করোনাভাইরাসের বিস্তারে আক্রান্ত ও মৃত্যুর বিবেচনায় রাজশাহীর সব এলাকা এখন রেড জোনের আওতায় চলে গেছে। বিশেষ করে রাজশাহী মহানগরে লাগামহীন মাত্রায় বাড়ছে করোনা। তবে এখনও লকডাউনের মতো কোন সিদ্ধান্ত আসছে না।
শুক্রবার সকালে রাজশাহীর সিভিল সার্জন ডা. এনামুল হক বলেন, রাজশাহীতে জনসংখ্যা ৩০ লাখ। আর আক্রান্তের সংখ্যা ৯১০ জন। জোন ঘোষণার শর্ত অনযায়ী, জেলা ও মহানগরের সব এলাকা এখন রেড জোন। কিন্তু লকডাউনের শর্ত ভিন্ন। যার কারণে লকডাউন ঘোষণা করা সম্ভব হচ্ছে না।
সিভিল সার্জনের কার্যালয়ের হিসাব অনুযায়ী, শুক্রবার সকাল পর্যন্ত রাজশাহী জেলা ও মহানগরে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ৯১০ জন। এর মধ্যে ৬৫০ জনই শনাক্ত হয়েছেন রাজশাহী মহানগর এলাকায়।
এছাড়া জেলার বাঘা উপজেলায় ২০, চারঘাটে ২৮, পুঠিয়ায় ১৪, দুর্গাপুরে ১২, বাগমারায় ৩১, মোহনপুরে ৪১, তানোরে ৩৭, পবায় ৬৭ এবং গোদাগাড়ীতে ১০ জন কোভিড-১৯ রোগী শনাক্ত হয়েছেন।
রাজশাহীতে এ পর্যন্ত মারা গেছেন ১১ জন। এর মধ্যে রাজশাহী সিটিতেই প্রাণ গেছে ৫ জনের। এর বাইরে বাঘা, চারঘাট, পবা ও মোহনপুরে একজন করে মারা গেছেন। তবে বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যাওয়া দুই করোনা রোগীর তথ্য সিভিল সার্জনের কার্যালয়ের এ হিসাবে নেই। তাদের ধরলে রাজশাহীতে এখন মৃতের সংখ্যা ১১।
সিভিল সার্জনের কার্যালয় বলছে, রাজশাহীতে এ পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন ১৪০ জন। আর চিকিৎসাধীন অবস্থায় আছেন ৭৬১ জন। এর মধ্যে নগরেই চিকিৎসাধীন ৫৯০ জন। গ্রামের চেয়ে শহরে সংক্রমণের হার অনেক বেশি।
এর কারণ জানতে চাইলে সিভিল সার্জন ডা. এনামুল হক বলেন, শহরে সংক্রমণ বেশি হবার কারণ দেরিতে পরীক্ষা শুরু করা। রাজশাহীতে ল্যাব চালুর পর প্রথমে উপজেলাগুলোকে গুরুত্ব দিয়ে নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। সেই তুলনায় শহরের নমুনার পরীক্ষা হয়েছে কম। তখনই করোনা শহরে বিস্তার লাভ করেছে। শহরে সংক্রমণ বেশি হবার এটিই অন্যতম কারন বলে মনে করেন তিনি।
এদিকে চলমান পরিস্থিতিতে লকডাউনের চিন্তাভাবনা আছে কি না এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, একবার তো লকডাউন হলো নামমাত্র। সেই লকডাউন দিয়ে তো কোন লাভ নেই। লকডাউন দিলে এবার কঠোরভাবে দিতে হবে। সেটা পুরো এলাকার জন্য সম্ভব না। আমরা এভাবে এগোচ্ছি যে, একটি বাড়িতে করোনা রোগী শনাক্ত হলে সেটিসহ তার আশপাশের আরও কয়েকটি বাড়ি লকডাউন করা। অথবা কোন মহল্লায় কয়েকটি বাড়িতে করোনা রোগী পাওয়া গেলে সে মহল্লাটিই লকডাউন করা। কিন্তু পুরো শহর লকডাউন করা সম্ভব না।
সামনে কোরবানির ঈদ। পশুহাট থেকে করোনার বিস্তারের আশঙ্কা রয়েছে কি না জানতে চাইলে সিভিল সার্জন বলেন, সেটা তো আছেই। কিন্তু গরু-ছাগলের হাটের চেয়েও ভয়ঙ্কর রাজশাহী নগরীর সাহেববাজার। সেটা নিয়ন্ত্রণের আপাতত পথ নেই। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সাহেববাজারে যে হাট বসছে সেটিই তো আমাদের ঝুঁকিতে ফেলছে। সাধারণ মানুষকে বলব, সচেতন হতে হবে। এখন হাটে-বাজারে যাবেন না। তাহলে আমরা ভাল থাকতে পারব। তা না হলে একে-অপরের জন্য দোয়া করা ছাড়া কিছু করার থাকবে না।
শহরের পরিস্থিতি নিয়ে জানতে চাইলে রাজশাহী-২ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, প্রশাসনকে ইতিমধ্যে লকডাউনের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। কিন্তু প্রশাসন সেই পথে এগোচ্ছে না। তিনি বলেন সিটি মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের সঙ্গে বসব। তারপর আমরাই একটা সিদ্ধান্ত নেব।
খবর কৃতজ্ঞতাঃ দৈনিক সানশাইন