দাম বৃদ্ধির গুজবে রাজশাহী মহানগরীর মুদি দোকানগুলোতে লবণ কিনতে ভিড় জমাচ্ছেন মানুষ। কিনছেন তিন থেকে চার প্যাকেট করে। ফলে লবণের চাহিদা কয়েকগুণ বেড়ে গেছে। মঙ্গলবার দুপুরের পর থেকে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এ অবস্থায় লবণের দামও বাড়িয়ে ফেলেছেন বিক্রেতারা।
শহরের কোথাও কোথাও ১০০ টাকা পর্যন্ত কেজিতে লবণ বিক্রি করার খবর পাওয়া গেছে। অথচ সোমবারই প্যাকেটজাত এসব লবণ বিক্রি হয়েছে ৩০ টাকায়। লবণ নিয়ে এমন হুলস্থুল পরিস্থিতিতে মাঠে নেমেছে রাজশাহী জেলা প্রশাসনের একটি ভ্রাম্যমাণ আদালত। অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আবু আসলাম অভিযান চালিয়ে দুই ব্যবাসয়ীকে আটকও করেছেন।
সন্ধ্যা সোয়া সাতটায় এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত অভিযান চলছিল। লবণের অতিরিক্ত চাহিদা দেখে মজুদ করার চেষ্টা করায় মানিক ও আজমল হোসেন নামের দুই ব্যবসায়ীকে আটক করা হয়। তবে এর আগেই লবণ কেনা নিয়ে লঙ্কাকাণ্ড শুরু হয়ে যায় নগরীতে।
বিকেলে সাহেববাজারে দেখা গেছে, এক মা তার বাচ্চা নিয়ে প্রাইভেট শিক্ষকের কাছে যাচ্ছিলেন। বাজারে লবণ কেনার হিড়িক দেখে তিনি বাচ্চাকে বললেন, বাবা একটা দাঁড়াও লবণের দাম বেড়ে যাবে দু’কেজি লবণ কিনে নিই। দোকানের ভিড় ঠেলে লবণ কিনে তারপর তিনি বাচ্চাকে শিক্ষকের কাছে নিয়ে গেলেন।
সাহেববাজারে একেকটি দোকানে দেড় ঘণ্টায় ১০০ বস্তার বেশি লবণ বিক্রি হয়েছে। লবনের বাজার স্বাভাবিক আছে বললেও ক্রেতারা শুনছেন না। তারা বাজারের একেকটি মুদি দোকানকে মৌচাকের মতো ঘিরে ধরছেন। তবে বাজারের টান দেখে দুএকজন দোকান মালিককে লবণ গুদামে মজুত করতেও দেখা গেছে।
রাজশাহীর বাজারে প্যাকেটজাত প্রতি কেজি লবণের দাম ৩০ টাকা। ক্রেতার ভিড় দেখে কোনো দোকানি কেজিতে ১০ টাকা করে বেশি নেওয়া শুরু করেছেন। বিকেল ৫টার দিকে সাহেববাজারের শাহজাহান ব্রাদার্স এর সামনে গিয়ে দেখা যায় প্রায় ২০-৩০ জন ক্রেতা লবণ কেনার জন্য দোকানের সামনে ভিড় করছেন। ক্রেতা সামলাতে হিমশিম খেয়ে যাচ্ছেন তারা।
প্যাকেটের গায়ে ৩৫ টাকা লেখা লবণ বাজারে ৩০ টাকা করে বিক্রি হয়। ক্রেতার ভিড় দেখে এই দোকানে বিকেলে ৫ টাকা বাড়িয়ে দেয়া হয়। পাঁচ মিনিটের মধ্যে তারা আবার কেজিতে ৫ টাকা বাড়িয়ে দিলেন। ৩০ টাকা কেজির লবণ তারা ৪০ টাকায় বিক্রি শুরু করেন। তারপরেও দোকানে ভিড় কমেনি।
রাজশাহী বড় মুদি দোকান মোহিনী ট্রেডার্সের সামনে শতাধিক ক্রেতাকে ভিড় করতে দেখা যায়। দোকানে লবণের মূল্যের তালিক ঝুলিয়ে দেয়া হয়েছে। প্রতি কেজি লবণ ৩০ টাকা। তারা সেই দামেই বিক্রি করছেন। তবু ক্রেতার ভিড় কমছে না।
গৃহিনী লিমা এই দোকান থেকে ৪ কেজি লবণ কিনলেন। কেন এত লবণ কিনলেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, সবাই বলছে কালকে থেকে লবণের দাম বেড়ে যাবে সেজন্য কিনে রাখলেন। নিলুফা নামের একজন চাকরিজীবী রাজশাহী শহরে একটি প্রশিক্ষণের এসেছেন। তিনি বিকেলে বাজারে বেড়াতে বের হয়েছিলেন। লবণের দাম বেড়ে যাওয়ার গুজব শুনে তিনিও ৮ কেজি লবণ কিনে নিয়েছেন।
মোহিনী ট্রেডার্স এর এক কর্মচারী জানান, তারা বিকেলে দেড় ঘণ্টায় ১০০ বস্তার বেশি লবণ বিক্রি করেছেন। দোকানের অপর একজন কর্মচারী আরও ৫০ বস্তা লবণের ফরমায়েস পাঠালেন। সেখানে দাঁড়িয়ে দেখা যায়, অনবরত গুদাম থেকে লবণের ভ্যান দোকানে আসছে।
নগরীর শিরোইল কাঁচা বাজার এলাকার একজন চা দোকানি ১০ কেজি লবণ কিনেছেন। ওই বাজারে গিয়ে দেখা যায়, লবণ কিনতে যারা এসেছেন তাদের প্রায় ৯০ শতাংশই নারী। তারা মুদি দোকানের সামনে হুমড়ি খেয়ে পড়েছেন।
এদিকে এই খবর গ্রামে ছড়িয়ে পড়লে ১৪ টাকা কেজির খোলা লবণ ৪০ টাকায় বিক্রি শুরু হয়েছে। রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার নর্দাস গ্রামের সুকুমার প্রামাণিক জানান, তিনি আগের দিন এক কেজি খোলা লবণ ১৪ টাকায় কিনেছিলেন। লবণের দাম বাড়ার খবর শুনে বিকেলে সেই লবণ ৪০ টাকায় কিনেছেন। তিনি জানান, তাদের এলাকায় প্যাকেট লবণের দাম ১০০ টাকা হাঁকছেন দোকানিরা।
অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আবু আসলাম বলেন, বাজারে লবণের কোনো সংকট নেই। এটা এক ধরণের গুজব। সরকারের বদনাম করতে একটা কুচক্রি মহল গুজব ছড়িয়ে দিচ্ছে। তিনি প্রয়োজনের অতিরিক্ত লবণ না কেনার পরামর্শ দেন। কোথাও দাম বেশি চাইলে প্রশাসনকে জানাতে বলেন।
খবর কৃতজ্ঞতাঃ দৈনিক সানশাইন