সংসদ নির্বাচনের পর দেশের বিভিন্ন এলাকার মতো রাজশাহীতেও হঠাৎ করেই বেড়েছে সব ধরনের চালের দাম। আর চালের বাজার লাগামহীন হয়ে পড়ায় নিম্নআয়ের মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছে। তাই আড়তগুলোতে পর্যাপ্ত চাল মজুদ থাকলেও কমেছে ক্রেতা।
এতে রমরমা বেচাকেনায় ভাটা পড়েছে চাল ব্যবসায়ীদের। তবে আশার কথা হচ্ছে, চলতি সপ্তাহের শুরুতে ঊর্ধ্বগতির মধ্যেও রাজশাহীতে মোটা চালের দাম কমেছে। আর বাড়তি দামেই অপরিবর্তিত রয়েছে চিকন চালের দাম।
রাজশাহী মহানগরীর সাহেব বাজার, কুমারপাড়া ও কাদিরগঞ্জ এলাকার পাইকারি চালের আড়ৎ ঘুরে দেখা গেছে, চালের পর্যাপ্ত মজুত রয়েছে। কিন্তু ‘অদৃশ্য কারসাজিতে’ চিকন চালের দাম কমছে না। কবে কমবে তাও বলতে পারছেন না সংশ্লিষ্টরা।
মহানগরীর চালের বাজার ঘুরে দেখা গেছে, পাইকারি ও খুচরা বাজারে চালের দাম দুই থেকে তিন টাকা বেড়েছে। ক্রেতারা বলছেন, চালের দাম দ্রুত না কমলে বাজারে অন্য খাদ্যপণ্যেও অস্থিরতা বাড়বে। এতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন সমাজের নিম্নআয়ের মানুষগুলো। আর বিক্রেতারা বলছেন, ধানের সরবরাহ কম থাকায় চালের দাম বেড়েছে।
মহানগরীর সাহেব বাজার এলাকায় চাল কিনতে আসা দিনমজুর জামাল উদ্দিন বলেন, চালের দাম যেভাবে বাড়ছে তাতে দিনমজুরদের তিন বেলার বদলে দুই বেলা খেয়ে বাঁচতে হবে। অন্যথায় না খেয়ে থাকতে হবে। সারাদিন কাজ করলে ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা মজুরি পাওয়া যায়। তাও আবার শীতের তীব্রতার কারণে এখন রোজ কাজ মিলে না।
কাজ হলে মজুরি থেকে দুইকেজি চাল কিনলেই শাক-সবজি বা তেল-মসলার টাকায় টান পড়ে। অন্য খরচ তো রয়েছে। আর চালের দাম বাড়ায় আটার দামও বেড়েছে। ফলে ভাতের বদলে রুটিও খাওয়া যাচ্ছে না। আগে বাজারে খোলা আটা ৩০ টাকা কেজি ছিল। কিন্তু এখন আটাও ৩২ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। তাই চালের দাম না কমলে নিম্নআয়ের মানুষদের অর্ধাহার অনাহারে জীবন-জীবিকা নির্বাহ করতে হবে বলেও মন্তব্য করেন দিনমজুর জামাল উদ্দিন।
রাজশাহী মহানগরীর সাহেববাজার এলাকার এপি চালের আড়তের বিক্রেতা মিল প্রসাদ জানান, ৮৪ কেজির বস্তা মিনিকেট ৩ হাজার ৫০০ টাকা থেকে বেড়ে ৩ হাজার ৭৫০ টাকা হয়েছে। এছাড়া ৫০ কেজির বস্তা ২ হাজার ৩০০ থেকে বেড়ে ২ হাজার ৪০০ থেকে ২ হাজার ৫০০ টাকা দরেও বিক্রি হচ্ছে। বিআর-২৮ ৮৪ কেজির বস্তা ৩ হাজার ২০০ থেকে বেড়ে ৩ হাজার ৪৫০ থেকে ৩ হাজার ৫০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। বিআর-২৮ পঞ্চাশ কেজির বস্তা ২ হাজার ১০০ থেকে বর্তমানে ২ হাজার ২০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া বেড়েছে সুগন্ধি চালের দামও। বাসমতি চাল ৫০ কেজির বস্তা ৩ হাজার ২০০ টাকা থেকে বেড়ে ৩ হাজার ৪০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। চিনিগুড়া বা কালোজিরা ৭২ টাকা কেজি দরে বিক্রি হলেও এখন ৭৬ টাকা দরে পাইকারি বিক্রি হচ্ছে। পাইকারি বাজারের প্রভাব পড়েছে খুচরা বাজারেও।
পাইকারি বাজারে চালের দাম বাড়ার কারণে খুচরা বাজারের চাল কেজিপ্রতি দুই থেকে তিন টাকা বেড়েছে। তবে চিকন চালের দাম বাড়লেও চলতি সপ্তাহে মোটা চালের দাম কিছুটা কমেছে। এতে বাজারে স্বস্তি ফিরতে শুরু করেছে।
মহানগরীর কাদিরগঞ্জ এলাকার লোকমান রাইস এজেন্সির প্রোপাইটর শাহাদত আলী বলেন, বাজারে চিকন চালের দাম বাড়ার পর আর কমেনি। তবে চলতি সপ্তাহের শুরুতেই মোটা চালের দাম কমে এসেছে। এর মধ্যে স্বর্ণা চাল ৫০ কেজির বস্তা ২ হাজার ৬০০ টাকা থেকে কমে ২ হাজার ৪০০ টাকা হয়েছে। আর গুটি স্বর্ণা চাল ৫০ কেজির বস্তা ২ হাজার ৪০০ টাকা থেকে কমে ২ হাজার ২০০ টাকা হয়েছে। অনুরূপভাবে ৮৪ কেজি বস্তার দামও কমেছে।
জানতে চাইলে কাদিরগঞ্জ এলাকার নিউ আদর্শ শস্যভাণ্ডারের প্রোপাইটর জসিম মণ্ডল বলেন, পাইকারি বাজারে দাম বেশি থাকায় খুচরা বাজারের চালের দামেও প্রভাব পড়েছে। প্রতিটি চাল-ই কেজিতে দুই থেকে তিন টাকা বেড়েছে। নির্বাচনের কারণে মিলগুলো কয়েকদিন বন্ধ ছিল। এজন্য বাজারে ধানের সরবরাহ কমে আসে। আর ধানের সরবরাহ কম থাকায় চালের দাম বেড়ে গেছে। তবে নতুন স্বর্ণা ধান উঠতে শুরু করেছে। তাই মোটা চালের দাম কমতে শুরু হয়েছে।
এতে কিছুটা হলেও নিম্নআয়ের মানুষের মধ্যে স্বস্তি ফিরেছে। কিন্তু দাম বাড়ার খবরে চালের আড়তগুলোতে এখন ক্রেতার সংখ্যা কমে গেছে। এতে বেচাকেনায় মন্দাভাব পড়েছে বলেও মন্তব্য করেন কাদিরগঞ্জ এলাকার এই চাল ব্যবসায়ী।
খবর কৃতজ্ঞতাঃ বাংলানিউজ২৪