আর কয়েকদিন পরেই মুসলমানদের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব ঈদ-উল-ফিতর। ঈদকে ঘিরে নগরীর মার্কেটগুলো সরগরম। শেষ মূহুর্তে ঈদ-কেনাকাটায় ব্যস্ত ক্রেতা-বিক্রেতারা। গতকাল শুক্রবার রাজশাহীর বিভিন্ন মার্কেটে ভিড়টা একটু বেশি ছিল। যারা এর আগে ঈদের কেনাকাটা করতে পারেন নি, তারা পরিবারের সদস্যদের নিয়ে বেরিয়েছিলেন কেনাকাটা করতে। অনেকেরই ঈদ কেনাকাটায় বরাদ্দ ছিল ছুটির এ দিনটি।
গতকাল রাজশাহীর বিভিন্ন মার্কেটে দেখা মেলে ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড়। ঈদের পোষাক, জুতা-স্যান্ডেল, প্রসাধনী, ঘড়ি, চশমাসহ বিভিন্ন দোকানে ক্রেতা সমাগম ছিল অন্যান্য দিনের চেয়ে বেশি। ছুটির দিনে শুধুমাত্র কেনাকাটার জন্যই পরিকল্পনায় রেখেছিলেন অনেকেই। বিভিন্ন মার্কেট ঘুরে ঘুরে কিনেছেন পছন্দের পোষাক, জুতা-স্যান্ডেল, প্রসাধনীসহ অন্যান্য জিনিসপত্র।
ক্রেতা আরেফিন আহমেদ বলেন, কাজের ব্যস্ততার কারনে ঈদের শপিং করা হয়নি। আগেই ভেবে রেখেছিলাম যে ছুটির দিনে শপিং করব। আজকে সারাদিন ঘুরে ঘুরে কেনাকাটার পরিকল্পনা রয়েছে। পরিবারের সবার চাহিদানুযায়ী কেনাকাটা করব।
এদিকে ছুটির দিনে ক্রেতাদের ভিড় হওয়ায় আনন্দিত বিক্রেতারা। একদিকে বেচাকেনা বেশি হওয়ায় যেমন বিক্রেতারা খুশি, তেমনি খদ্দেরের মন জোগাতে দম ফেলার সময় হয়নি তাদের। বিরামহীনভাবে ক্রেতাদের পছন্দ অনুযায়ী পোষাক প্রদর্শন, গোছানো, প্যাকিং ইত্যাদি কাজ করে চলেছেন তারা।
সকাল থেকেই ক্রেতাদের সমাগমে জমজমাট মার্কেটগুলো। বেলা বাড়ার সাথে বাড়ছে ভিড়ও। দুপুর ১২-২ টা ও রাত ৯-১১ টা পর্যন্ত সময়ে ক্রেতা সমাগম সবচেয়ে বেশি বলে জানিয়েছেন বিক্রেতারা।
নগরীর সাহেববাজার আরডিএ মার্কেট, গণকপাড়া হকার্স মার্কেট, নিউ মার্কেট, থিম ওমর প্লাজা, এসএস টাওয়ার, সাহেববাজার কাপড়পট্টি, উপশহর নিউ মার্কেট, লক্ষীপুর, বিনোদপুরের বিভিন্ন ছোট ছোট দোকান ও মার্কেটসহ সর্বত্র ক্রেতাদের ভিড় দেখা যায়। সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত এবং ইফতারির পরে নগরীর মার্কেটগুলোতে আরও বেশি ভিড় পরিলক্ষিত হচ্ছে। গভীর রাত পর্যন্ত ক্রেতারা কেনাকাটা করেছেন।
সেইসাথে জমজমাট বেচাকেনা চলেছে রেলস্টেশনসহ নগরীর বিভিন্ন ফুটপাতের দোকানগুলোতে। নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত মানুষরা আয়ের সাথে সামজ্ঞস্য রেখে ফুটপাতের দোকানগুলোতে সারছেন ঈদ কেনাকাটা। অন্যদিকে, নগরীর থিম ওমর প্লাজার মত অত্যাধুনিক শপিংমলে ভিড় করছেন উচ্চবিত্তরা। দেশি-বিদেশি বিভিন্ন ব্র্যান্ডের সমারোহ ঈদের বেচাকেনায় জমজমাট থিম ওমর প্লাজা।
