রাজশাহী নগরীর পদ্মা গার্ডেনে স্যুটেড-বুটেড হয়ে স্বাস্থ্য বিধি মেনে এক তরুণকে ‘চুই ঝাল মুড়ি’ বিক্রি করতে দেখে বিনোদন কেন্দ্রটিতে বেড়াতে আসা সকলেই তার দিকে আড় চোখে তাকায়। দর্শনার্থীদের সাথে চোখাচোখি হলে সেই তরুণ একটা মিষ্টি হাসি দিয়ে সালাম দেয়। তার ব্যবহার ও পোশাকে মুগ্ধ দর্শনার্থী মুড়ি মাখা খেতে এগিয়ে এসে তার সাথে পরিচয় হয়। আর তার পরিচয় শোনার পর আরো বেশি অবাক হতে হয়! এই তরুণের পরিচয় সে একজন শিক্ষার্থী। স্কলারশিপ নিয়ে চায়নায় গিয়েছিলেন। তবে করোনা মহামারির কারণে বিদেশি শিক্ষার্থী হওয়ায় তাকে ফিরে আসতে হয়। আর দশটা তরুণের মতো এই তরুণ অলস ভাবে সময় নষ্ট করার পক্ষপাতি নয়। তার দাবি, শিক্ষা জীবনের পাশাপাশি একজন উদ্যোক্তা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করা সম্ভব।
আবিদ রহমান; রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) কম্পিউটার সাইন্স বিভাগে লেখাপড়া করছিলেন। দ্বিতীয় বর্ষে ওঠার পর স্কলারশিপ পান চায়নার শিডিয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ে। প্রায় এক বছর সেখানে লেখা-পড়া করেন। তবে করোনা মহামারির কারণে অন্য সকল বিদেশি শিক্ষার্থীদের মতো তাকেও ফিরে আসতে হয়। চায়নায় থাকতেই আবিদ দুই দেশের মানুষের মানসিকতা ও সংস্কৃতির মধ্যে তফাত অনুভব করেন। দেশে ফিরে সে অনুভব করে অলস বসে থাকা তার জন্য হবে আত্মঘাতি সিদ্ধান্ত। নিজেকে উদ্যোক্তা হিসেবে দাঁড় করাতে পথ খুঁজতে থাকে আবিদ। তবে ব্যবসার জন্য তার হাতে অর্থও তেমন ছিলো না।
এর মাঝে গত বছররের শুরুতে রাজশাহীর একটি বই মেলায় মুড়ি বিক্রির অভিজ্ঞতার কথা স্মরণ হয় আবিদের। বই মেলায় স্টলের জন্য অগ্রিম অর্থ প্রদান করা হলেও ঢাকা থেকে বই পাঠায় না প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান। স্টল চালু রাখতে সামান্য কিছু বই তোলেন, সেই সাথে স্টলের খরচ তুলতে অগত্যা ‘চুই ঝাল মুড়ি’ বিক্রিও শুরু করেন আবিদ। বেচাবিক্রি ভালোই হয় সেসময়।
আর সেই অভিজ্ঞতাকেই এবার কাজে লাগায় আবিদ। ‘চুই ঝাল’ খুলনার একটি ঐতিহ্যবাহী সবজি জাতীয় খাবার। সাজনা আকৃতির ও কিছুটা গরম মসলার স্বাদের এই চুই ঝাল সে খুলনা থেকে নিয়ে আনায়। এরপর ইউটিউব দেখে তা কয়েকটি পদ্ধতিতে রান্না করে। তারপর সেই রান্না করা চুই ঝাল এবং এর মসলা দিয়ে মুড়ি মাখালে তার স্বাদ হয় জিভে জল আনার মতো। প্রতিদিন বিকাল ৪টা থেকে রাত্রি ৯টা পর্যন্ত তার এই ‘চুই ঝাল মুড়ি’ মাখা খেতে ভিড় জমছে পদ্মা পাড়ের বিনোদন কেন্দ্র পদ্মা গার্ডেনে।
আবিদ নিজের ব্যক্তিগত পরিচয় তুলে ধরে জানান, তাদের পৈত্রিক বাড়ি যশোর অভয় নগরে; তবে খুলনার সোনাডাঙা এলাকায় পরিবার নিয়ে তার বাবা এখন বসবাস করছেন। কর্মজীবনের শুরুতে বাবা শিক্ষকতা করলেও পরবর্তিতে নানা ব্যবসা করেছেন। বয়স হওয়ায় এখন তিনি অবসর সময় পার করছেন। আবিদরা ৪ ভাই-বোন হলেও বোন মারা গেছেন। বড় ভাই জার্মান থেকে এমএস করে এখন হংকং সিটি ইউনিভার্সিটিতে স্কলারশিপ নিয়ে পিএইচডি করছেন। মেজো ভাই খুলনার বিএল কলেজ থেকে মাস্টার্স করে এখন মোবাইল ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠান নগদে কাজ করেন।
আবিদ জানান, করোনা মাহামারির কারণে একদিকে যেমন শিক্ষা ব্যবস্থা স্থবির হয়ে রয়েছে, তেমনি উদ্যোক্তারাও ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এমন অবস্থায় সে ‘চুই ঝাল মুড়ি’ মাখা বিক্রির মধ্য দিয়ে নিজের উদ্যোক্তা জীবনের শুরু করলেন। তবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে তার শিক্ষা জীবন আবারো শুরু হবে। সেই সাথে একজন সফল উদ্যোক্তা হবার স্বপ্নও জারি থাকবে তার।
খবর কৃতজ্ঞতাঃ দৈনিক সানশাইন