রাজশাহীতে মৃদ্যু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে চলছে কয়েকদিন থেকে। কনকন ঠান্ডায় প্রাণিকুলের বেহাল দশা। শীত ভীতু মানুষদের জন্য শনিবার ছিল আরো কষ্টের। রাজশাহী কুয়াশার চাদরে ঢেকে গেছে। সারাদিনেও সূর্যের মুখ দেখা যায়নি। সকাল থেকেই কুয়াশায় ঢেকে ছিল চারপাশ। বেলা বাড়ার সাথে সাথে কুয়াশা একটু কমলেও সূর্যের দেখা পাওয়া যায়নি।
এদিকে সূর্যের দেখা না পাওয়ায় বেড়েছে শীতের তীব্রতা। বইছে ঠাণ্ডা বাতাসও। এর ফলে শীত অনুভূত হচ্ছে আরও বেশি। রাজশাহী আবহাওয়া অফিস বলছে, দিন ও রাতের তাপমাত্রা অপরিবর্তিত থাকতে পারে আরও দু’একদিন। কুয়াশাও পড়তে পারে একইভাবে তারপর কেটে যেতে পারে শৈত্যপ্রবাহ।
রাজশাহী আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, শনিবার রাজশাহীতে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে ১১ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর সর্বোচ্চ তাপমাত্রা উঠেছে মাত্র ১৫ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রার এই ব্যবধান কমে আসায় শীত অনুভূত হচ্ছে অনেক বেশি।
এর আগের দিন শুক্রবার রাজশাহীর সর্বোচ্চ তাপমাত্রা পাওয়া গিয়েছিলো ২৬ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর সর্বনিম্ন ছিলো ৯ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর গত বৃহস্পতিবার রাজশাহীর সর্বোচ্চ ২১ দশমিক ৫ এবং সর্বনিম্ন ৯ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। এটিই এবারের শীত মৌসুমে রাজশাহীর সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। আগের চেয়ে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা সামান্য বাড়লেও কমেনি শীতের দাপট। কন কনে শীতে বড় ভোগান্তিতে পড়েছেন পদ্মাপাড়ের মানুষ।
রাজশাহী আবহাওয়া অফিসের উচ্চ পর্যবেক্ষক আবদুস সালাম বলেন, আবহাওয়া আরও দু’একদিন অপরিবর্তিত থাকতে পারে। আর কুয়াশা কেটে গেলে সাধারণত শীত বেশি অনুভূত হয়। তাই এখনকার কুয়াশা কেটে গেলে শীতের তীব্রতা আরও বাড়তে পারে বলেও জানান তিনি।
চারঘাট: পৌষের প্রথম সপ্তাহে হঠাৎ করেই বাড়ছে শীতের তীব্রতা বাড়ায় চরম দুর্ভোগে পড়েছেন চারঘাট উপজেলায় খেটে খাওয়া দিনমজুরসহ ছিন্নমূল মানুষ। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে শনিবার পর্যন্ত দেখা মেলেনি সূর্যের। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মাঝে মধ্যে সূর্যের দেখা মেললেও কনকনে ঠাণ্ডা বাতাসে সূর্যের উত্তাপ ছড়াতে পারেনি। সন্ধ্যার পর ঘনকুয়াশা পড়তে থাকায় এতে রাতের ঘুম হারাম হয়ে যাচ্ছে শীতার্ত বস্ত্রহীন মানুষের। তবে উপজেলার ৬ টি ইউনিন ও একটি পৌরসভায় সরকারী ভাবে প্রায় ৩ হাজার ২২০টি কম্বল বিতরন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন উপজেলা ত্রান ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা এস এম শামিম আহম্মেদ।
তিনি বলেন, উপজেলার ছিন্ন্যমুল মানুষ গুলো যাতে করে িেশত কষ্ট না পায় সেজন্য প্রধানমন্ত্রীর ত্রান তহবিল থেকে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর নির্দেশনায় শীত শুরুতেই উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়ন ও পৌরসভায় ৪৬০টি করে কম্বল পৌছে দেয়া হয়েছে। প্রতিটি চেয়ারম্যান মেম্বারগন ছিন্ন্যমুল মানুষের মাঝে সেই সব কম্বল বিতরন করছেন।
