রমজানের শুরুতে রাজশাহীতে ফের হানা দিয়েছে তাপদাহ। প্রকৃতি যেন ছাড়ছে তপ্ত নিঃশ্বাস। ঘরে-বাইরে কোথাও স্বস্তির ছিটেফোঁটাও নেই। সূর্য দহনে পুড়ছে রাজশাহী।
কাঠফাটা রোদে রোজাদার মানুষের জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে মঙ্গলবার (৭ মে)। তেঁতে উঠেছে অফিস ও আবাসিক ভবনে থাকা আসবাবপত্রগুলোও।
দুপুরে রাজশাহী মহানগরীর পথ-ঘাট খাঁ খাঁ করছিল। ওষ্ঠাগত গরমে মানুষের পাশাপাশি পশু-পাখিরাও হাঁসফাঁস করছে। সাইক্লোন ‘ফণী’র প্রভাবে গত ৩ ও ৪ মে রাজশাহীতে মাঝারি থেকে ভারী বর্ষণ হয়। এটি ছিল রাজশাহীর আম ও বিবর্ণ প্রকৃতির জন্য আর্শীবাদ। এরপর আর বৃষ্টির দেখা নেই। তাপমাত্রা ফিরেছে পুরনো চেহারায়। গরমের দাপটে সাধারণ মানুষের মধ্যে আবারও বৃষ্টির জন্য হাহাকার।
মঙ্গলবারসকাল থেকে তাপদাহ আর বিকেলের পর ভ্যাপসা গরমে রোজাদারদের প্রাণ ওষ্ঠাগত। গাছ-পালা ছুঁয়ে কোনোভাবেই শীতলতা নামছে না এই অগ্নিশালায়। সবুজ বৃক্ষরাজি তামাটে বর্ণ ধারণ করতে চলেছে আবারও।
শহরের দক্ষিণে থাকা পদ্মাপাড় থেকে ধূলিকণাগুলো যেন আগুনের স্ফুলিঙ্গ হয়ে উড়ে এসে পড়ছে মানুষের শরীরে। তবে পরিবেশ বিজ্ঞানীরা বলছেন, আঞ্চলিক কোনো সমস্যার কারণে আবহাওয়া এমন বিরূপ হয়ে ওঠেনি। এটা বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের কূ-প্রভাব। বৃষ্টিপাত কম হওয়া প্রতি বছরই বাড়ছে পৃথিবীর তাপমাত্রা। এভাবে চলতে থাকলে বৈশ্বিক উষ্ণায়নে জীবজগতের পরিণতি আরও ভয়াবহ হয়ে উঠতে পারে।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় পরিবেশ বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক সুলতান-উল-ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ভূ-পৃষ্ঠের উষ্ণতা বাড়ছে। এটা আঞ্চলিক কোনো সমস্যা নয়। আমাদের কারণেই দিন দিন প্রকৃতি এমন খেয়ালি হয়ে উঠছে। অস্বাভাবিকভাবে বাড়ছে তাপমাত্রা।
‘বর্তমানে প্রয়োজন থাকলেও পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত হচ্ছে না। বঙ্গোপসাগর থেকে মৌসুমী বায়ু সৃষ্টি হয়ে তা হিমালয়ে গিয়ে ধাক্কা লাগার পর মেঘমালা তৈরি হয়। ওই মেঘমালা থেকে বৃষ্টি ঝরে। সাধারণত জুনের প্রথম সপ্তাহে মৌসুমী বায়ু সৃষ্টি হয়। কিন্তু উষ্ণতার কারণে এবার তা দ্রুত সক্রিয় হতে পারবে কিনা তা নিয়ে আশঙ্কা রয়েছে।’
এটি খারাপ লক্ষণ উল্লেখ করে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সুলতান-উল-ইসলাম বলেন, বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি ও জলবায়ু পরিবর্তনে বিশ্বের উপকূলবর্তী দেশগুলো আজ সবচেয়ে বেশি হুমকির সম্মুখীন। বাংলাদেশ তার একটি। চক্রাকারে ভূপৃষ্ঠের উষ্ণতা যে হারে বাড়ছে তা যদি অব্যাহত থাকে, তাহলে আগামী ১শ বছরের মধ্যে বাংলাদেশের এক বিস্তীর্ণ অঞ্চল প্লাবিত হয়ে যাবে। প্রকৃতি আরও খেয়ালি আচরণ শুরু করবে।
রাজশাহী আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুল মান্নান বাংলানিউজকে জানান, রাজশাহীর ওপর দিয়ে আবারও মৃদু থেকে মাঝারি তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। সাধারণত তাপমাত্রা ৩৬ থেকে ৩৮ ডিগ্রির মধ্যে থাকলে বলা হয় মৃদু তাপপ্রবাহ, ৩৮ থেকে ৪০ উঠলে বলা হয় মাঝারি তাপপ্রবাহ। এর ওপরে উঠলে তীব্র তাপপ্রবাহ।
মঙ্গলবার রাজশাহীতে সর্বোচ্চ তাপামাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৩৮ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর আগে গত ২৯ এপ্রিল রাজশাহীতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এটি এখন পর্যন্ত মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা বলেও উল্লেখ করেন রাজশাহী আবহাওয়া অফিসের এই কর্মকর্তা।
খবর কৃতজ্ঞতাঃ বাংলানিউজ২৪