রাজশাহী তানোর উপজেলার লালপুরে আলুক্ষেতে আছড়ে পড়া প্রশিক্ষণ প্লেন এখনও উদ্ধার হয়নি। তবে দুর্ঘটনায় গঠিত দুই সদস্যের তদন্ত কমিটি বুধবার (১৭ মার্চ) দুপুরের পর ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
ঘটনাস্থলে জমছে মানুষের ভিড়। বসেছে অস্থায়ী খাবারের দোকান।
বুধবার বেলা সাড়ে ১১টায় প্লেনযোগে তদন্ত কমিটির সদস্যরা রাজধানী ঢাকা থেকে রাজশাহীর শাহ মখদুম (রহ.) বিমানবন্দরে পৌঁছান।
প্রশিক্ষণ প্লেন দুর্ঘটনায় গঠিত ওই তদন্ত কমিটির দুই সদস্য হলেন- অবসরপ্রাপ্ত গ্রুপ ক্যাপ্টেন হারুন-অর-রশীদ ও অবসরপ্রাপ্ত উইং কমান্ডার এম এম আসাদুজ্জামান।
ঘটনাস্থলে যাওয়ার আগে তারা রাজশাহীর শাহ মখদুম (রহ.) বিমানবন্দরে দুর্ঘটনা কবলিত প্রশিক্ষণ প্লেনের প্রশিক্ষক ও প্রশিক্ষাণার্থীর সঙ্গে আলাদাভাবে কথা বলেন। দুপুরের পর তারা তানোরের সেই দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে কমিটির সদস্যরা জানান, কেন এই দুর্ঘটনা ঘটলো, সে সময় কী ঘটেছিল এবং কোনো ধরনের অসর্তকতা ছিল কিনা বর্তমানে সেগুলো তারা খতিয়ে দেখছেন। তদন্ত শুরু হয়েছে। কথাবার্তাও বলা হচ্ছে। এক মাসের মধ্যে তারা তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেবেন।
এদিকে, প্রশিক্ষণ প্লেনটি আলুক্ষেতের মধ্যে পড়ে থাকায় উৎসুক জনতার ভিড় সামলাতে সেখানে পুলিশের একটি অস্থায়ী টেন্ট বসানো হয়েছে। সকাল-বিকেল-সন্ধ্যা নেই, সব সময়ই আশপাশের গ্রামের মানুষ সেই প্রশিক্ষণ প্লেনটিকে একনজর দেখার জন্য ঘটনাস্থলে ভিড় জমাচ্ছেন।
এই সুযোগে সেখানে ভ্রাম্যমাণ, ঝালমুড়ি, আইসক্রিম ও জিলাপির দোকানের পসরা বসেছে। সবাই প্লেন দেখতে গিয়ে সবাই এসব মুখরোচক খাবার কিনে খাচ্ছেন।
এর আগে রাজশাহীর তানোরে যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে একটি প্রশিক্ষণ প্লেন আলুক্ষেতে আছড়ে পড়ে। মঙ্গলবার (১৬ মার্চ) দুপুর ২টার দিকে তানোর উপজেলার লালপুর ও আড়াদীঘি গ্রামের মাঝামাঝি স্থানে আলুর ক্ষেতে প্লেনটি আছড়ে পড়ে। তবে এ ঘটনায় কেউ হতাহত হননি। ওই প্রশিক্ষণ প্লেনে ককপিটে একজন পাইলট এবং একজন প্রশিক্ষণার্থী ছিলেন। তারা দুজনেই সুস্থ আছেন।
সেসনা-১৫২ মডেলের এই প্লেনটি বাংলাদেশ ফ্লাইং ক্লাবের। দুর্ঘটনার কবলে পড়ে প্লেনটি সম্পূর্ণ উল্টো হয়ে আলুক্ষেতে পড়ে। পরে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা ঘটনাস্থলে গিয়ে সাধারণ মানুষকে সরিয়ে জায়গাটি নিয়ন্ত্রণে নেয়।
রাজশাহীর হযরত শাহ মখদুম (রহ.) বিমানবন্দর ব্যবহার করে বাংলাদেশ ফ্লাইং ক্লাব প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চালায়। মঙ্গলবার দুপুরে শাহ মখদুম বিমানবন্দর থেকে প্রশিক্ষণের উদ্দেশে প্লেনটি আকাশে ওড়ে। তানোরে গিয়ে সেটি আলুক্ষেতে আছড়ে পড়ে। ওই প্লেনে বাংলাদেশ ফ্লাইং ক্লাবের রাজশাহীর প্রশিক্ষক ক্যাপ্টেন মাহফুজুর রহমান ও প্রশিক্ষণার্থী ক্যাডেট নাহিদ এরশাদ মোবিন ছিলেন। দুর্ঘটনায় পড়লেও তারা দু’জনই সুস্থ আছেন। তবে ঠিক কী কারণে এবং কেন এই দুর্ঘটনা ঘটেছে সেসব বিষয়ে এখনও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
তবে ক্যাডেট নাহিদ এরশাদ গণমাধ্যমকর্মীদের বলেন, প্লেনের ইঞ্জিনের ত্রুটির কারণে এ দুর্ঘটনা। হঠাৎ করে ইঞ্জিনের তেলের তাপমাত্রা বাড়ছিল। আর ওই মুহূর্তে তাদের বিশেষ কিছু করার কিছু ছিল না। তারা ইঞ্জিনের নিয়ন্ত্রণ পাচ্ছিলেন না। এরপরও অবতরণের চেষ্টা করে নিরাপদে নামতে পেরেছেন। তবে এতে এয়ারক্রাফটের কিছু অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হলেও ইঞ্জিনে আগুন ধরেনি।
এরও আগে গত ৯ জানুয়ারি রাজশাহীর শাহ মখদুম (রহ.) বিমানবন্দরেই ল্যান্ড করার সময় বাংলাদেশ ফ্লাইং ক্লাবের একটি প্রশিক্ষণ প্লেন দুর্ঘটনায় পড়ে। রানওয়েতে প্লেনটির একটি চাকা ভেঙে পড়ে। তবে কেউ হতাহত হননি। এছাড়া ২০১৫ সালেও এই সংস্থার একটি প্লেন শাহ মখদুমে আছড়ে পড়ে। এতে এক নারী প্রশিক্ষণার্থী নিহত হন।
খবর কৃতজ্ঞতাঃ বাংলানিউজ