রাজশাহীর ওপর দিয়ে গত কয়েকদিন থেকে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। মঙ্গলবার (২২ ডিসেম্বর) তাপমাত্রা বাড়ায় প্রথম দফা শৈত্যপ্রবাহের কবলমুক্ত হয়েছে রাজশাহী।
তবে পৌষের তীব্র হাওয়ায় হিম হয়ে যাচ্ছে মানুষের শরীর। হাড় কাঁপানো শীতে তাই অসহনীয় দুর্ভোগে পড়েছেন সাধারণ মানুষ।
শীতের কামড় থেকে বাঁচতে শীতবস্ত্রের দোকানগুলোতে ক্রেতারা হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন। ফুটপাত থেকে শুরু করে অভিজাত মার্কেটগুলোতে গরম কাপড়ের চাহিদা এখন তুঙ্গে। বিশেষ করে সাশ্রয়ী দামের কারণে বিদেশ থেকে আমদানিকৃত ‘সেকেন্ড হ্যান্ড’ শীতবস্ত্রের কদর এখন তুঙ্গে। তবে করোনার কারণে বাইরে থেকে এই বছর শীতবস্ত্র আমদানি করা যায়নি। এখন যে বেল্টগুলো (শীতবস্ত্রের বস্তা) ভাঙা হচ্ছে গত বছরের স্টক করে রাখা ছিল। তাই মানের ক্ষেত্রে মান ও দামের কিছুটা হেরফের হচ্ছে বলেও জানিয়েছেন ক্রেতা ও ব্যবসায়ীরা।
এরপরও বড় বিপণিবিতানের চেয়ে ভিড় বেশি ফুটপাতের পুরনো শীতবস্ত্রের দোকানেই। ক্রেতাদের চাহিদার কথা মাথায় রেখে ফুটপাতের দোকানগুলোতে নতুন শীতবস্ত্রেরও পসরা সাজিয়ে বসেছেন মৌসুমি ব্যবসায়ীরা।
শীতের হাত থেকে রক্ষা পেতে নিম্নআয়ের মানুষরা ভিড় করছেন ফুটপাতের এসব দোকানে। দুইদিন থেকে তাই ফুটপাতের দোকানগুলোয় গরিব ও নিম্নবিত্ত মানুষের ভিড় চোখে পড়ার মতো। সাধ্য অনুযায়ী শীতবস্ত্র কিনছেন তারা। তবে ছিন্নমূল মানুষের অবস্থা আরও করুণ। অর্থাভাবে শীতবস্ত্র কিনতে পারছেন না। পরিবার নিয়ে তীব্র শীতে তারা নিদারুণ কষ্টে দিন-রাত পার করছেন।
তীব্র শৈত্যপ্রবাহের মধ্যে এবারও তারা তাকিয়ে আছেন, সমাজের বিত্তশালীদের দেওয়া গরম কাপড় ও সরকারি কম্বলের দিকে। কিন্তু বেশিরভাগের কাছেই এখনও পৌঁছেনি প্রতীক্ষার সরকারি কম্বল।
জানতে চাইলে- রাজশাহী জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, তাদের হাতে থাকা ৫৪ হাজার কম্বল এরই মধ্যে বিতরণ শুরু হয়েছে। শীতের তীব্রতা বাড়তে শুরু করায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে শীতার্তদের হাতে কম্বল পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। জেলার ৯ উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়ন ও পৌরসভা এলাকায় কম্বল বিতরণ করা হচ্ছে। সিটি করপোরেশন এলাকায়ও প্রায় সাড়ে ১৩ হাজার পিস কম্বল বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়া রাজশাহী জেলায় শীত মোকাবিলার জন্য নগদ ৫৪ লাখ টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেছে। রাজশাহীর নয় উপজেলায় ৬ লাখ টাকা করে এরই মধ্যে দিয়ে দেওয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা শীতার্তদের মধ্যে সরকারি এই নগদ অর্থ সহায়তা এককালীন অনুদান হিসেবে বিতরণ করবেন বলেও জানান জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা।
