ধানের কাঙ্খিত দাম না থাকলেও লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়েছে বোরো আবাদ। রাজশাহীতে চাষিরা খাদ্যের চাহিদা মেটাতেই কোমর বেঁধে মাঠে নেমে পড়েছেন বোরো চাষাবাদে। সময়ের তালে তালে প্রায় দেড়মাস ধরে দীর্ঘ মেয়াদী বোরো চারা রোপন করছেন। রাজশাহীর বরেন্দ্র অঞ্চলসহ বিভিন্ন উপজেলায় এখনো ধানের চারা রোপনে ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রাসরণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, রাজশাহী ৬৫ হাজার ১২৫ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে দাম ভাল না থাকলেও লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৪ হাজার ৯৮৫ হেক্টর (প্রায় ৩৭ হাজার বিঘা) বেশী জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। এবারে ৭০ হাজার ১১০ হেক্টর জমিতে বোরোর আবাদ হয়েছে।
রাজশাহীর বিভিন্ন উপজেলার মাঠে মাঠে এখন আগাম লাগানো বোরো চারা অনেক অনেকটাই পরিপক্ক হয়েছে। তবে এখনো আলু উঠানো জমিতে জোরেশোরেই চলছে বোরো রোপনের কাজ। মাঠের দিকে নজর দিলেই চোখে পড়ে ব্যস্ত চাষিদের। কোনো জমিতে চলছে চাষ, বীজতলা থেকে তোলা হচ্ছে বীজ, চলছে রোপণ। আবার আগাম লাগানো বোরো ক্ষেতে নিড়ানি ও সার দেওয়ার কাজ। সব মিলিয়ে মাঠে দৃশ্যমান হচ্ছে বোরোর আবাদ।
বিভিন্ন মাঠে মাঠে অপকিল্পিত পুকুর হওয়ায় এবং পানি নিস্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় দীর্ঘ সময় ধরে বোরোর চারা লাগাতে হচ্ছে বলে জানান ভুক্তভোগিরা। এমন অবস্থার জন্য জেলার বরেন্দ্র অঞ্চল বলে খ্যাত গোদাগাড়ি ও তানোর উপজেলায় পরিস্থিতি বিবেচনা করে অনেক আগে থেকে শীত উপক্ষো করেও চাষিরা বোরো আবাদ রোপন করেছেন। আবার অনেকে আলুর আবাদ তুলে এখন বোরো চারা রোপন করছেন।
এবারে বোরো আবাদে শ্রমিক খরচ বেশী হচ্ছে। পবা উপজেলার তেঘর গ্রামের শরিফুল সরকার বলেন, পানি নিস্কাশনের নালায় পুকুর খননে একদিকে পানি নেমেছে দেরিতে এবং অপরদিকে জমিতে কুচুরীপানা ও জলজ উদ্ভিদ জন্মে চাষের অনুপোযোগী হয়ে যায়। সেগুলো পরিস্কার করতেই প্রতি বিঘাই ৩ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। এরপর চাষ এবং চারা রোপন। এতে প্রথম অবস্থাতেই প্রায় ৭ হাজার টাকা লাগছে।
মোহনপুর উপজেলার শিক্ষক কাম কৃষক নুরুল ইসলাম বলেন, আমাদের দেশে এখনো বাণিজ্যিক ভিত্তিতে ধানের আবাদ হয় না। বেশীরভাগ কৃষকই নিজেদের খাদ্য উৎপাদনের লক্ষ্যেই ধানের আবাদ করে থাকে। প্রেক্ষিতে বাজারে ধানের দাম কম না বেশী এ চিন্তা করে আবাদ করে না। তবে বর্তমানে প্রান্তিক চাষিরা জমি লিজ নিয়ে ধানের আবাদ করছেন লাভের আশায়। কিন্তু কয়েক বছর থেকে ধানের কাঙ্খিত দাম না পেয়ে তারা হতাশ। বর্তমান বাজারে ধানের দাম আর একটু বেশী হওয়া উচিৎ তিনি মনে করেন।
জেলা কৃষি অফিস সুত্রে জানা গেছে, জেলায় বিভিন্ন জাতের বোরো চারা রোপন হচ্ছে। এসব জাতের মধ্যে রয়েছে ব্রিধান-২৮, ২৯, ৪৯, ৫০, ৫২, ৬২, বিআর-১৫, ১৬ এবং কিছু জমিতে হাইব্রিড। তবে এবারে বোরো বীজতলায় কোল্ড ইনজুরি না থাকায় বোরো চারা ভাল হয়েছে।
উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মজিবর রহমান বলেন, বোরো চারা রোপণের উপযুক্ত সময় ১৫ জানুয়ারি থেকে ২০ ফেব্রুয়ারী পর্যন্ত। এবারে শীতের তীব্রতা অনেক বেশি হলেও চাষিরা শীতকে উপেক্ষা করেই ধানের চারা রোপণ করেছেন। অনেকে এখন আলু তুলে বোরো চারা রোপন করছেন।
এ ব্যাপারে জেলা সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক শামছুল হক বলেন, অন্যান্য দ্রব্যমূল্যের তুলনায় ধানের দাম কম এটা সত্যি। তবে এমন নয় যে চাষিদের লোকসান হচ্ছে। আবহাওয়া ভাল থাকলে এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগ হলে এই দামেও চাষিরা লাভবান হবেন বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
খবর কৃতজ্ঞতাঃ ডেইলি সানশাইন