পদ্মাপাড়ের নগরী রাজশাহী। বিনোদনের জন্য স্পট বা জায়গা হাতেগোনা। শহুরে জীবনের ক্লান্তি কাটাতে তটিনী পদ্মার পাড়ে ভিড় জমান রাজশাহীবাসী। বিকেল হলেই হাজার হাজার মানুষের পদচারণায় মূখর হয়ে ওঠে পদ্মা। আর এই দর্শনার্থীদের উপজীব্য করেই চলছে কিছু মানুষের জীবন। পদ্মার পাড়ে গড়ে উঠছে ছোট বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। দর্শনার্থীদের কাছে মুখরোচক খাবার ও রকমারী পণ্য বিক্রি করেই চলছে তাদের জীবিকা। এতে পদ্মার ধারে গড়ে উঠছে ছোট-বড় অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান।
গ্রীষ্ম, শীত, বর্ষা কিংবা শরৎ; সব ঋতুতেই পদ্মা নদীকে ঘিরে মানুষের আনাগোনা। গ্রীষ্মের ধূঁ ধূঁ বালি আর বর্ষার জলে টইটুম্বুর পদ্মা, সবসময় মানুষকে কাছে টানে। কোন উৎসব বা বিশেষ দিনে পদ্মায় তিল ধারনের জায়গা থাকে না। প্রতিটি উৎসবে বিনোদনপ্রেমীদের কাছে ঘোরাঘুরির স্পট হিসেবে প্রথম পছন্দ পদ্মার পাড়। শিশু থেকে বৃদ্ধ সব বয়সী মানুষের ভাললাগার অন্যতম স্থানে পরিণত হয়েছে রাজশাহীর পদ্মাপাড়।
প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা গড়িয়ে খানিক রাত অবধি পর্যন্ত পদ্মার কূলে চোখে পড়ে মানুষের আনাগোনা। তারুন্যের ঢেউ রাজশাহীর পদ্মা নদীর অন্তত ১০ কিলোমিটার জুড়ে। সকাল নেই, দুপুর নেই, সবসময় পদ্মাকে ঘিরে প্রাণচাঞ্চল্য বিরাজ করে। পদ্মার ধার ঘেঁষে নির্মাণ করা হয়েছে ওয়াক ওয়ে। উন্নতমানের এ সড়ক দিয়ে হেঁটে বিকেল ভ্রমনের সুখ লাভ করেন দর্শনার্থীরা।
আর এই জনবহুল পদ্মাকে ঘিরেই গড়ে উঠেছে ছোট-বড় স্থায়ী ও ভ্রাম্যমান কিছু ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। যাদের আয়ের একমাত্র উৎস নদীর ধারে ঘুরতে আসা মানুষগুলো। সকাল নয়টা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত তারা বসেন পদ্মার কোলঘেঁষে। কেউ পেয়ারা, কেউ চটপটি-ফুচকা, তো কেউবা আবার বিভিন্ন আচারসহ রকমারী মুখরোচক খাবার বিক্রি করেন।
পদ্মার পাড়ে গেলে বিভিন্ন খোলা জায়গায় চোখে পড়বে সাজানো চেয়ার। কোথাও আবার চেয়ার-টেবিল দুটোই পাতা রয়েছে। পাশেই ব্যবসায়ীরা অপেক্ষা করছেন তাদের মুখরোচক খাবারের দোকান নিয়ে। চায়লেই বসা যাবে না এসব চেয়ারে। বসতে হলে খাবার অর্ডার করতে হয়। অনেক সময় বসার জন্য চেয়ার প্রতি ১০ টাকা করে নেন তারা।
কথা হয় পদ্মার পাড়ের কয়েকজন পেয়ারা ব্যবসায়ীর সঙ্গে। তারা জানান, এখানে প্রতিদিন প্রায় ৫-১০ হাজার মানুষ ঘুরতে আসেন। উপভোগ করেন এই খাবারগুলো। প্রতি কেজি মাখানো পেয়ারা এখানে বিক্রি হয় ১০০ থেকে ১২০ টাকা দরে। যা বাজারের চেয়ে অনেক বেশি। কোন কোন ব্যবসায়ী রোজ ১৫ থেকে ২০ কেজি পেয়ারা বিক্রি করেন।
তালাইমারী ফুলতলা থেকে টি-বাধ পর্যন্ত ঘুরে দেখা যায়, শুধুমাত্র পেয়ারা বিক্রি করছেন প্রায় ৫০ জন ব্যবসায়ী। প্রতিদিন গড়ে তাদের আয় হয় ৮ শ থেকে ১ হাজার টাকা। সেই হিসেবে পদ্মার পাড়ের পেয়ারা বিক্রেতারাই প্রতিদিন গড়ে ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা আয় করেন।
এতো গেল শুধু পেয়ারা ব্যবসায়ীদের কথা। অন্যান্য ব্যবসায়ীদের প্রতিদিন গড়ে দেড় লক্ষ টাকার ব্যবসা হয় বলে জানা গেছে। এছাড়াও চটপটি-ফুচকা, ঝালমুড়ি, বাদাম, ফাস্টফুরে দোকান তো আছেই। পদ্মাপাড়ের এই দর্শনার্থীদের ঘিরেই সংসার চলে শত শত গরীব মানুষের সংসার। তবে গায়ে খেটে সংসারের আহার যোগাতেই ব্যবসা করেন না সবাই। ক্ষমতার জোরে অবৈধ দখলে গড়ে উঠছে বড় বড় ফাস্ট ফুডের স্থায়ী-অস্থায়ী দোকান ও ভবন। জীবিকা নির্বাহ নয়, টাকা কামানোই তাদের মূখ্য উদ্দেশ্য।
খবর কৃতজ্ঞতাঃ Daily Sunshine