রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (আরএমসি) হাসপাতালে প্রতিদিন বাড়ছে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা। গত ২৪ ঘন্টায় নতুন করে ১২ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী ভর্তি হয়েছে। আর আসন্ন ঈদে রাজশাহী জেলা ও এর আশপাশের অঞ্চলগুলোতে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়বে বলে ধারণা করছে খোদ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
কারণ হিসেবে তারা জানিয়েছে, রাজশাহীতে এখন পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের সকলেই ঢাকা থেকে এই জীবাণু বহন করে নিয়ে এসেছে। আসন্ন ঈদে ঢাকাবাসীর একটা বড় অংশ রাজশাহীমুখি হবে। বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় তারা সাথে করে ডেঙ্গু জীবাণু বহন করে নিয়ে আসতে পারে।
এমন আশঙ্কা থেকে আরএমসি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ পূর্ব প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে। সরকারী নির্দেশনায় গত ১৫ জুলাই থেকে হাসপাতালটিতে ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসা শুরু হয়। রবিবার (২৯ জুলাই) পর্যন্ত গত ১৫ দিনে এখানে মোট ৫৩জন রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন। যাদের মধ্যে ২০জন সুস্থ্য হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন। এখন ভর্তি আছেন ৩৩জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী।
এদিকে হাসপাতালটিতে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের ওয়ার্ড ঘুরে রোগী ও তাদের স্বজনদে অসচেতনতা লক্ষ করা গেছে। হাসপাতল থেকে মশারি সরবরাহ করা হয়েছে। চিকিৎসকদের পরামর্শের পরো তারা মশারির ভেতর থাকছে না। ফলে মশার কামড়ে এই রোগ আরো বিস্তারের সম্ভাবনা দেখা দিচ্ছে। কারণ ডেঙ্গু ছোঁয়াচে রোগ না হলেও, আক্রান্ত রোগীকে ডেঙ্গু কামড়ে যদি অপর কোন সুস্থ্ মানুষকে কামড়ায় তবে ডেঙ্গু বিস্তার ঘটবে।
রাজশাহীর হাসপাতালে ভর্তি ডেঙ্গু রোগীদের মধ্যে রয়েছেন চিকিৎসক, ড্রাইভার, শিক্ষার্থীসহ চাকরিজীবি সাধারণ মানুষ। তাদের সাথে কথা হলে সকলেই অভিযোগ করে জানান, জরে পড়ার আগে কোননা কোন কাজে তারা ঢাকায় যায়। এরপর সেখানে থাকাকালে অসুস্থ হয়ে পড়েন, নয়তো বাড়িতে ফিরে অসুস্থ হন। সুস্থ হতে ডাক্তারের স্বরণাপন্ন হয়ে রক্ত টেস্ট করিয়ে ধরা পরে ডেঙ্গু রোগের জীবাণু।
এদিকে রোগীদের সেবা নিশ্চিতেন লক্ষে রামেক হাসপাতালে খোলা হয়েছে ‘ডেঙ্গু কর্ণার’। তবে অভিযোগ রয়েছে সেখানে পর্যাপ্ত বেডের ঘাটতি রয়েছে। সেখানে মাত্র ১২ থেকে ১৫ জন রোগীর সঙ্কুলান সম্ভব। ফলে ডেঙ্গু রোগীদের একটা বড় অংশকেই এখন চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে ১৬, ১৭ ও ২৫ নম্বর ওয়ার্ডে অন্য রোগীদের সাথে রেখে। ফলে সেখানে থাকা অন্যান্য রোগীরাও ডেঙ্গু ঝুঁকিতে আছেন।
জর নিয়ে ঈদে ছুটিতে বাড়ি না যাবার পরামর্শ দিয়েছেন স্বাস্থ্য বিভাগের মহা পরিচালক অধ্যাপক ড. আবুল কালাম আজাদ । রবিবার গণমাধ্যমে দেয়া এক সাক্ষাতকারে তিনে এই পরামর্শ দেন। কারণ হিসেবে তিনে জানান, এতে করে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়তে পারে।
রামেক হাসপাতালের উপ-পরিচালক সাইফুল ফেরদৌস বলেন, রাজশাহীতে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব নেই। তবে রাজশাহী মেডিকেলে ভর্তি সকলেই নিশ্চিত করেছেন তারা ঢাকা থেকে রোগটি বহন করে নিয়ে এসেছেন। তাই আমরা সন্দেহ করছি ঈদের ছুটিতে ঢাকা থেকে যারা রাজশাহীতে আসবেন তাদের অনেকেই হয়তো রোগটি সাথে নিয়ে আসবেন। এজন্য আমরা বাড়তি প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি। হাসপাতালের ডেঙ্গু কর্ণারের পাশাপাশি ২৫ নম্বর ওয়ার্ডটি প্রস্তুর রাখা হয়েছে। পাশাপাশি প্রস্তুত আছে ১৭ ও ১৬ নম্বর ওয়ার্ড।
তিনি আরো জানান, এবিষয়ে চিকিৎসকদের নিয়ে শনিবার বিশেষ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। মেডিসিন বিভাগের সকল চিকিৎসক ও নার্সদের প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এখন রামেক হাসপাতলেই ডেঙ্গু সনাক্তের সবরকম ব্যবস্থা করা হয়েছে। মজুর আছে প্রয়োজনীয় ঔষধ। রোগীদের টেস্টের জন্য আর বাইরে যেতে হবে না। আশাকরি সেকলের সহযোগীতা ও সচেতনতায় আমরা ডেঙ্গু পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে পারবো।
তিনি আরও বলেন, এতোদিন এই হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগ শনাক্ত করার উপকরণ ‘স্ট্রিপ’ ছিল না। রোববার স্ট্রিপ কেনা হয়েছে। তবে এর খরচ বহন করতে হবে রোগীদের। এ জন্য প্রতি রোগির খবর হবে ২৫০ টাকা।
খবর কৃতজ্ঞতাঃ Daily Sunshine