রাজশাহী বাংলাদেশের একটি প্রাচীন শহর। প্রাচীন বাংলার পুন্ড্র সাম্রাজ্যের একটি অংশ। আধুনিক শিক্ষানগরী বলা হয় এই শহরকে। শুধু শিক্ষানগরীই নয়, রাজশাহীকে ডাকা হয় সবুজনগরী, শান্তির নগরী। সেইসাথে ফলের মহা সম্ভার আর রেশম শিল্পের উল্লেখযোগ্য উন্নয়নের ফলে এ জেলাটিকে অপার সম্ভাবনার শহর বললেও ভুল হবে না।
মধ্যযুগে বর্তমান রাজশাহী পরিচিত ছিল রামপুর বোয়ালিয়া নামে। এর সূত্র ধরে এখনও রাজশাহী শহরের একটি থানার নাম বোয়ালিয়া। পরিচ্ছন্নতা, নান্দনিকতা এবং অবাধ নাগরিক সুবিধাই এ শহরের প্রাণ। পরিকল্পিতভাবে বিকশিত হয়েছে এ নগর। পাঠক, সংক্ষেপে জেনে নিই রাজশাহী শহর সম্পর্কে-
১। দর্শনীয় স্থানসমূহ (টি বাঁধ, আই বাঁধ, বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘর, চিড়িয়াখানা, লালন শাহ পার্ক):
টি বাঁধ:
রাজশাহী শহরজুড়ে পদ্মা নদী ঘিরে গড়ে উঠেছে বেশ কয়েকটি বাঁধ। তেমনই একটি বাঁধ হচ্ছে টি-বাঁধ। মূলত ইংরেজি অক্ষর T-এর আকৃতি অনুসারে তৈরি হয়েছে এটি। বিভাগীয় শহর রাজশাহীর অন্যতম বিনোদন কেন্দ্রের স্থান দখল করেছে জায়গাটি। সকালে সূর্যোদয়ের সময় পাখির কলকাকলি ও দখিনা হাওয়া যে কারও মনকে চাঙা করে তুলবে। গোধূলী লগ্নে রক্তিম সূর্য নদীর জলকে দেয় এক নতুন রূপ। স্থানীয় ও দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসা ভ্রমণপিপাসুদের কাছে এটি বহুল পরিচিত এবং বেশ জনপ্রিয়ও বটে। বাঁধটি গড়ে ওঠার পর থেকেই এর প্রকৃতি ও সৌন্দর্য সবাইকে মুগ্ধ করে চলেছে।
আই বাঁধ:
ইতোমধ্যে রাজশাহীর নয়নাভিরাম স্থান হিসেবে বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে আই বাঁধ বা ইংরেজি I-আকৃতির বাঁধ। মনোরম এই স্থানটি দেখতে শুধু রাজশাহীবাসী নয় ছুটে আসেন দূর-দূরান্তের মানুষ। বাঁধটির পাশেই রয়েছে হাইটেক পার্ক, বিভিন্ন রেস্টুরেন্ট ও ছোট ছোট গাছ। ছুটির দিনে দর্শনার্থীদের মিলনমেলায় পরিণত হয় রাজশাহীর আই বাঁধ। দূর-দূরান্ত থেকে আসা দর্শনার্থীরা এখানে এসে প্রশান্তির নিঃশ্বাস ফেলেন। পদ্মার পাড়ে দীর্ঘ বাঁধ, নিচে প্রবাহিত বিস্তৃত নদীর ছলছল জল, পরিকল্পিত রাস্তা আর সবুজ গাছপালা দর্শনার্থীদের নিয়ে যায় ভিন্ন এক জগতে।
বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘর:
দুর্লভ ঐতিহ্যের ধারক রাজশাহীর ‘বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘর’। এটি দেশের প্রথম জাদুঘর এবং দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম প্রত্নতাত্ত্বিক সংগ্রহশালা। দুষ্প্রাপ্য সব প্রত্নসম্পদ নিয়ে আজও স্বমহিমায় দাঁড়িয়ে আছে এ জাদুঘর। যুগের পর যুগ ধরে প্রাচীন ঐতিহ্যের সাক্ষ্য বহন করে আসছে। রাজশাহী মহানগরের প্রাণকেন্দ্র হেতমখাঁ সদর হাসপাতালের সামনে অবস্থিত প্রাচীন সংগ্রহশালা বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘর। প্রত্নতাত্ত্বিক সংগ্রহশালা এ জাদুঘরে উত্তরের বরেন্দ্র অঞ্চলের পাল, সেন, মৌর্য ও গুপ্ত আমলসহ হাজার হাজার বছরের প্রাচীন সভ্যতার নিদর্শন সংরক্ষিত করে রাখা আছে। প্রতিদিনই বিপুল সংখ্যক দর্শনার্থী বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘরে ইতিহাস-ঐতিহ্যের নিদর্শন দেখতে আসেন।