এদিকে কনকনে ঠাণ্ডার সঙ্গে বয়ে যাওয়া হিমশীতল বাতাসে জবুথবু হয়ে পড়েছে রাজশাহীর মানুষ। কয়েক দিন থেকে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা বিরাজ করছে এই অঞ্চলে। মঙ্গলবার তাপমাত্রা কিছুটা বেড়েছে। এদিন সকাল ৬টায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর আগের দিন সোমবার (২১ ডিসেম্বর) ছিল ১১ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তবে তাপমাত্রা বাড়লেও ঠাণ্ডা বাতাসের কারণে শীতের তীব্রতা কমছে না। শীতের প্রকোপ থেকে বাঁচতে শীতের পোশাক কেনাবেচার ধুম পড়েছে। ফুটপাতের দোকানগুলোতেই বেচাকেনা হচ্ছে বেশি।
সরেজমিনে দেখা যায়, মহানগরীর গণকপাড়া, লক্ষ্মীপুর, হাসপাতালের মোড়, কোর্ট শহীদ মিনার চত্বর, স্টেশন বাজার ও রেশম কারখানা প্রচীর ঘেঁষে বসেছে শীত বস্ত্রের দোকান। এসব দোকানে বিদেশ থেকে আমদানি করা পুরনো শীতবস্ত্রও আছে। এছাড়া কম দামে বিভিন্ন ধরনের নতুন শীতবস্ত্রও পাওয়া যাচ্ছে।
এর মধ্যে পুরনো বিদেশি শীতবস্ত্রের জন্য শহরের গণকপাড়া ও স্টেশন বাজার সংলগ্ন ফুটপাতের দোকোনগুলো ভিড় বেশি। এখানকার দোকানগুলো নিম্নবিত্তদের পছন্দের তালিকায় শীর্ষে। তাই এসব ফুটপাতের প্রতিটি দোকানই এখন শীতের পোশাকে ঠাসা। ৩০ টাকা থেকে শুরু করে ৫০০ টাকা দরের মধ্যে শীতবস্ত্র পাওয়া যাচ্ছে। পাশে মার্কেট থাকলেও কম দামের কারণে পুরোনো কাপড়ের দোকানে ক্রেতাদের আগ্রহ যেন একটু বেশি। কী নেই এসব ফুটপাতের দোকানে মেয়েদের জ্যাকেট, ফুলহাতা গেঞ্জি, ব্লেজার, লেদার জ্যাকেট, হাফ সোয়েটার সবকিছু রয়েছে দোকানগুলোতে।
মঙ্গলবার দুপুরে এখানে কম্বল কিনতে এসেছিলেন ফাইজা ইয়াসমিন। ৭০০ টাকায় কম্বল কিনেছেন। বললেন, দুইদিন থেকে শীত বেশি অনুভূত হওয়ায় কম্বল কিনতে এসেছেন। কিন্তু এবার চাই না কম্বলের দাম একটু বেশি বলেই মনে হচ্ছে। গত বছর তিনি ৬০০ টাকায় কম্বল কিনেছেন বলেও জানান। তবে কম্বল বিক্রেতা হাশেম আলী বলেন, তার এখানে ১৫০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা পর্যন্ত বিভিন্ন ধরনের কম্বল রয়েছে। গত বছরের তুলনায় ধরন ভেদে প্রতিটি কম্বলের দাম ৫০ থেকে ১০০শ টাকা বেড়েছে। ঢাকা থেকে তাদের এই কম্বল আনতে হয়। এখানে তাদের কিছুই করার নেই বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
শিশুদের শীতের পোশাকের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হচ্ছে জ্যাকেট ও সোয়েটার।
বিক্রেতা জামাল উদ্দিন বলেন, বাচ্চাদের বয়স ভেদে জ্যাকেট ও সোয়েটারের দামে তারতম্য রয়েছে। তার এখানে জিরোসাইজ থেকে শুরু করে ১৫ বছর বয়সী ছেলে-মেয়েদের সোয়েটার ও জ্যাকেট আছে। নারীদের গায়ের চাদর বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত।
নানান ডিজাইনের জ্যাকেট বিক্রি হচ্ছে-আড়াইশ’ থেকে সাড়ে ৪০০ টাকায়। আর সোয়েটার বিক্রি হচ্ছে দেড়শ’ থেকে ৪০০ টাকা পর্যন্ত। শীত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বেড়ে গেছে শীতের টুপি বিক্রি। ছয় মাসের শিশু থেকে বড়-সব ধরনের টুপি রয়েছে তার কাছে।
শিশুদের উলের টুপির দাম ৫০ টাকা। আর বড়দের টুপি ১০০ টাকা। আর মাংকি টুপি ১৭০ টাকা। শীতের সময় উলের হাত এবং পায়ের মোজা বিক্রি বেড়ে যায়। গত কয়েক দিন থেকে শীতের প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় বিক্রি বেড়েছে। এজন্য বছর ঘুরে তাদের মুখেও হাসি ফুটেছে বলেও জানান এই ব্যবসায়ী।
খবর কৃতজ্ঞতাঃ বাংলানিউজ