কোরবানী ঈদের বাকি ২৩ দিন। আগামী ১২ আগষ্ট পবিত্র ঈদুল আযহা। দুয়ারে কড়া নাড়ছে। শুরু হয়েছে কোরবানীর পশু নিয়ে হিসেব নিকেশ। তৎপর গরু ব্যবসায়ী হাটের ইজারাদাররা। মাসের বেতন হাতে পেয়ে কোরবানীদাতারা প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন। বেশীরভাগ কোরবানীদাতার আগ্রহ দেশী গরুর প্রতি হলেও এবার এক্ষেত্রে রাজশাহীতে সুখবর নেই। এবারো রাজশাহী জেলায় কোরবানীর পশুর ঘাটতি রয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০১৭ সালে একেবারে শেষ মুহুর্তে বানের পানির মত ভারতীয় গরু আসায় কাঙ্খিত দাম পায়নি স্থানীয় খামারী আর বাড়িতে লালন পালনকারীরা। বেশীরভাগ ক্ষেত্রে লোকসান গুনতে হয়েছে। এরপর গো-চারন ভূমি না থাকা, খাদ্যের দাম বেশী এবং বিভিন্ন কারণে খামার কমে যাওয়ায় কাংখিত পশু উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে।
রাজশাহী প্রাণী সম্পদ দপ্তর সূত্রে জানা যায়, চলতি বছর জেলায় কোরবানীর চাহিদা রয়েছে চারলাখ সাড়ে ৪ হাজার পশুর। জেলার নয় উপজেলায় ছোট বড় মিলে প্রায় সতের হাজার সাতশটি খামার রয়েছে। গতবার জেলায় পশু জবেহ হয়েছিল তিন লাখ ৯৬ হাজার ৫১৯টি। যার মধ্যে গাভী ও বকনা দুই হাজার ৯৮১টি, ষাড় ও বলদ ৭১ হাজার ২৫৬টি, মহিষ ৭৪৫টি, ছাগল তিন লাখ ১৭ হাজার ৬৯৪টি ও ভেড়া তিন হাজার ৮৪৩টি।
এখন পর্যন্ত খামার ও গৃহস্থ ঘরে কোরবানীর জন্য সম্ভাব্য মজুত রয়েছে তিন লাখ ৬৯ হাজার ৫৭৪টি। যার মধ্যে গাভী ও বকনা ছয় হাজার ১৮টি, ষাড় ও বলদ ৭১ হাজার ৮৩১টি, মহিষ দুই হাজার ৬৭৫টি, ছাগল দুই লাখ ৭৪ হাজার ৭৫টি ও ভেড়া ১৩ হাজার ৬৭৫ টি এবং অন্যান্য এক হাজার ১৩৬টি। প্রাণি সম্পদ অফিস থেকে প্রতিবছর ২শতাংশ বৃদ্ধি ধরে সম্ভাব্য চাহিদা নিরুপন করা হয়। এতে আগামী ঈদে ৩৪ হাজার ৮৭৫টি পশুর ঘাটতি রয়েছে।
অতিরিক্ত জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. অন্তিম কুমার সরকার বলেন, ‘ঈদুল আযহা আসতে আরো বেশকিছু সময় রয়েছে। এরই মধ্যে অনেক পশু কোরবানীর উপযুক্ত হয়ে যাবে। তা ছাড়া যে চাহিদা ও তালিকা সবই সম্ভাব্য সংখ্যা। শেষ পর্যন্ত কোরবানীর পশুর ঘাটতি হবে না’।
অপরদিকে দেশীয় বিক্রেতাদের স্বার্থে ঈদুল আজহার আগ পর্যন্ত সীমান্ত পথে বৈধ ও অবৈধভাবে সব ধরনের গবাদিপশুর প্রবেশ বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। মঙ্গলবার মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে এবং মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী আশরাফ আলী খানের সভাপতিত্বে এক আন্তমন্ত্রণালয় সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এতে কোরবানির পশুর সংখ্যা নিরূপণ, হাটে স্বাস্থ্যসম্মত পশুর ক্রয়-বিক্রয় ও স্বাস্থ্যসেবা, বিক্রেতাদের নিরাপত্তা এবং পশুবাহী গাড়ি ছিনতাই রোধের বিষয়েও সিদ্ধান্ত হয়।
বুধবার সিটি বাইপাস হাটে সরজমিনে দেখা যায়, প্রতিবারের মতো এবারোও ভারতীয় গরুর আগ্রাসনে পড়েছে দেশি গরু। রাজশাহীর সীমান্ত এলাকা কড়াকড়ি থাকলেও আশেপাশের জেলার সীমান্ত দিয়ে অবাদে ভারতীয় গরু দেশে প্রবেশ করেছে। আর এতে দেশি গরু বাজার হারাচ্ছে।
গরুর বাজারে বুধবার দেশী ছোট গরু ৩৯ হাজার টাকাতেও বিক্রি হতে দেখা গেছে। বড় দেশী গরু নেই বললেই চলে। যা দু’একটি আছে ক্রেতা তার দামই বলেনি। তবে গরু ব্যবসায়ী আনিকুল ইসলাম বলেন, ‘এখনো কোবানীর হাট বলা যাবে না। বরাবরের মতই আজকের হাট। তিনি বলেন, তিনমণ (১২০ কেজি) দেশী ষাড় বিক্রি হচ্ছে ৭৫-৮০ হাজার টাকায়। আর ওই ওজনের গরু বলদ হলে ৬০-৭০ হাজার এবং ভারতীয় হলে থেকে ৫৫-৬০ হাজার দামে পাইকারদের কিনতে দেখা গেছে।
ভারতীয় গরু-মহিষ প্রসঙ্গে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাট পরিচালনা কমিটির সদস্য বলেন,‘যে পশুগুলো আমরা ভারতীয় বলি সেগুলো আজ থেকে প্রায় বছর খানেক আগে থেকে গৃহস্থ বাড়িতে পালন করা হয়। আর এখন তো রাজশাহীর ঘাট বন্ধ। তবে বিভিন্ন পথে দু’একটি পশু আসা অস্বাভাবিক নয়। এগুলো কাটাইয়ের জন্য পাইকার ও কসাইরা কেনেন’। তিনি আরো বলেন, ‘ঈদুল আযহা আসতে আরো বেশ কিছুদিন বাকি। সাধারণত ঈদের ১০-১২ দিন আগে থেকে কেনা-কাটা জমে উঠে। কোরবানীর জন্য ক্রেতারা দেশি পশুই কিনবেন’।
খবর কৃতজ্ঞতাঃ Daily Sunshine