহী জেলার সবচেয়ে বড় খামারী এবং জেলা এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ডা. তালহা মিজান বলেন, এবারে খামারীরা লাভের মুখ দেখছেন। তিনি বলেন, যারা একটু বড় খামার করেন তারা নিজেরাই গো-খাদ্য তেরী করায় একদিকে যেমন খরচ কম পড়ে এবং অন্যদিকে খাদ্যের মান ভাল এবং টাটকা থাকে। তিনি এবারে এরই মধ্যে তার খামারের সবক’টি গরু বিক্রি করেছেন। তিনি আরো বলেন, আমার খামারের গরু অনেক ভাল দামে বিক্রি হয়। এবারে দেড় লাখ টাকা থেকে সাড়ে তিন লাখ পর্যন্ত এক একটি গরু বিক্রি করেছেন। তার গরু গুলো ঢাকা এবং চট্রোগ্রামে চলে যায়। এবারে তার খামার থেকে দু’টি গরু কিনেছেন নিজামী ট্রেডিং’র সুমন। তবে তিনি দাম জানাতে অপরাগতা প্রকাশ করেন।
রাজশাহী জেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) ড. জুলফিকার মো. আখতার হোসেন বলেন, কোরবানীর জন্য পর্যাপ্ত সংখ্যক পশুর জোগান রয়েছে। বর্তমান বাজারে পশু বিক্রি করে চাষি এবং খামারিরা লাভবান হচ্ছে। তুলনামুলকভাবে গো-খাদ্যের দামও নাগালের মধ্যে ছিল। তিনমাস আগের পশুর সংখ্যা অনেক কম ছিল। মৌসুমী খামারিরা ঈদের চার থেকে পাঁচ মাস আগে পশু কিনে লালন পালন করে থাকেন। পাশের দেশ ভারত থেকে গরু মহিষ না আসলে খামারীরা অবশ্যই লাভবান হলেন বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
খবর কৃতজ্ঞতাঃ ডেইলি সানশাইন