পুলিশের তৎপরতায় গত দুই দিন রাজশাহী শহর ছিল ফাঁকা। অটোরিকশা-রিকশাও কম ছিল। মানুষজন কাজ ছাড়া খুব একটা বের হননি। কিন্তু অবস্থা পাল্টে গেছে আজ রোববার। শহরের মানুষের আনাগোনা বাড়ছে। যেন পুরনো শহরের রূপ ফিরে আসছে। বিভিন্ন জায়গায় দোকানপাট খোলা পাওয়া গেছে। মোড়ে মোড়ে দুই-একটি চায়ের স্টলও খোলা আছে। মানুষের এমন অসচেতন আচরণে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
আজ নগর ঘুরে দেখা গেছে, রাস্তায় অন্য দিনের তুলনায় প্রচুর অটোরিকশা। এক রিকশাতে গাদাগাদি করে যাত্রীরা যাচ্ছেন এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায়। বেশির ভাগের মুখে মাস্ক দেখা যায়নি। চায়ের স্টলও খোলা পাওয়া গেছে। বন্ধ থাকা দোকানপাটও কিছু খুলেছে। মুদি দোকান ও কাঁচাবাজারে যথেষ্ট ভিড় আছে।
নগরের কাজলা এলাকা থেকে অটোরিকশায় আসতে আসতে কথা হলো অটোরিকশা চালক আবদুর কাদিরের সঙ্গে। মুখে মাস্ক নেই। জানালেন, তিনি আজ সকাল সকাল বের হয়েছেন। তাপমাত্রা বেড়ে গেছে। তাঁর বিশ্বাস, এই তাপে করোনাভাইরাস মরে যাবে।
নগরের আলুপট্টি এলাকায় দুই সন্তানকে নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন এক দম্পতি। তাঁরা রাজশাহীর বানেশ্বরে এক আত্মীয়ের বাড়িতে যাবেন। এই অবস্থার মধ্যে অটোতে করে বানেশ্বর গেলে করোনাভাইরাসে সংক্রমণের আশঙ্কা থাকে না?—জবাবে শাহানা বেগম বলেন, ওখানে তাঁর বাপের বাড়ি। তাদের ওখানে কোনো বিদেশি নেই। আর করোনায় আক্রান্ত হলে এতদিনে হয়ে যেতেন।
নগরের মণিচত্বর এলাকার মোদি দোকানি খাইরুল ইসলাম বলেন, অন্য দিনের তুলনায় ব্যাপক মানুষ রাস্তায় নেমেছেন। এভাবে মানুষের আনাগোনা বেড়ে গেলে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়বে। পুলিশকে গত দুই দিনের মতো কঠোর হতে বললেন তিনি। একই কথা বললেন ওই মোড়ের মাস্ক বিক্রেতা শাকিল আহমেদ। তিনি বলেন, মাস্ক বিক্রি কমে গেছে। মানুষ অসচেতনভাবে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। ইতালি-আমেরিকার মানুষও এমন করেছিল, পরে তো তাদের মহামারিতে পড়তে হলো।
নগরের ২৩ নম্বর ওয়ার্ডে সুবিধাবঞ্চিত মানুষকে ত্রাণসামগ্রী দেওয়া হচ্ছিল। সেখানে লাইনে গা ঘেঁষাঘেঁষি করে দাঁড়িয়েছিলেন ওই ওয়ার্ডের বাসিন্দারা। সাহেববাজারের পাশে দোকান অর্ধেক খুলে এক বিক্রেতা দাঁড়িয়েছিলেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি বলেন, ‘আজকে পুলিশ দেখছি না। দেখি দোকান খোলা যায় কিনা।’
নগরের মনিচত্বর এলাকায় কথা হয় এক পুলিশ সদস্যের সঙ্গে। তিনি জানালেন, গত কয়েক দিন কড়াকড়ি ছিল, তাই মানুষ বের হননি। আজ এমনভাবে বের হয়েছেন, যেন শহরটা স্বাভাবিক।
২৬ মার্চ থেকে রাজশাহী নগরের বিভিন্ন পয়েন্টে পুলিশ অবস্থান নিয়েছিল। অটোরিকশা থামিয়ে প্রতি অটোতে সর্বোচ্চ দুজন করে যাত্রী বহনের নির্দেশ দিচ্ছিল। ২৭ মার্চ থেকে বিনা কারণে বের হলে কিংবা মাস্ক ছাড়া বের হলে কান ধরিয়ে ওঠবস করেছিল পুলিশ। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সমালোচনা হয়। পরে পুলিশের পক্ষ থেকেও তাদের দায়িত্ব ঠিক করে দেওয়া হয়। দায়িত্ব পালনের সময় পুলিশ সদস্যদের সাধারণ মানুষের সঙ্গে বিনয়ী, সহিষ্ণু ও পেশাদার আচরণ করার নির্দেশ দিয়েছেন পুলিশের মহাপরিদর্শক মো. জাবেদ পাটোয়ারী।
এ বিষয়ে রাজশাহী মহানগর পুলিশের মুখপাত্র গোলাম রুহুল কদ্দুস বলেন, করোনা বিষয়ে তারা আইন শিথিল করেননি। মানুষের মধ্যে আতঙ্ক কমে গেছে, তাই হয়তো বের হচ্ছেন। তাঁর দাবি, কেউ বিনা কারণে বের হচ্ছেন না। তিনি বলেন, খাবার দোকানগুলো খোলা রাখা হয়েছে। তবে পুলিশ দেখছে, সেখানে সামাজিক দূরত্ব বজায় থাকছে কিনা। কিছু চায়ের দোকান ও ভেতরের দিকে কিছু দোকানপাট খুলেছেন অনেক দোকানদার। সেগুলো তারা অভিযান চালিয়ে বন্ধ করে দিচ্ছেন।
খবর কৃতজ্ঞতাঃ প্রথম আলো