চৈত্রের দুপুর বেলা। সূর্যের প্রখরতা। সূর্যের তাপটা অন্যান্য দিনের থেকে শনিবার একটু বেশি। হঠাৎ ফোন বেজে উঠলো। সংকেত এলো ট্রেন আসছে। যেন প্রস্তুত ছিলেন তানজিলা খাতুন। হাতে দুইটি পতাকা নিয়ে ছুটোছুটি করছেন। ব্যস্ত রাস্তায় মানুষের চলাচল থামিয়ে রেলগেট বারের হাতল ঘুরিয়ে দিলেন তিনি। তারপর সবুজ পতাকা নেড়ে সংকেত। পার হয়ে গেলো ট্রেন। এ দৃশ্য নগরীর ভদ্রা লেভেল ক্রসিংয়ের। সেখানে তানজিলা দায়িত্ব পালন করছেন।
তানজিলা খাতুন মাদ্রাসা থেকে দাখিল পাশ করেছেন। উন্মুক্ত কলেজ থেকে এবার এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নেবেন। সংসার চালানো, সন্তানের দেখাশোনা করা, নির্দিষ্ট সময়ে নিজের দায়িত্ব পালন করা এখন তার কাজ। তাই রেলওয়ের গেটম্যান হিসেবে চাকরি করছেন। কাজ করছেন অনায়াসে।
তানজিলা বলেন, মানুষের খারাপ মন্তব্য এড়িয়ে নিজেকে উৎসাহিত করছেন নিজের দায়িত্ব পালনে। বাবা মার বাধার পরেও নিজে আত্মনির্ভরশীল হতে চান, একারনে এ চাকরি বেছে নিয়েছেন। তানজিলা জানান তার স্বামীর নাম মিজানুর রহমান। তাদের বিয়ে হওয়ার পর অনেকটা সময় কেটে গেছে। তাদের একটি মেয়েও আছে। তার নাম মরিয়া বিন্তে মিজান। মেয়েটি পড়াশোনা করে। তাদের বসবাস ভদ্রা জামালপুরের একটি ভাড়া বাসাতে। তানজিলার স্বামী মিজানুর রহমান পেশায় একজন চাকরিজীবী। তিনি চাকরি করেন রেলের জিএম দপ্তর শাখায়।
তানজিলা খাতুন, বলেন নিজ যোগ্যতাই চাকরি নিয়েছেন তিনি। ট্রেন আসার সময় দেখা গেল নিজের সন্তান, ব্যস্ত রাস্তা, ট্রেন সকল কিছু তিনি একাই নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম। কোন কাজে পিছিয়ে নেই নারীরা। দুইজন পুরুষের সাথে পাল্লা দিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন একজন নারী। তিনি পারিবারিক সচ্ছলতার জন্য রেলের গেট কিপারের কাজ করেন।
তানজিলা বলেন, তার কাজে সব সময় সহায়তা করেন তার স্বামী। তানজিলা ডিউটি যখন রাতে থাকে তখন তার স্বামী সাথে থেকে তাকে সহায়তা করেন। স্বামী তাকে সহায়তা করে বলেই কাজ করতে পারেন তানজিলা। তিনি বলেন, কোনো কাজই ছোট নয়। কাজ না করে ঘরে বসে থাকা উচিত না। নারী-পুরুষ ভেদাভেদে কাজ করা উচিত।
বর্তমানে কোন দিক থেকে পিছিয়ে নেই নারীরা। এভারেস্ট জয় করেছে নারী। দেশ পরিচালনা করছেন নারী।ক্রিকেটে বাংলাদেশের মুখ উজ্জ্বল করেছে নারীরা। প্রতিটি নারী সচ্ছলতার প্রয়োজন রয়েছে। তানজিলার ভাষায় অনেক সময় কিছু লোক তাকে খারাপ চোখে দেখেন। নানান খারাপ মন্তব্য করেন অনেক বাজে কথা বলেন। কিন্তু তানজিলা খাতুন এসব কিছুর মনে করেন না। মানুষের খারাপ মন্তব্য কে নিজের শক্তি হিসেবে কাজে লাগান তিনি। ট্রেন আসার সময় রেলগেট নামানো থাকলে রেলগেট টি তুলে পারাপার হয় অনেক মানুষ। গেটকিপার নারী বলে তার বাধা কেউ শুনে না। তিনি মনে করেন এটি সচেতনতার অভাব। তিনি চান রেলের নিয়ম এবং আইন সকলে মেনে চলুক।
খবর কৃতজ্ঞতাঃ ডেইলি সানশাইন