নিবিড় পরিচর্যা ও সেবা-শুশ্রূষায় সেরে উঠেছে বিরল প্রজাতির সাপ ‘কমলাবতি’। এর প্রকৃত নাম রেড কোরাল কুকরি।
এটি বর্তমানে বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে বিরল প্রজাতির একটি সাপ। ধারণা করা হচ্ছিল এই প্রজাতির সাপ বিলুপ্ত হয়ে গেছে। তবে এমনই একটি সাপ উদ্ধার করা হয় দেশের সর্ব উত্তরের জেলা পঞ্চগড় থেকে।
এর নাম রেড কোরাল কুকরি হলেও স্থানীয়ভাবে তার নাম দেওয়া হয়েছে ‘কমলবতি’। পেটে গুরুতর জখম নিয়ে পঞ্চগড়ে পাওয়া দেশের একমাত্র রেড কোরাল কুকরি সাপটি এখন পুরোপুরি সুস্থ। গত ফেব্রুয়ারিতে মাটি কাটার সময় খনন যন্ত্রে গুরুতর আহত হয়েছিল সাপটি।
রাজশাহীর সাপ গবেষক বোরহান বিশ্বাস রোমন তার স্থানীয় এক সহকারীর মাধ্যমে সাপটি উদ্ধার করেন
এই প্রজাতির সাপ এটিই দেশে প্রথম দেখা পাওয়ার ঘটনা। সাপটির সারা শরীর কমলা রঙের। এর বাংলা কোনো নাম ছিল না। বোরহান বিশ্বাস নাম দিয়েছেন ‘কমলাবতি’।
একটানা তিনমাসের চিকিৎসায় তিনি সাপটি সুস্থ করে তুলেছেন। উদ্ধারের সময় সাপটির নাড়িভুড়ি বের হয়ে গিয়েছিল। কয়েকবার খোলস বদলানোর ফলে এখন ক্ষতস্থানের দাগ মুছে গেছে কমলাবতির। রোববার (৯ মে) আন্তর্জাতিক জার্নাল- এশিয়া প্যাসিফিকে এই সাপটিকে নিয়ে নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। এতে ভীষণ খুশি বোরহান বিশ্বাস রোমন।
বোরহান বিশ্বাস বলেন, এটা একটি বড় প্রাপ্তি। সবচেয়ে সুখের বিষয় সাপটাকে তারা চিকিৎসা ও সেবা-শুশ্রূষায় বাঁচিয়ে তুলতে পেরেছেন। কারণ ওর বাঁচার সম্ভাবনা খুব কম ছিল। রাজশাহী আনার পর থেকে তার নিবিড় পরিচর্যা-পর্যবেক্ষণে ধীরে ধীরে সাপটিকে সুস্থ করে তোলা গেছে।
এদিকে, বিরল প্রজাতির এই সাপটি ভারতের উত্তর প্রদেশ রাজ্যে কদাচিৎ দেখা মিললেও দেশে এবারই প্রথম এমন সাপের দেখা পেয়েছেন গবেষকরা। তারা বলছেন- যেহেতু সাপটি বিরল প্রজাতির তাই এটি নিয়ে গবেষণা খুব একটা বেশি হয়নি। সল্প মাত্রার বিষাক্ত বলা হলেও এ নিয়ে বিষদ গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে বলেও জানান বিশেষজ্ঞরা।
পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার ঝালইশালসিরি ইউনিয়নের কালিয়াগঞ্জ বাজারের পাশে গত ৮ ফেব্রুয়ারি যন্ত্র দিয়ে নির্মাণাধীন একটি বাড়ির মাটি খোঁড়ার সময় নিচ থেকে বেরিয়ে আসে বেশ কয়েকটি সাপ। তখনও কারও ধারণা ছিল না এখানেই মিলবে বিশ্বের বিরল প্রজাতির গবেষণাময় প্রাণি রেড কোরাল কুকরি সাপ। মাটির নিচ থেকে উদ্ধারের পর দেখা যায় সাপটি যন্ত্রের আঘাতে মারাত্মক আহত হয়। এ অবস্থায় সেটিকে চিকিৎসা ও নিবিড় পর্যবেক্ষণের জন্য রাজশাহী পাঠানো হয়েছিল।
সাপটি এরপর রাজশাহীর পবা উপজেলার সাপ উদ্ধার ও সংরক্ষণ কেন্দ্রে চিকিৎসা ও সেবা-শুশ্রূষা চলছিল।
চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ভেনম রিসার্চ সেন্টারের প্রধান প্রশিক্ষক রাজশাহীর বোরহান বিশ্বাস রোমন জানান, এ যাবৎকালে দেশের শুধু পঞ্চগড় জেলাতেই গবেষকরা মাত্র দু’টি এ প্রজাতির সাপের দেখা পেয়েছেন। ফলে সাপের তালিকায় নতুন একটি নাম যুক্ত হবে এতে। গবেষণাতেও আসবে নতুন মোড়। বাংলায় এর কোনো নাম নেই। তবে গবেষক হিসেবে তিনি এর নাম দিয়েছেন ‘কমলাবতি’। স্থানীয়রা সাপটিকে এই নামেই এখন ডাকছেন। ১৯৩৬ সালে প্রথম ভারতের উতরখণ্ডে দেখা যায়। এরপর থেকে এখন পর্যন্ত উদ্ধার হওয়া এই সাপটি হলো ২২তম। এর আগে আর কোথাও এমন সাপ দেখা যায়নি।
খবর কৃতজ্ঞতাঃ বাংলানিউজ