মধুমাস পড়েছে সদ্যই। এরই মধ্যে রাজশাহীর বাজারে উঠতে শুরু করেছে ‘অতিথি’ ফল খ্যাত লিচু। শুক্রবারই (১৭ মে) প্রথম ‘বোম্বাই’ জাতের লিচু বিক্রি হতে দেখা গেছে রাজশাহীর বাজারে।
তবে প্রথম দিনে সরবরাহ কম থাকায় বিক্রি হয়েছে অনেক বেশি দামে। গত সপ্তাহ থেকে বাজারে রয়েছে দেশি জাতের লিচু। তবে এই লিচু আকারে ছোট, স্বাদেও টক।
তাই দেশি লিচুতে মৌসুমী বেচাকেনা জমে ওঠেনি। ধারণা করা হচ্ছে বোম্বাই জাতের এই লিচু দিয়ে মধুমাস জৈষ্ঠ্যের বাজার জমে উঠবে। অন্তত গোপাল ভোগ, খিরসাপাত ও ল্যাংড়াসহ বিখ্যাত জাতের আমগুলো পুরোদমে না ওঠা পর্যন্ত রাজশাহীর ফলের বাজারে থাকবে লিচুরই একক রাজত্ব।
মহানগরীর সাহেব বাজারে লিচুর পসরা সাজিয়ে বসেছেন ছোটবনগ্রাম এলাকার সম্রাট আলী ও মিলন হোসেন। আলাদাভাবে মৌসুমী এ দুই ফল ব্যবসায়ী জানিয়েছেন, গত সপ্তাহেই বাজারে এসেছে গুটি জাতের দেশি লিচু। মহানগরীর আশপাশের বাগানগুলো থেকে লিচু এনে বিক্রি করছেন তারা।
প্রতি একশ লিচু বিক্রি হচ্ছে আড়াইশ টাকায়। দাম চড়া- এটি মানছেন তারা। তবে সরবরাহ কম থাকায় দাম এবার একটু বেশি হয়েছে বলেও দাবি করছেন মৌসুমী এ ফল ব্যবসায়ীরা।
এদিকে, মহানগরীর শালবাগান এলাকার শহিদুল ইসলাম বলেন, বাজারে দেশি লিচু আগে উঠলেও কেনাবেচা জমেনি। আজ থেকে বোম্বাই জাতের লিচু উঠেছে। কয়েকদিনের মধ্যে এই লিচুতে বাজার ভরে উঠবে। তখন লিচুর বাজার জমজমাট হবে। এছাড়া দামও কিছুটা কমবে।
শহিদুল ইসলাম বলেন, আজ বোম্বাই জাতের একশ লিচু ৩শ থেকে সাড়ে ৩শ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। আর সাহেব বাজার ও লক্ষ্মীপুর ও নওদাপাড়া বাজারে এই লিচুই ৪শ টাকা (১শ) দরে বিক্রি হচ্ছে।
তিনি বলেন, ক্রেতারা বেশ আগ্রহ নিয়েই আজ লিচু দেখছেন। কিন্তু দাম শোনার পর অনেক ক্রেতাই দিচ্ছেন পিছুটান। তবে দামে অসন্তোষ থাকলেও লিচু কিনতে বেশিরভাগই কার্পণ্য করছেন না। নতুন ফল হিসেবে পরিবার-পরিজনের জন্য বাড়ি নিয়ে যাচ্ছেন। কেউ বা আবার কুরিয়ার সার্ভিসে করে ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে থাকা সন্তান বা আত্মীয়-স্বজনদের জন্য পাঠাচ্ছেন।
শুক্রবার সকালে মহানগরীর শালবাগান বাজারে লিচু কিনছিলেন শিরোইল এলাকার মনির হোসেন। তিনি জানান, মহানগরীর লক্ষ্মীপুর এলাকার মেয়ের বাড়ি বেড়াতে যাচ্ছেন। যাওয়ার পথে নাতি-নাতনিদের জন্য নিয়ে যাচ্ছেন টসটসে রসালো ফল লিচু। তবে দাম কম হলে স্বস্তি পেতেন।রাজশাহীর বাজারে ‘বোম্বাই’ লিচু। ছবি: বাংলানিউজরাজশাহী ফল গবেষণা কেন্দ্র জানায়, রাজশাহী অঞ্চলে মূলত উন্নতমানের জাত হিসেবে পরিচিত বোম্বাই, মাদ্রাজি, কাদমি, মোজাফ্ফরপুরী, বেদানা, কালীবাড়ি, মঙ্গলবাড়ি, চায়না-৩, বারি-১, বারি-২ ও বারি-৩ জাতের লিচু উৎপাদিত হয়। এসব লিচুর মোট উৎপাদনও বেশি, আবার আকারেও বড়। রংও মনলোভা।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক শামসুল হক জানান, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এ অঞ্চলে বাণিজ্যিক লিচু বাগান গড়ে উঠেছে। লিচু চাষ করে অনেকেই স্বাবলম্বী হয়েছেন।
ফলে দিন দিন সম্প্রসারিত হচ্ছে বাণিজ্যিক লিচু চাষ। রাজশাহী কৃষি অঞ্চলের নাটোরে সবচেয়ে বেশি এক হাজার ৩৭ হেক্টর লিচু বাগানে রয়েছে। গতবছর এ জেলায় সর্বোচ্চ ৫ দশমিক ৮৮ টন হারে লিচুর উৎপাদন ছিল ৬ হাজার ৯৪ টন। ওই মৌসুমে রাজশাহীর ৪৮৯ হেক্টর বাগান থেকে ৫ দশমিক ১৩ টন হারে লিচু উৎপাদন হয়েছে ২ হাজার ৫১০ টন।
এছাড়া চাঁপাইনবাবগঞ্জের ২৫২ হেক্টরে ৪ দশমিক ৭ টন হারে এক হাজার ২৫ টন এবং নওগাঁয় ৩ দশমিক ৬৪ হেক্টরে ৩ দশমিক ৬৪ টন হারে ৮০৪ টন লিচু উৎপাদন হয়েছে।
লাভজনক হওয়ায় এ অঞ্চলে বাড়ছে বাণিজ্যিক লিচু বাগান জানান এই কৃষি কর্মকর্তা।
খবর কৃতজ্ঞতাঃ বাংলানিউজ২৪