প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস জয় করে বাড়ি ফিরেছেন রাজশাহীর মোহনপুর উপজেলার ৮৪ বছরের বৃদ্ধ মনসুর রহমান। একাই লড়ে জয়ী হয়েছেন করোনা যুদ্ধে। সোমবার (১ জুন) সকালে তাকে সংবর্ধনা দেয়া হয়। এর আগে রোববার (৩১ মে) তাকে করোনামুক্ত ঘোষণা করেন জেলা সিভিল সার্জন।
প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক মনুসর রহমান মোহনপুর উপজেলার জাহানাবাদ ইউনিয়নের নওনগর গ্রামের বাসিন্দা। এক ছেলে ও চার মেয়ের জনক তিনি। একমাত্র ছেলের সঙ্গে তিনি গ্রামের বাড়িতেই বসবাস করেন। করোনা জয়ের পর বাড়িতে ফিরেছেন তিনি।
মনসুর রহমান বলেন, করোনা ধরা পড়ার পর আমাকে একা থাকতে হয়েছে। এই বয়সে একা থাকা খুবই কষ্টকর। তবুও একাই লড়ে গেছি। সব সময় পরিবার, চিকিৎসক, উপজেলা প্রশাসন এবং মোহনপুর থানা পুলিশকে পাশে পেয়েছি। শুরুর দিকে কিছুটা ভয় পেলেও পরে কখনও মনোবল হারাইনি।
পরিবার সূত্রে জানা গেছে, জ্বর ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে গত ১৯ এপ্রিল সন্ধ্যায় মনসুর রহমানকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। করোনার প্রাথমিক উপসর্গ থাকায় তাকে করোনা পর্যবেক্ষণ ওয়ার্ডে নেয়া হয়। শারীরিক অবস্থার উন্নতি হলে ২১ এপ্রিল দুপুরে তিনি হাসপাতাল থেকে ছাড়া পান। বাড়ি ফেরার পর ২৫ এপ্রিল আবারও অসুস্থ হয়ে পড়েন মনসুর রহমান। ওই দিনই তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়া হয়। ২৬ এপ্রিল রাজশাহী মেডিকেল কলেজের ল্যাবে নমুনা পরীক্ষায় তার করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। এরপর তিনি নিজ বাড়িতে আইসোলেশনে থেকেই চিকিৎসা নিচ্ছিলেন।
সর্বশেষ রোববার (৩১ মে) নমুনা পরীক্ষায় তার করোনা নেগেটিভ রিপোর্ট আসে। এরপরই তাকে করোনামুক্ত ঘোষণা করেন জেলা সিভিল সার্জন ডা. মহা. এনামুল হক।
এই বয়সে করোনা জয় আত্মবিশ্বাসী করেছে মনসুর রহমানকে। তিনি জানান, তার শরীরে বার্ধক্যজনিত নানা রোগ রয়েছে। এসব নিয়েই তিনি করোনা জয় করলেন। মনোবল থাকলে যে কেউ করোনা জয় করতে পারবেন।
মনসুর রহমানের ছেলে আল-আমিন সরকার জালাল বলেন, বাবা এই বয়সে করোনা জয় করলেন। এই খবর এলাকাবাসীর মনোবল বাড়িয়েছে। আক্রান্ত হলেই মৃত্যু নয়, এমনটি বিশ্বাস করছে লোকজন। নিজ বাড়িতে থেকেই করোনা জয় সম্ভব সেটিও তারা বিশ্বাস করছেন এখন।
তিনি বলেন, বাবার করোনা শনাক্ত হওয়ার পর আমরা বিপাকে পড়েছিলাম। প্রতিবেশীরা বাড়িতে রেখে চিকিৎসায় বাধা দিচ্ছিলেন। প্রচন্ড চাপের মধ্যে থেকেই চিকিৎসা চালিয়ে যেতে হয়েছে। কিন্তু শুরু থেকেই চিকিৎসক, উপজেলা প্রশাসন ও থানা পুলিশ আমাদের পাশে থাকায় সব কিছু সহজ হয়ে যায়।
মোহনপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা আরিফুল কবীর বলেন, মনসুর রহমানের সুস্থ হওয়ার খবর অনেকের কাছেই বিস্ময়কর লেগেছে। তিনিই সম্ভবত বাংলাদেশে সবচেয়ে বয়স্ক ব্যক্তি, যিনি এই বয়সেও করোনামুক্ত হলেন। তিনি আগে থেকেই হৃদরোগসহ বার্ধক্যজনিত নানা অসুখে ভুগছিলেন। এ অবস্থায় এই বয়সে তিনি করোনা থেকে সুস্থ হয়ে উঠেছেন।
খবর কৃতজ্ঞতাঃ জাগোনিউজ২৪