পোষাকের দোকানেই সীমাবদ্ধ নেই বেচাকেনা। জুতা-স্যান্ডেল, প্রসাধনী, জুয়েলারী সবখানেই ক্রেতাদের সমাগমে তিল ধারনের জায়গা নেই। এদিকে রমজানের পনের দিন যেতেই অর্ডার নেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে দর্জি পাড়ার দর্জিরা।
বিক্রেতারা জানান, সকাল ১০টা থেকে রাত সাড়ে ১১টা পর্যন্ত প্রচুর লোকের সমাগম হচ্ছে মার্কেটগুলোতে। ক্রেতারা নিজের পছন্দ অনুযায়ী শাড়ি, থ্রি-পিস, ছিট কাপড়, শার্ট-প্যান্ট, জুতা-স্যান্ডেল, পাঞ্জাবীসহ অন্যান্য জিনিস কিনছেন।
কেনাকাটার ক্ষেত্রে ছেলেদের চেয়ে মেয়েরা এগিয়ে রয়েছে। এবার ঈদে মেয়েদের পোষাকগুলোর মধ্যে রয়েছে জিপসি, টপস, ফ্রগ, কোটি, ওয়ান পিস, লেহাঙ্গা, ফ্লোরটাচ ইত্যাদি। সর্বনিম্ন এক হাজার টাকা থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ বিশ হাজার টাকার মধ্যে পাওয়া যাচ্ছে পোষাকগুলো। এবার ঈদে ‘পাখি’ বা ‘কিরণমালা’র মত নামধারী কোন পোষাক না পাওয়া গেলেও দোকানীদের দেয়া ‘ফণী’ ও ‘বারবি’ ড্রেস বিক্রি ভালো বলে জানিয়েছেন বিক্রেতারা।
গতবছর ছেলেদের ড্রেসের মধ্যে ‘পাগলু’, ‘বডিগার্ড’ ‘ভাইজান’ প্রভৃতি ড্রেস ঈদের বাজার দখল করেছিল। তবে এবছর এরকম পোষাক না আসলেও দোকানীদের দেয়া নামে চলছে পোষাকের বিক্রি। হালের সাথে তালমিলিয়ে রাখা হয় এসকল পোষাকের নাম। এবছর বলিউডের আলোচিত ছবি ‘কেজিএফ’। সেই ছবির নামের সাথে মিল রেখে আরডিএ মার্কেটের দোকানীরা এক ধরনের জিন্সের প্যান্টের নাম দিয়েছেন ‘কেজিএফ’ প্যান্ট। আর এই প্যান্টগুলো বাজারে আসার তিন দিনের মধ্যেই শেষ হয়ে গেছে বলে জানান বিক্রেতারা।
নগরীর আরডিএ মার্কেটের জুসি কালেকশনের মনিরুল ইসলাম জানান, বাজারে স্টাইলিশ এক ধরনের জিন্স প্যান্ট এসেছিল। আমরা সেটার নাম দিয়েছিলাম ‘কেজিএফ’। মাত্র তিন দিনেই শেষ হয়ে গেছে ঐ প্যান্টগুলো। ৭০০ টাকা থেকে শুরু করে ১৫০০ টাকার মধ্যে ছিল এগুলোর দাম।
এবছর ঈদের কোনাকাটায় ছেলেদের কাছে গুরুত্ব পাচ্ছে পাঞ্জাবী। নগরীর বিভিন্ন পাঞ্জাবীর দোকানগুলোতে চলছে রমরমা বিক্রি। আরডিএ মার্কেটের নূর গার্মেন্টসে পাওয়া যাচ্ছে বিভিন্ন ধরনের পাঞ্জাবীর কালেকশন।
নূর গার্মেন্টেস’র ফয়জুর রহমান জানান, সূতির ইন্ডিয়ান, পিয়াস কটন, জলছাপ পাঞ্জাবী, ফতুয়াসহ বিভিন্ন পোষাক পাওয়া যাচ্ছে। ৪৫০ টাকা থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ৫ হাজার টাকার মধ্যেই সববয়সী ক্রেতাদের জন্য পাঞ্জাবী ও অন্যান্য পোষাক মিলবে নূর গার্মেন্টস এ।
এছাড়া বাজারে ঈদ কেনাকাটায় নতুনত্ব নেই ছেলেদের পোষাকে। ছেলেদের পোষাকের মধ্যে রয়েছে শার্ট, প্যান্ট, টি-শার্ট, গেঞ্জি প্রভৃতি। ১৫০ টাকা থেকে শুরু করে মোটামুটি ৫ হাজার টাকার মধ্যে মিলছে এ পোষাকগুলো।