শহীদ এএইচএম কামারুজ্জামান কেন্দ্রীয় উদ্যান ও চিড়িয়াখানা:
রাজশাহীর শহীদ এএইচএম কামারুজ্জামান কেন্দ্রীয় উদ্যান ও চিড়িয়াখানা সংস্কারের মাধ্যমে আধুনিকায়ন করা হচ্ছে। সংস্কার কাজের অংশ হিসেবে পার্কের প্রধান ফটকটিকে আধুনিকীকরণ এবং লেকের উপর দু’টি কার্ভ ব্রিজ নির্মাণ করা হয়েছে। মহানগরবাসীর চিত্ত বিনোদনের জন্য স্বাধীনতার পর শহীদ এএইচএম কামারুজ্জামান এ পার্কটি স্থাপন করেন, যা পরে তার নামেই নামকরণ করা হয়। রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের আওতাধীন ৭নং ওয়ার্ডের শ্রীরামপুর এলাকায় এই কেন্দ্রীয় উদ্যান ও চিড়িয়াখানা অবস্থিত। প্রায় ১০০ বিঘার এ উদ্যানটি দীর্ঘ দিন মহানগরবাসীর চিত্ত বিনোদন, চিড়িয়াখানা দর্শন এবং বৈকালিক ভ্রমণ কেন্দ্র হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে।
কেন্দ্রীয় উদ্যান ও চিড়িয়াখানার দক্ষিণে টি-বাঁধ সংলগ্ন বাউন্ডারী ওয়াল ও নতুন গেট নির্মাণ করা হচ্ছে। এই গেট দিয়ে দর্শনার্থীরা প্রবেশ করতে পারবেন। পার্কের অভ্যন্তরে ওয়াকওয়ে নির্মাণ কাজ করা হচ্ছে। ফেরিজ হুইল সংস্কার করা হচ্ছে। হরিণ খাঁচাগুলো সংস্কার করা হচ্ছে। ঘড়িয়াল সংরক্ষণাগারের সংস্কার কাজ এগিয়ে চলেছে। অভ্যন্তরীণ পুকুরটি দৃষ্টিনন্দনভাবে সংস্কার ও উন্নয়ন করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে রিসোর্ট নির্মাণ কাজ সমাপ্ত হয়েছে। শিশুদের বিনোদনের জন্য পার্কে নতুন নতুন রাইডস স্থাপন করা হবে বলে গণমাধ্যমকে জানান সংশ্লিষ্টরা।
লালন শাহ পার্ক:
লালন শাহ পার্ক রাজশাহী মহানগরীর পাঠানপাড়ায় পদ্মা নদীর কূল ঘেঁষে নির্মিত একটি উদ্যান ও বিনোদন কেন্দ্র। এটি রাজশাহী মহানগরীর একমাত্র উন্মুক্ত বিনোদন কেন্দ্র। রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন-এর উদ্যোগে ২০১৩ সালে এই পার্কটি স্থাপন করা হয়। মরমী কবি লালন শাহের নামে এটির নামাকরণ করা হয়েছে। এই পার্কে একসঙ্গে প্রায় ৫-৭ হাজার মানুষ অবস্থান করতে পারেন। পার্কের অভ্যন্তরকে গ্রিন জোন, ল্যান্ডস্কেপ এবং পর্যটন ভ্রমণের জন্য বিভিন্ন ধরনের আইটেমে তৈরি করা হয়েছে। এখানে একটি মুক্তমঞ্চ রয়েছে। যেখানে মুক্ত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের সুবিধা রয়েছে। পদ্মা নদীর আবহে ৭৫০ জন বিনোদনপ্রেমী মানুষ এই উন্মুক্ত থিয়েটারে অনায়াসে এক সঙ্গে বসে বিভিন্ন অনুষ্ঠান উপভোগ করতে পারবেন। পদ্মা নদীর টানে প্রাকৃতির নির্মল পরিবেশে মুক্ত হাওয়া খেতে সব বয়সের মানুষই এখানে আসেন ও সময় কাটিয়ে থাকেন।
২। শিক্ষানগরীর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসমূহ:
দেশসেরা রাজশাহী কলেজ!
