রাজশাহীর বাঘায় পাঁচ টাকায় স্কুলশিক্ষার্থীদের তৃপ্তিভরে দুপুরের খাবার খাইয়ে আসা সেই হোটেলে চাল দিলেন রাজশাহী কলেজিয়েট স্কুলের ২০০৩ ব্যাচের শিক্ষার্থীরা।
গত শনিবার (২ নভেম্বর) দুপুরে উপজেলার আড়ানী পৌর বাজারের তালতলায় অন্নপূর্ণা হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্টের মালিক বিপ্লব সরকারকে ১০০ কেজি চাল দিয়ে সহযোগিতা করেন তারা।
তিন বছর ধরে স্কুলশিক্ষার্থীদের পাঁচ টাকায় দুপুরের খাবার খাইয়ে আসছে বিপ্লব সরকারের অন্নপূর্ণা হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট। এ বিষয়ে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রতিবেদন দেখে রাজশাহী কলেজিয়েট স্কুলের ২০০৩ সালের প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা হোটেল মালিককে চাল দিয়ে সহযোগিতা করেন।
১৯৭১ সালে বিপ্লবের বাবা শ্যামল সরকার আড়ানী বাজারে খাবার হোটেল দেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় এ হোটেল থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের বিভিন্ন সময় খাবার সরবরাহ করতেন শ্যামল সরকার। আর তার ছেলে বিপ্লব এখন শিক্ষার্থীদের নামমাত্রমূল্যে খাইয়ে চলেছেন স্বাস্থ্যকর খাবার।
বিপ্লব এ কাজ শুরু করার সময় প্রথম দিকে বাবাকে কিছু বলেননি। তিনি জানার পর এ নিয়ে মাঝেমধ্যে বকাও দিতেন বিপ্লবকে। কিন্তু বিপ্লব এ কাজ থেকে সরে আসেননি। বিপ্লবের বাবা যখন দুপুরে দিকে বাড়িতে চলে যান, তখন বিপ্লব দোকানে বসেন এবং শিক্ষার্থীদের খাবারের ব্যবস্থা করেন। দুপুরের সময় বিপ্লবের দোকানে পাঁচ টাকায় খাবার খেয়ে যায় আড়ানী সরকারি মনোমোহিনী উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। পাঁচ টাকার বিনিময়ে তাদের পাতে ওঠে পরিমাণ মতো ভাত, ডাল, একটু ভাজি ও ভর্তা। সপ্তাহে একদিন মাছ ও মাংসও মেলে। যারা স্কুলড্রেস পরে আসে শুধু তাদেরই পাঁচ টাকার বিনিময়ে এ খাবার দেয়া হয়।
এ বিষয়ে বিপ্লব সরকার বলেন, শিক্ষার্থীরা প্রায় দিন টিফিনের সময় দুপুরে হোটেলে সিঙ্গারা খেতে আসতো। তৈলাক্ত জিনিস খেলে সমস্যা হবে ভেবে তাদের কাছ থেকে পাঁচ টাকা নিয়ে ভাত খেতে দিতাম। কিছু কিছু সময় অবাক হয়ে ছাত্ররা খেয়ে চলে যেত। এভাবে ছাত্রদের সিঙ্গারা না দিয়ে ভাত খেতে দিতাম। এখনো দিচ্ছি। প্রতিদিন ৬০-৮০ জন শিক্ষার্থী পাঁচ টাকার বিনিময়ে ভাত খায় এখানে।
বিপ্লব বলেন, আমি অর্থনৈতিক দুর্দশার কারণে নবম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেছি। সংসারের অভাব-অনটনের কারণে হোটেলে বাবাকে সহযোগিতা শুরু করি। এখন বাবার অনেক বয়স হয়েছে। হোটেল বেশিরভাগ সময় আমিই দেখাশোনা করি। ছোট ছোট ছেলেদের দুপুরে এ টাকার বিনিময়ে খাবার দিতে পেরে ভালো লাগে।
হোটেলের পাশাপাশি বিপ্লব সরকারের লেপ-তোষকের দোকান রয়েছে বলেও জানা যায়।
বিপ্লব সরকারের বাবা শ্যামল সরকার বলেন, ছেলের এ কাজ প্রথমে দেখে তাকে অনেক বকাবকি করতাম। বকাবকি করেও যখন কোনো কাজ হলো না, হোটেলের দায়িত্বে ছেলেকে দিয়ে দিলাম। তবে ভালো চলছে।
আড়ানী মনোমোহিনী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সঞ্জয় কুমার বলেন, স্কুলের শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে জানার পর সেখানে একদিন গিয়েছিলাম। সবকিছু দেখে নিশ্চিত হওয়ার পর পুরো বিষয়টি আমার কাছে অসাধারণ মনে হয়েছে। নিজস্ব চিন্তা-চেতনায় ছোট্ট একটি অবস্থান থেকে বিপ্লব সরকার যেভাবে স্কুল শিক্ষার্থীদের জন্য এগিয়ে এসেছেন, তা সত্যিই প্রশংসার দাবি রাখে। এটি খুবই মহতী উদ্যোগ।
আড়ানী পৌরসভার মেয়র মুক্তার আলী বলেন, আমি মাঝে-মধ্যে তার হোটেলে দুপুরে খেতে যাই। সেখানে স্কুলের ছেলে-মেয়েরা ভাত খাওয়ার জন্য ভিড় জমায়। কিছু দিন পর জানতে পারি পাঁচ টাকার বিনিময়ে ছাত্রদের খাবার দেওয়া হয়।
খবর কৃতজ্ঞতাঃ বাংলানিউজ২৪