উপজেলার মেরামতপুর গ্রামের রিক্সা চালক রবিউল ইসলাম বলেন, গত কয়েক দিনের প্রচন্ড ঠান্ডা বাতাস ও সন্ধ্যার কুয়াশায় রিক্সা চালানো বড়ই কষ্ট হচ্ছে। তার পরেও পেটের দায়ে বাড়ী থেকে বের হয়েছি। এভাবে আরও কয়েকদিন শীত বাড়তে থাকলে রিক্সা চালানো বন্ধ রাখতে হবে। নইলে শীতের কাজিল হয়ে মরে যাবো।
রাজশাহী আবহাওয়া অফিসের জ্যেষ্ঠ পর্যবেক্ষক আনোয়ারা বেগম জানান, ঘন কুয়াশার কারণে সূর্যের মুখ দেখা যাচ্ছে না। এজন্য আজ শীত একটু বেশিই অনুভূত হচ্ছে। তবে তাপমাত্রা কমেনি। শনিবার ভোর ৬টায় রাজশাহীতে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১১ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর আগে শুক্রবার রেকর্ড করা হয়েছিল ৯ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ফলে তাপমাত্রা বেড়েছে, কমেনি। আজ সকাল ৬টায় বাতাসের আদ্রতা ছিল ৯৯ শতাংশ।
নওগাঁ: কনকনে শীত, কুয়াশা ও পাশাপাশি হিমেল বাতাসে নওগাঁর গ্রমীন জনপদের মানুষেরা বিপর্যন্ত হয়ে পড়েছে। গত বুধবার মধ্যরাত থেকে ঘন কুয়াশার কারণে সূর্যের দেখা মিলছে না। দুপুরের দিকে নিরুত্তাপ সূর্য্যকে একটু সময়ের জন্য পাওয়া গেলেও তা অস্ত যাবার সঙ্গে সঙ্গে বেড়ে যাচ্ছে শীতের তীব্রতা। সন্ধ্যার পর থেকে কনকনে শীতের সঙ্গে বইছে হিমেল হাওয়া। যার কারনে শীতের তীব্রতা বেড়ে গেছে। ফলে মানুষ জরুরী প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হচ্ছে না। এতে করে জনজীবন একেবারে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। ফলে শিশু আর বয়স্ক ব্যাক্তিদের সমস্যাসহ ঠান্ডা জনিত রোগের প্রকোপ বাড়ছে। দূর্ভোগে পড়ছে খেটে খাওয়া সাধারন মানুষেরা। ছিন্নমুল আর অসহায় মানুষেরা পাশাপাশি কর্মজীবী মানুষেরাও পড়েছে র্দূভোগে। গরম কাপড়ের অভাবে শীতকষ্টে ভুগছে শিশু, বৃদ্ধসহ নিম্ম আয়ের মানুষেরা। অনেকে আবার খড়কুটা জ¦ালানেরা পাশাপাশি আগুন জ¦ালিয়ে শীত নিবারনের চেষ্টা করছে। এছাড়াও সন্ধ্যার পর থেকে দুপুর পর্যন্ত বাস,ট্রাক ও অন্যান্য যানবাহন হেড লাইট জ্বালিয়ে জীবনের তাগিদে চলাচল করছে। নওগাঁর বদলগাছী আবহাওয়া উপকেন্দ্র সূত্রে জানা গেছে, শনিবার নওগাঁয় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১২.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়। তবে এই তাপমাত্রা কখনো কমতে পারে আবার কখনো বাড়তেও পারে জানা যায়।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ: টানা শৈত্যপ্রবাহে চাঁপাইনবাবগঞ্জে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। বিনা প্রয়োজনে ঘর থেকে কেউ বাহিরে পা রাখছেন না।
সবচয়ে বেশি বেকায়দায় পড়েছেন খেটে খাওয়া মানুষ। দুবেলা কাজ না করলে দু’মুঠো অন্ন জোটে না এমন মানুষরা শীতের প্রকোপে তীব্র ভোগান্তিতে রয়েছেন। শীতের তীব্রতায় ঠান্ডাজনিত রোগের রোগীর ভিড় বাড়ছে হাসপাতালে। বিশেষ করে ঠান্ডাজনিত রোগে শিশু ও বৃদ্ধ রোগীর ভীড় বেড়েছে হাসপাতালে।
বুধবার রাতে থেকে হঠাৎ করেই চাঁপাইনবাবগঞ্জে জেঁকে বসেছে শীত। বৃহস্পতিবার সূর্যের দেখা মিললেও শুক্রবার ও শনিবার পুরো আকাশ মেঘাচ্ছন্ন। সেই সঙ্গে কনকনে বাতাস শীতের তীব্রতা আরো বাড়িয়েছে।
ছিন্নমূল মানুষরা সকাল সন্ধ্যা আগুন জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন। শহরে মানুষের আনাগোনা নেই বললেই চলে। তবে ভীড় বেড়েছে শহরের বিভিন্ন মার্কেটসহ ফুটপাতে মার্কেটের বিভিন্ন দোকানগুলোতে। স্বল্প দামে শীতের কাপড় মেলায় নিম্নআয়ের মানুষরা এ দোকানগুলোতে ভীড় করছেন।
খবর কৃতজ্ঞতাঃ দৈনিক সানশাইন