জমেছে জুতা-স্যান্ডেলের বেচাকেনা। বাটা, এ্যাপেক্স, লোটো ও হামকো’র মত নামীদামী ব্র্যান্ডের চেয়ে স্যান্ডেল পট্টিতেই স্বাচ্ছন্দবোধ করছেন ক্রেতারা। বিক্রেতারা জানিয়েছেন চটি স্যান্ডেলেই বেশি আগ্রহ ক্রেতাদের। ক্রেতা দীপ্তি বলেন, শোরুমগুলোতে বেশি ডিজাইনের জুতা-স্যান্ডেল পাওয়া যায়না। তার উপরে দাম বেশি। তাই আমরা এখানে স্যান্ডেল কিনতে এসেছি। এবছর ছেলেদের পছন্দ চায়না স্যান্ডেল আর মেয়েদের পছন্দ ভাংচুর, মালাবন্ধন নামক স্যান্ডেল।
ক্রেতাদের যাতায়াতের ভিড়ের কারণে বড় বড় মার্কেট, দোকান ও ফুটপাতগুলোতে যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। দোকানদাররা জানান, কয়েকদিন ধরে বিক্রি ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিভিন্ন মার্কেট, ফুটপাথ, অস্থায়ী বিক্রয় কেন্দ্রের সেলসম্যানরা সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত ব্যস্ত সময় পার করছেন।
রাজশাহীর বিভিন্ন শাড়ীঘরে পাওয়া যাচ্ছে মেয়েদের সালোয়ার, কামিজ, সু, অলঙ্কৃত ও চুমকি বসানো শাড়ি, স্থানীয় ফ্যাসন হাউসগুলোতে তৈরি ছেলের পাঞ্জাবি ও শার্ট ক্রেতাদের মনোযোগ আকর্ষণ করছে।
এছাড়াও এবছর ঈদের কেনাকাটায় ভিন্ন মাত্রা যোগ করেছে বুটিকসের পোষাক। বাহারী নকশা, জরি, চুমকীর কাজ করা এ পোষাকগুলোর প্রতি বিশেষ আগ্রহ রয়েছে ক্রেতাদের। সর্বনিম্ন ৫০০ টাকা থেকে শুরু করে ৩০০০ টাকার মধ্যে পাওয়া যাচ্ছে এ পোষাকগুলো।
রাজশাহীর একমাত্র অত্যাধুনিক শপিং কমপ্লেক্স থিম ওমর প্লাজা। আধুনিক সুযোগ সুবিধা, বিভিন্ন দেশি-বিদেশি ব্র্যান্ডের পণ্যের সমাহার রয়েছে এ শপিং মলে। এর বিভিন্ন ফ্লোরে রয়েছে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন ব্র্যান্ডের পোষাক, জুতা-স্যান্ডেল, জুয়েলারী, ঘড়ি, চশমাসহ বিভিন্ন পণ্যের দোকান। ব্র্যান্ডের দোকানগুলো টেনে আনছে ক্রেতা। আর এতে ঈদ কেনাকাটায় জমজমাট থিম ওমর প্লাজা।
সেই সাথে ঈদ উপলক্ষে কুপন ড্রয়ের ব্যবস্থা করেছে থিম কর্তৃপক্ষ। সর্বনিম্ন ৫০০ টাকার পণ্য কিনলেই দেয়া হচ্ছে কুপণ। কুপণের র্যাফেল ড্রয়ের মাধ্যমে দেয়া হবে ৩০৭ টি পুরস্কার। যার প্রথম পুরস্কার হিসেবে রয়েছে একটি আকর্ষণীয় ‘কার’ গাড়ী। বৃহস্পতিবার এসব তথ্য জানান থিম ওমর প্লাজার প্রজেক্ট সিনিয়র ম্যানেজার ইকবাল আরিফ।
কাপড়ের পাশাপাশি প্রসাধনীর দোকানগুলোতেও রয়েছে চোখে পড়ার মত ভিড়। সাবান, ফেসওয়াস, লিপিস্টিক, আই ব্রো, মাসকারা, আইলানা, লিপলোজ সহ বিভিন্ন প্রসাধনী কিনছেন ক্রেতারা। এছাড়াও ঈদকে ঘিরে ভিড় বেড়েছে রোদচশমা ও ঘড়ির দোকানগুলোতে।
এদিকে ক্রেতারা জানান, এবার প্রত্যেকটি কাপড়ের দাম একটু বেশি ধরা হচ্ছে। দাম অনুযায়ী কাপড় বা পোশাকের মান তেমন নয় বলেও অভিযোগ করেন ক্রেতারা। তবে পোষাকের দাম বাড়েনি। দাম সহনীয় পর্যায়ে রয়েছে এবং বেচাকেনা ভাল হচ্ছে বলে জানান বিক্রেতারা।