রাজশাহীর বাঘা উপজেলার খোর্দ্দবাউসা গ্রামের সেই আমবাগানে বাসা বাঁধা অতিথি শামুকখোল যতদিন ইচ্ছা থাকবে। তাদের বাসাভাড়া বাবদ বছরে তিন লাখ ১৩ হাজার টাকা দেবে সরকার। এ অর্থ বরাদ্দ চেয়ে কৃষি মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছে রাজশাহীর জেলা প্রশাসন।
বরাদ্দ পেলেই বাগানের ইজারাদার বা বাগান মালিককে সেই অর্থ দেবে প্রশাসন। এ তথ্য নিশ্চিত করেন বাঘা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শফিউল্লাহ সুলতান।
তিনি বলেন, হাইকোর্টের আদেশ এবং জেলা প্রশাসনের নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা গ্রামের আম বাগানটি সরেজমিন পরিদর্শন করেছি। সেখানে মোট ৩৮টি গাছে শামুকখোল পাখি বাসা বেঁধেছে। ওই গাছগুলোতে বছরে কী পরিমাণ আম ধরে এবং তা না হলে কেমন ক্ষতি হবে, তা নিরূপণের চেষ্টা করেছি।
কৃষি কর্মকর্তা আরও বলেন, মালিক পক্ষ, ইজারাদার, স্থানীয় মানুষ, আম ব্যবসায়ীসহ সব পক্ষের হিসাব অনুযায়ী পাখির বাসা সেখানে থাকলে বছরে তিন লাখ ১৩ হাজার টাকা ক্ষতি হতে পারে। সেই অনুযায়ী আমরা জেলা প্রশাসকের কাছে প্রতিবেদন দেই। সেটি সোমবার (১১ নভেম্বর) জেলা প্রশাসক যাচাই করে কৃষি মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছেন। বরাদ্দের অনুমোদন পেলে তা বাগান মালিক ও ইজারাদারদের দেয়া হবে।
এ বিষয়ে রাজশাহীর জেলা প্রশাসক হামিদুল হক বলেন, উচ্চ আদালতের নির্দেশনা ছিল, সে অনুযায়ী স্থানীয় প্রশাসন ও কৃষি কর্মকর্তারা বাগানটিতে জরিপ করে এ হিসাব বের করেছেন। সেটি প্রতিবেদন আকারে আমরা মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি। আশা করি, দ্রুত বরাদ্দ অনুমোদন হবে, যা ওই বাগান মালিককে দিয়ে আমরা পাখিদের নিরাপদ আবাস গড়ে তুলতে সক্ষম হবো।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাঘার খোর্দ্দবাউসা গ্রামের ওই বাগানটি চার বছর ধরে শামুকখোল পাখি এসে বাসা বাঁধে। তারা বর্ষা মৌসুমের শেষ দিকে আসে এবং বাসা বেঁধে বাচ্চা ফুটিয়ে শীত শুরু হলে ও তাদের বাচ্চা উড়তে শিখলে চলে যায়। এবারও সেখানে কয়েক লাখ পাখি বাচ্চা ফুটিয়েছে। বাচ্চাগুলো এখনও উড়তে শেখেনি।
এদিকে, পাখি বাসা বাঁধায় গত দুই বছর পাখির জন্য বাগান পরিচর্যা ব্যাহত হচ্ছে। ফলে আমের ফলন কম হয়েছে বলে অভিযোগ করেন বাগান ইজারাদার আতাউর রহমান।
তিনি গত ৩০ অক্টোবর একটি গাছের কিছু বাসা ভেঙেও দেন। তিনি বাগানের সব বাসা ভেঙে গাছ খালি করতে চান। তবে স্থানীয় কিছু পাখিপ্রেমী মানুষ তাকে আরও কিছুদিন অপেক্ষা করতে বলেন। একপর্যায়ে বিষয়টি নিয়ে বৈঠকে বসেন। সেখানে ইজারাদার আতাউর রহমান পাখিরা ১৫ দিনের মধ্যে চলে না গেলে তিনি সেগুলো তাড়িয়ে দেবেন বলে ‘আল্টিমেটাম’ দেন।
এ নিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হলে তা আদালতের নজরে এনে প্রয়োজনীয় আদেশ দেয়ার আরজি করেন এক আইনজীবী।
আদালত শুনানি শেষে ‘বাগানের পাখির বাসা কোনোভাবে ভাঙা যাবে না’ বলে আদেশ দেন। একই সঙ্গে বাগান মালিকের সম্ভাব্য ক্ষতি নিরূপণ করে, তা প্রতিবেদন আকারে জমা দিতে জেলা প্রশাসক ও ইউএনওকে নির্দেশ দেন।
খবর কৃতজ্ঞতাঃ জাগোনিউজ২৪