টানা খরার কবলে পড়েছে রাজশাহীসহ পুরো উত্তরাঞ্চল। ফণীর প্রভাবে মাঝে দুদিন মাত্র এ এলাকায় স্বস্তি মিললেও এরপর থেকে শুরু হয়েছে তীব্র তাপপ্রবাহ। বৈশাখের শুরু থেকেই তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে এ অঞ্চলে। আর গত ৪ মে’র পর থেকে তাপমাত্রা ৩৮ থেকে ৪০ ডিগ্রীর মধ্যে রয়েছে। টানা খরা আর তাপপ্রবাহে এই অঞ্চলের মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন।
রমজানের মধ্যে ভ্যাপসা গরম আর লু হাওয়ায় রাস্তা-ঘাটে কমে গেছে মানুষের চলাফেরা। ঠিকমতো কাজ করতে পারছেন না প্রান্তিক মানুষেরা। হাসপাতালগুলোতে বাড়ছে ডায়রিয়া রোগী। আবহাওয়া অফিস বলছে, আরও কয়েকদিন এ ধরনের পরিস্থিতি থাকতে পারে।
রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের জরুরি বিভাগের ডা. শামসুজ্জামান বলেন, ‘গরমের কারণে দেড় মাস ধরে ডায়রিয়া রোগী গড়ে প্রত্যেক দিন ৬০ জন করে ভর্তি হচ্ছেন। এছাড়াও তীব্র রোদের কারণে মাথা ব্যাথাসহ বিভিন্ন রোগী ভর্তি হয়।’ তিনি বলেন, অতিরিক্ত রোদের কারণে হেপাটাইটিস ‘এ’ ও ‘ই’ হওয়ার আশঙ্কা থাকে। আবার অনেকে গরম থেকে একটু শান্তি পাওয়ার জন্য খোলা জায়গায় বিক্রি করা আখের রসসহ বিভিন্ন কোমল পানীয় পান করেন। এখানে অপরিষ্কার পানি ব্যবহার হয়ে থাকে। এতে ডায়রিয়া হওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে। তাই এই গরমে সুস্থ থাকতে হলে, নিরাপদ পানি বেশি বেশি করে পান করতে হবে। সেইসঙ্গে তীব্র রোদ এড়িয়ে চলতে হবে।
রাজশাহী আবহাওয়া অফিসের পর্যবেক্ষক রাজিব খান বলেন, গত তিনদিন ধরে রাজশাহীতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হচ্ছে ৩৯ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তবে শনিবার বেলা ৩ টায় রাজশাহীতে তাপমাত্রা সামান্য কমে দাড়িয়েছে ৩৮ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
রাজশাহী নগরীর পিএন স্কুলের পাশের স্ট্যান্ডে দাড়িয়ে থাকা রিকশাচালক জানান, গরম ও রোদের কারণে মানুষ বের হচ্ছে না। এতে রাস্তায় তেমন মানুষজনও নেই। তাই রোদে খালি রিকশা নিয়ে ঘুরে বেড়ানোর চেয়ে এখানে স্ট্যান্ড করে বিশ্রাম নিচ্ছি। এর ফাঁকে সাগর নামের এক রিকশাচালক জানান, কয়েকদিন ধরে গরম ও রোদের কারণে প্রত্যেক দিন ৫০০ থেকে ৫৫০ টাকা ভাড়া মারতে পারি। এতে করে রিকশার জমা খরচ সাড়ে তিনশ টাকা বাদে সংসার চালানোর জন্য তেমন রাখতে পারি না। সমস্যার মধ্যে পড়তে হয়েছে।
নগরীর রানীনগর এলাকার রায়হানুল ইসলাম বিপুল বলেন, ‘আমার তিনজনের সংসার। কাজ করে সংসার চালায়। রাজশাহীতে এখন প্রচণ্ড রোদ-গরম। নগরীর আমবাগান এলাকার রুহুল আমিন বলেন, বাড়ির ছাদের ওপরে রাখা টবের গাছের গোড়ায় একদিন পরপর পানি দিলেই চলতো। কিন্তু এখন সকাল-বিকাল পানি না দিলে, গাছের পাতা নেতিয়ে পড়ে।
এদিকে রাজশাহীতে কেন এত গরম, এমন প্রশ্নের জবাবে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূ-তত্ত্ব ও খনি বিদ্যা বিভাগের প্রফেসর ড. গোলাম সাব্বির সাত্তার বলেন, ‘উষ্ণমণ্ডলীয় এই দেশে এ সময় রাজশাহীতে সূর্য লম্বভাবে কিরণ দেয়। ফলে ভূ-ভাগ তাড়াতাডি উষ্ণ হয়ে পড়ে এবং তাপদাহ বাড়তে থাকে। এ ছাড়া এখানকার বায়ুতে জলীয়বাষ্পও বেশি। এজন্য গরম বেশি লাগে। সৌদি আরবে ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা থাকলেও তেমন গরম অনুভূত হয় না। কারণ সেখানে বায়ুতে জলীয়বাষ্প খুবই কম। তাছাড়া জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে রাজশাহীতে তাপের তীব্রটা আরও বেড়েছে।
এই পরিস্থিতি মোকাবিলার ক্ষেত্রে কয়েকটি পরামর্শ দিয়েছেন প্রফেসর ড. গোলাম সাব্বির সাত্তার। তিনি বলেন, পদ্মা নদীতে পর্যাপ্ত পানি রাখতে হবে। গাছকাটা বন্ধ করতে হবে। তৈরি করতে হবে বনায়ন। যাতে বৃষ্টিপাত বাড়ানো যায়।
খবর কৃতজ্ঞতাঃ Daily Sunshine