উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে রাজশাহীর পদ্মা নদীর পানি আকস্মিকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে আবার উত্তাল হয়ে উঠতে শুরু করেছে পদ্মানদী। ফলে জেলার পবা উপজেলার হরিপুর ইউনিয়নের খোলাবোনা, পুরাতন কসবা ও বেলুয়ার চর এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এতে প্রায় দুই হাজার বিঘা জমি ফসল তলিয়ে গেছে।
জানা গেছে, বৃহস্পতিবার থেকে উজানের পানি এসে পদ্মার পানি বাড়তে থাকে। এরপর প্রতিদিনই বাড়ছে পানি। কয়েকদিন আগে পানি কমতে থাকায় পদ্মার পাড় এলাকায় ব্যাপক ভাঙন দেখা দেয়। একদিকে ভাঙন অন্যদিকে নতুন করে ফসল তলিয়ে যাওয়ার ব্যাপক ক্ষতির আশংকা করছে ভুক্তভোগিরা।
পদ্মা নদীর পানি বিপদসীমার কাছাকাছি না হলেও এ বছরে এটাই সর্বোচ্চ। গতকাল সন্ধ্যায় পদ্মার পানি ১৭ দশমিক ২২ মিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। রাজশাহীতে পদ্মা নদীর পানির বিপদ সীমা হচ্ছে ১৮ দশমিক ৫০ মিটার। প্রতিদিনই প্রায় ২০-২৫ সেন্টিমিটার পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। এরমধ্যে নিম্নাচল প্লাবিত হয়েছে। আবাদি জমি ও পুকুর জলাশয় পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে।
আকস্মিক নদীর পানি বৃদ্ধি হওয়ায় চিন্তিত হয়ে পড়েছে পদ্মাপারের মানুষ। সম্প্রতি কয়েক দফা বন্যার ধকল কাটিয়ে উঠতে না উঠতে আবারও বন্যা পরিস্থিতির মুখে পড়েছে তারা। অনেকে সর্বস্ব বিক্রি করে লাভের আশায় শীতের আগাম সবজি চাষ করেছেন। শীতের আগাম সবজি বাঁধাকপি, টমেটো, পিঁয়াজ ও লালশাক তলিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছে চাষিরা।
সরোজমিনে দেখা যায়, খোলাবোনার চর এলাকায় দুলাল হোসেন তার রোপিত ডুবে যাওয়া পিঁয়াজ সংগ্রহ করছেন। দুলাল হোসেন বলেন, প্রতিবছর এই চরে ব্যাপক পরিমান শীতের আগাম বাঁধাকপি, টমেটোর আবাদ হয়ে থাকে। এই সময়ে সাধারণত পদ্মার পানি বাড়ে না। কিন্তু এবারে আলাদা। তিনি বলেন, তার ৫ বিঘা জমিতে টমেটো রোপন করেছিলেন। যার বেশীরভাগ তলিয়ে গেছে। তার মত ওই এলাকার টি-আলম ৪ বিঘা, নাজমুল করিম ১০ বিঘা, সাবান আলী ১৫ বিঘা জমিতে শীতের আগাম বাঁধাকপি, টমেটো, লালশাক করেছেন। পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় বেশীরভাগ জমি তুলিয়ে গেছে। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় তাদের মত সবজি চাষি হযরত আলী, কাবিল উদ্দিন, ফয়সাল, শামীম, আসাদুল, গোলাপ আলী, ওদুদ, ইসাহাক প্রত্যেকের সবজি তুলিয়ে গেছে। এতে তারা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। আর এ ফসল নষ্ট হয়ে গেলে আমাদের জীবন দুর্বিসহ হয়ে পড়বে। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে না খেয়ে মরতে হবে বলে তারা আক্ষেপ করেন।
হরিপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বজলে রেজবি আল হাসান মুঞ্জিল বলেন, এর আগে দেখতাম উজানের পানি মৌসুমের আগে বৃদ্ধি পায়। কিন্তু এ সময়ে পদ্মার পানি বৃদ্ধি পাওয়াতে এই ইউনিয়নের সবজি আবাদে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে মানবেতর জীবন যাপন করবে ভুক্তভোগি চাষিরা। চরের এসব আবাদের ওপরই তাদের জীবন-জীবিকা। ক্ষতিপূরণে সরকারি উদ্যোগ তিনি কামনা করেন।
পদ্মা নদীতে গেজ পাঠক এনামুল হক বলেন, প্রতিদিনই প্রায় ২০-২৫ সেন্টিমিটার পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। এতে নদীর নিমাঞ্চল ডুবে যাচ্ছে। গতকাল সন্ধ্যায় এই মৌসুমের সর্বোচ্চ উচ্চতা ছিল ১৭ দশমিক ২২ মিটার। রাজশাহীতে পদ্মা নদীর পানির বিপদ সীমা হচ্ছে ১৮ দশমিক ৫০ মিটার।
খবর কৃতজ্ঞতাঃ দৈনিক সানশাইন