দখলদারদের দৌরাত্ম, মার্কেট কমিটির অব্যবস্থাপনা ও তদারকির অভাবে রাজশাহী নিউমার্কেট প্রতিনিয়ত ক্রেতা হারাচ্ছে। সার্বিক চিত্র বিবেচনায় মার্কেটের বৈধ দোকান মালিকদের চাইতে ব্যবসার পসরা ও দৌরাত্ম বেশি অবৈধ দখলদারদের। ক্রেতাদের অভিযোগ দোকানের মালিকেরা দোকানের বাইরে ক্রেতাদের যাতায়াতের পথের ওপর তাদের মালামাল রাখছেন। এতে একদিকে যেমন ক্রেতাদের দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে, তেমনি নিউমার্কেটটি হারাচ্ছে তার সৌন্দর্য। এছাড়া মার্কেটের ভেতরে ও বাইরে দখল দৌরাত্বে নিউমার্কেটটি হারিয়েছে তার যৌলুশ। মার্কেটের এই সার্বিক চিত্রে ক্রেতারা এখন রাজশাহী নিউমার্কেট বিমুখ।
নগরবাসীর দাবি নিউমার্কেট এলাকর সার্বিক এই চিত্র নগরপিতা এইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের ‘পরিচ্ছন্ন ও দখলদার মুক্ত নগর’ তৈরিতে প্রধান অন্তরায়। দ্রুত সময়ের মধ্যে মার্কেটসহ সংলগ্ন এলাকা ও রাস্তা দখলদারমুক্ত করে রাজশাহী নিউমার্কেট জুড়ে শৃঙ্খলা ও সৌন্দর্য ফিরিয়ে আনা হোক।
সূত্র মতে, স্বাধীনতাপূর্ব ১৯৬২ সালে নগরীর কাদিরগঞ্জ এলাকায় বিশাল জায়গা জুড়ে স্থাপন করা হয় রাজশাহী নিউমার্কেট। বর্তমানে মার্কেটটি রাজশাহী সিটি কর্পোশেনের (রাসিক) তত্ত্ববধানে পরিচালিত হচ্ছে। একসময় রাজশাহীসহ ও এর আশপাশের জেলার মানুষের জন্য মার্টেকটি ছিল অন্যতম পছন্দের মার্কেট। রাজশাহী ও আশপাশের অভিজাত শ্রেণীর মানুষ এই মার্কেট থেকেই তাদের পছন্দের কেনাকাটা সারতে স্বাচ্ছন্দ বোধ করতেন। তবে সময়ের পরিক্রমায় মার্কেটটি হারিয়েছে তার খ্যাতি। দখলদার ও মার্কেটের দোকান মালিকদের কার্যকলাপে মার্কেট জুড়ে এখন অব্যবস্থাপনা প্রকাশ্য। মুখ ফিরিয়ে ক্রেতারা এখন আশপাশের নতুন মার্কেটের দিকে ছুটছে।
একাধিক ক্রেতা অভিযোগ করে জানান, ব্যবসায়ী ও ক্রেতাদের সুবিধার্থে মার্কেটের ভেতরে ও বাইরের চতুরদিকে পর্যাপ্ত ফাঁকা জায়গা রাখা হয়েছে। মার্কেটের ভেতরে থাকা ব্যবসায়ীরা তাদের দোকানের বাইরে মালামাল ছরিয়ে ছিটিয়ে রাখছেন। দুই নম্বর গেট দিয়ে ঢুকতেই কনফেকশনারী ও তার পেছনের গার্মেন্টসের দোকানটি তাদের ব্যবসার পসরা দোকানের পাশাপাশি ক্রেতাদের যাতায়াতের রাস্তার ওপর বিছিয়ে রেখেছেন। কাজি ব্রাদার্স নামের একটি ফটোকপির ব্যবসায়ী তার দোকানের সামনে ক্রেতাদের চলাচলের জায়গার ওপর টেবিল বিছিয়ে রেখেছেন। মার্কেটের উত্তরের শেষ প্রান্তে ভাইভাই হোটেল ক্রেতাদের চলাচলের জাগার ওপর খাবারের পসরা সাজিয়ে বসেছেন। কোটা-বাছাসহ আগুন জালিয়ে রান্না করছেন সেখানেই। প্রতিটি দোকানের সামনেই প্রায় একই চিত্র। ফলে যাত্রীদের চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে। এছাড়া মার্কেটের ভেতরের ফাঁকা জায়গা দখল করে গড়ে উঠেছে সিগারেটের দোকান।
ভেতরের চিত্র যখন এমন, তখন মার্কেট সংলগ্ন বাইরের চিত্র আরো খারাপ। প্রধান ফটকসহ মার্কেটের পূর্ব ও উত্তরের মোট চারটি প্রবেশ পথ ঘিরে অবৈধ দখলদারদের দৌরাত্ম প্রকাশ্য। পূর্বের প্রধান প্রবেশ পথের দুই ধার ঘিরে জুতা-স্যাণ্ডেল, ফুল, সিগারেট, চাসহ বিকাশ ও ফ্লেক্সির দোকানের ছড়াছরি। মার্কেটের উত্তরে দেয়াল ঘিরে কথিত গ্যারেজসহ ব্যবসায়ীদের পুনর্বাসনের নামে অপরিকল্পিত দোকানপাট। এসব দলখদারদের দৌরাত্মে মার্কেটের উত্তর ও পূর্বের রাস্তা সংকীর্ণ হয়ে পড়েছে। যানজট এখন এই রাস্তার প্রতিদিনের স্বাভাবিক চিত্র। রাস্তাদিয়ে যাতায়াতকারীদের এই নিউমার্কেট আর পূর্বের ন্যায় আকৃষ্ট করে না; বরং দুর্ভোগের এই চিত্র যাদের পরিচিত, তারা রাজশাহী নিউমার্কেট এড়িয়েই চলতে পছন্দ করেন।
নিউমার্কেট এলাকার সার্বিক দুর্দশা প্রসঙ্গে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সমর কুমার পাল বলেন, রাজশাহী নিউমার্কেটে ব্যবসা পরিচালনার জন্য ব্যবসায়ীদের একটি নিজস্ব কমিটি আছে। তারা জানালে আমরা অবশ্যই তাদের সহযোগীতা করবো। আমরা আশা করি কমিটিটি নিজেরাই মার্কেটের ভেতরের পরিবেশ ঠিক করতে সচেষ্ট হবেন।
মার্কেটের বাইরের অবৈধ দখলদারদের প্রসঙ্গে রাসিকের এই কর্মকর্তা আরো জানান, ভ্রাম্যমাণ ব্যবসায়ীদের পুনর্বাসনের জন্য রাসিকের মেয়র মহোদয় একটি প্রজেক্ট হাতে নিয়েছেন। প্রজেক্টটি বাস্তবায়িত হলে শুধু নিউমার্কেট এলাকা না, পুরো রাজশাহী নগরীর চিত্র পাল্টে যাবে। তাছাড়া আমরা নিয়মিত ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালান করে নিউমার্কেট এলাকার আশপাশে একাধিক বার অবৈধ স্থাপনা ও দখলদারদের উচ্ছেদ করেছি। প্রয়োজনে আবারো ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হবে।
খবর কৃতজ্ঞতাঃ দৈনিক সানশাইন