রাজশাহী মহানগরীর রানীবাজার এলাকায় অগ্নিকাণ্ডে দুই মোবাইল ফোনের শো-রুমের সবকিছুই পুড়ে গেছে। আগুনের লেলিহান শিখা থেকে শো-রুমে থাকা মোবাইল ফোন, কম্পিউটার, এসি ও আসবাবপত্রসহ কিছুই রক্ষা করা যায়নি। এ ঘটনায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ প্রায় সাত থেকে আট লাখ টাকা হবে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।
রোববার (৯ ফেব্রুয়ারি) সকাল সাড়ে ৯টার দিকে ওই শো-রুম থেকে ধোঁয়া বের হতে দেখে স্থানীয়রা। পরে তারা রাজশাহী সদর ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সদর দফতরে খবর দেয়।
এদিকে আগুনের ঘটনায় অগ্নিদগ্ধ মোবাইল শো-রুমের কর্মী ফায়সাল হোসেনকে (২২) রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়েছে।
তিনি শো-রুমের শার্টার খোলার সময় অগ্নিদগ্ধ হয়েছিলেন। তার মুখমণ্ডল পুড়ে গেছে। এখন তার চিকিৎসা চলছে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, এখনই কিছু বলা যাচ্ছে না। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক।হ্যালো রাজশাহী-২ শো-রুমের কর্মী নাহিদ ও ফেরদৌস জানান, সকালে তাদের আরেক কর্মী ফায়সাল শো-রুমের শার্টার খুলে বিদ্যুতের মেইন সুইচ অন করেন। এর সঙ্গে সঙ্গে বিকচ শব্দ হয়ে আগুন ধরে যায়। আগুনে ফায়সালের মুখমণ্ডল পুড়ে যায়। এ সময় মুহূর্তের মধ্যে আগুনের লেলিহান শিখা শো-রুমেও ছড়িয়ে পড়ে। এতে ওই শো-রুমে থাকা সব মোবাইল ফোন, কম্পিউটার, এসি ও আসবাবপত্রসহ গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র পুড়ে যায়।
হ্যালো রাজশাহী-২ নামে ওই শোরুমের স্বত্বাধিকারী অঞ্জন কুমার রায় জানান, সকালে তিনি বাসায় ছিলেন। হঠাৎ ফোনে খবর পান শো-রুমে আগুন লেগেছে। পরে ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা গিয়ে প্রায় এক ঘণ্টা চেষ্টার পর আগুন নেভাতে সক্ষম হন। এখন কী পরিমাণ মোবাইল ফোন শো-রুমে ছিলো তার হিসাব বের করে তার সঙ্গে আসবাবপত্র এবং অন্যান্য জিনিসপত্রের হিসাব মিলিয়ে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করতে হবে। এতে সময় লাগবে বলেও উল্লেখ করেন অঞ্জন কুমার রায়।তবে দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছানোয় শো-রুম ঘেঁষা আবাসিক ভবনে আগুন ছড়িয়ে যেতে পারেনি বলে জানিয়েছেন রাজশাহী সদর ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সিনিয়র স্টেশন অফিসার শহীদুল ইসলাম।
তিনি জানান, সকাল সাড়ে ৯টার পর অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে তিনটি ইউনিট নিয়ে তিনি দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছান এবং আগুন নিয়ন্ত্রণের কাজ শুরু করেন। প্রায় এক ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে আগুন নেভানো হয়। তখনও আশপাশের সব ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান খোলেনি।
আগুন নিয়ন্ত্রণে আসার পর সেখান থেকে ধোঁয়ার কুণ্ডলি বের হতে থাকে। তাই আরও একটি ইউনিট ঘটনাস্থলে ডাকা হয়। পরে ফায়ার সার্ভিসের মোট চারটি ইউনিট ডাম্পিংয়ের কাজ শুরু করে। প্রাথমিকভাবে তাদের ধারণা শর্ট সার্কিট হয়ে শো-রুমে বিস্ফোরণ ও আগুনের ঘটনা ঘটেছে।
এ ঘটনায় আনুমানিক ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ সাত থেকে আট লাখ টাকা হবে বলে প্রাথমিকভাবে জানিয়েছেন রাজশাহী সদর ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সহকারী পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) আবদুর রশিদ।
তিনি জানান, সকাল পৌনে ১০টার দিকে তারা আগুন লাগার খবর পান। এরপরই ফায়ার সার্ভিসের তিনটি ইউনিট ঘটনাস্থলে পাঠানো হয়। পরে বিশ্ববিদ্যালয় ফায়ার সার্ভিস স্টেশন থেকে আরও একটি ইউনিট গিয়ে সেখানে যোগ দেয়। চারটি ইউনিট মিলে এক ঘণ্টা চেষ্টার পর আগুন নেভাতে সক্ষম হয়। বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়ে থাকতে পারে। এছাড়া অন্য কোনো উৎস খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তদন্ত সাপক্ষে পরে বিষয়টি নিশ্চিত হতে হবে।
এদিকে মোবাইল ফোনের শো-রুমে আগুনের ঘটনার পর আশপাশের আবাসিক ও বাণিজ্যিক ভবনগুলোতেও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। প্রাণের ভয়ে অনেকেই উঁচু ভবন থেকে নিচে নেমে আসে। উৎসুক জনতা সাহেব বাজার-নিউমার্কেট সড়কে ভিড় জমান। তাদের কারণে আগুন নেভাতে বেগ পেতে হয় ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের। পরে বোয়ালিয়া থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ সময় ওই সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। এক ঘণ্টা পর আগুন নেভানো হলে ওই সড়কটি যানবাহন চলাচল শুরু হয়।
খবর কৃতজ্ঞতাঃ বাংলানিউজ