রাজশাহীতে দুইশর উপর প্রাইভেট ক্লিনিকের পাশাপাশি ১২শ শয্যার সরকারী হাসপাতালে প্রতিদিনের সৃষ্ট বিপদজনক ক্লিনিক্যাল বর্জ্য ধ্বংসে এখনো নেই কোন পৃথক আধুনিক পদ্ধতি। মেডিকেল বর্জ্য পুড়িয়ে ধ্বংসে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের মধ্যে একটি মাত্র ইনসেনোরেটর বা চুল্লি থাকলেও তা বহুদিন থেকে নষ্ট হয়ে পড়ে আছে। আর বিপদজনক এই বর্জ্য ধ্বংসে আধুনিক ও কার্যকর কোন ব্যবস্থা না থাকায় স্বাস্থ্যঝুঁকিতে নগরবাসীসহ পশুপাখি ও পরিবেশ।
সূত্র মতে, রাজশাহী নগরীতে প্রায় দুইশত প্রইভেট ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার আছে। যার অধিকাংশই নগরীর লক্ষ্মীপুর কেন্দ্রিক। ক্লিনিক পাড়া হিসেবে পরিচিত এই এলাকার ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক থেকে প্রতিদিন প্রচুর পরিমাণে ক্লিনিক্যাল বর্জ্য সৃষ্টি হচ্ছে। অথচ এই বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় প্রতিষ্ঠানগুলোর নেই কোন পৃথক ব্যবস্থা। শেষ পর্যন্ত দায় যেন রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের (রাসিক)।
রোগ-জীবাণু মিশ্রিত সেই ঝুঁকিপূর্ণ বর্জ্যগুলো কোন রকম নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছাড়াই ভ্যান দিয়ে রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগার এলাকার দুইটি উন্মুক্ত স্থানে ফেলা হচ্ছে। পড়ে থাকছে পুরো দিনমান। এই পয়েন্টে নগরবাসী তাদের বাসাবাড়ির সৃষ্ট ময়লা-আবর্জনাও ফেলার জন্য সেকেন্ডারি পয়েন্ট হিসেবে ব্যবহার করে থাকেন। ক্লিনিক্যাল বর্জ্যে মুখ ডুবিয়ে খাবার খুঁজছে গবাদিপুশসহ বিভিন্ন প্রাণী। টোকাইরা সেখানে ভাংড়ির খোঁজে হাতিয়ে বেড়াচ্ছে। পশুপাখি ও বাতাসের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ছে বর্জ্যগুলোর রোগজীবাণু। দিন শেষে সন্ধ্যার পর কোন এক সময় সেখান থেকে আবর্জনাগুলো রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা ট্রাক যোগে নওদাপদা ভাগাড়ে নিয়ে যায়। মিশে যাচ্ছে অন্যান্য বর্জ্যরে সাথে।
এদিকে রামেক হাসপাতালের ২২ নম্বর ওয়ার্ডের সামনে উন্মুক্ত স্থানে ক্লিনিক্যাল বর্জ্য পোড়ানোর জন্য একটি ইনসেনোরেটর থাকলেও তা দীর্ঘ দিন থেকে অকার্যকর বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। রাসিকের তত্ত্বাবধানে এই ইনসেনোরেটরটি পরিচালিত হয়। তবে অধিকাংশের অভিযোগ হাসপাতাল এলাকায় ইনসেনোরেটর থাকাটা রোগীদের স্বাস্থ্যের জন্য মোটেও নিরাপদ নয়। তাছাড়া এই ইনসেনোরেটর চুল্লির উচ্চতাও যথেষ্ট নয়।
রাজশাহীতে ক্লিনিক ও ডায়গনস্টিক সেন্টারের মালিকদের ১১২ সদস্যের একটি সংগঠন আছে। বাংলাদেশ ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনস্টিক ওনার্স এ্যসোসিয়েশন রাজশাহী নামে সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক মখলেসুর রহমান ক্লিনিক্যাল বর্জ্য ব্যবস্থাপনার গুরুত্ব তুলে ধরে বলেন, আমরাও চাই রাজশাহীতে ক্লিনিক্যাল বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় আধুনিক কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হোক। এজন্য আমরা রাসিককে একটি জায়গা দেয়ার জন্য বলেছি। রাসিককে আমরা নদীর ধার বা এমন একটি ফাঁকা জায়গা দেয়ার জন্য বলেছি যেখানে নিজ উদ্যোগে তিনতলা আধুনিক ইনসেনোরেটর তৈরি করবো। এখন পর্যন্ত রাসিক আমাদেরকে জায়গা না দেয়ায় তা সম্ভব হয়নি।
রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের প্রধান পরিচ্ছন্নতা কর্মকর্তা শেখ মো. মামুন জানান, রাজশাহী শহরে ক্লিনিক্যাল বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় পৃথক কোন পদ্ধতি নেই। তবে রাসিক ক্লিনিক্যাল বর্জ্যগুলো আলাদাভাবে পুড়িয়ে ফেলে। রামেক হাসপাতালের মধ্যের ইনসেনোরেটরটি সাময়িক ভাবে বন্ধ আছে। আগামী জানুয়ারীতেই এটি চালু করা হবে। রাসিকের এই কর্মকর্তা আরো জানান, ক্লিনিক ও ডায়গনস্টিক সেন্টার ওনার্স সংগঠন এখন পর্যন্ত এমন কোন জায়গার জন্য আমাদের কাছে আবেদন জানায়নি। তবে এটি ভালো উদ্যোগ। আমাদের বিশাল ভাগাড় এলাকা আছে। সংগঠনটি জায়গা চাইলে আমরা তাদেরকে জায়গা দেয়ার বিষয়ে উদ্যোগ নিতে পারি।
খবর কৃতজ্ঞতাঃ দৈনিক সানশাইন