উপমহাদেশের অন্যতম ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রাজশাহী কলেজ। দেশসেরা এ প্রতিষ্ঠানটি ১৮৭৩ সালের পহেলা এপ্রিল প্রতিষ্ঠিত হয়। ভাষা আন্দোলন কিংবা মহান মুক্তিযুদ্ধই শুধু নয়, প্রতিটি জাতীয় ও ছাত্র আন্দোলনে রাজশাহী কলেজের অবদান অপরিসীম। উচ্চ মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষার ক্ষেত্রে একটি সফল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে নিরন্তর অবদানে সগৌরবে সমুজ্জ্বল রাজশাহী কলেজ। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ২০১৫ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ৩১টি সূচকে টানা চারবার এবং শিক্ষামন্ত্রণালয়ের অধীনে জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহে ২০১৬ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত ১৪টি সূচকে প্রতিবারই সেরার মুকুট অর্জন করেছে রাজশাহী কলেজ। মডেল কলেজের স্বীকৃতিও রয়েছে রাজশাহী কলেজের ঝুঁলিতেই। ১৯২১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার আগ পর্যন্ত তদানীন্তন পূর্ব বাংলায় একমাত্র রাজশাহী কলেজেই স্নাতক (সম্মান) পর্যায়ে পাঠদান করা হতো। সে সময় অবিভক্ত বাংলার প্রত্যন্ত অঞ্চল ছাড়াও আসাম, বিহার ও উড়িষ্যা থেকে অগণিত শিক্ষার্থী আসতো জ্ঞানার্জনের জন্য। শুধু তাই নয়, অবিভক্ত ভারতবর্ষে রাজশাহীর পরিচয়ই ছিল রাজশাহী কলেজের নামে।
চীনা কারিগর মিস্ত্রিদের হস্তশিল্পের সমন্বয়ে ব্রিটিশশৈলীতে কাঠের সানশেড দিয়ে নির্মিত এই কলেজের প্রশাসন ভবনটি এখনো দাঁড়িয়ে রয়েছে সগৌরবে। হাজি মুহাম্মদ মহসীন ভবন, ফুলার ভবন, প্রশাসন ভবনের মতো লালরঙ্গা ভবনগুলো এখনও প্রাচীন স্থাপত্যের নিদর্শন। ভবনগুলো আজও সেই আমলের রাজকীয় স্থাপত্যশৈলীর কথা মনে করিয়ে দেয় বর্তমান প্রজন্মকে। কলেজের এই সুরম্য স্থাপত্যশৈলী এখনো সগৌরবে কলেজটির ঐতিহাসিক পরিচয় ঘোষণা করে। ফলে রাজশাহী কলেজের অন্যতম বৈশিষ্ট্যে পরিণত হয়েছে লালরঙা ভবন, যা যে কোনো পথচারীর মনোযোগ কাড়ে নীরবে। ৫২’র ভাষা আন্দোলনে জীবন উৎসর্গকারী সব শহীদের স্মরণে নির্মিত দেশের প্রথম শহীদ মিনারও রয়েছে এই ক্যাম্পাসেই।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়:
উত্তরবঙ্গে উচ্চশিক্ষা ও গবেষণার শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ মতিহারের সবুজ চত্বরে অবস্থিত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি)। রাবির মনোমুগ্ধকর পরিবেশে বিমোহিত হন বিভিন্ন জায়গা থেকে পড়তে আসা শিক্ষার্থীরা। এছাড়া প্রতিদিনই দেশের নানা প্রান্ত থেকে বিশ্ববিদ্যালয়টিকে এক নজর দেখতে আসেন বহু দর্শনার্থী। বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন মার্কেট, টুকিটাকি চত্বর, ইবলিশ চত্বর, আমতলা, শহীদ মিনার, সাবাস বাংলা, গণকবর, রাকসু ভবন, স্টেডিয়াম ও একাডেমিক ভবনসহ প্রতিটি দৃশ্য নজর কাড়বে যে কারও। এছাড়াও এখানে রয়েছে নয়নাভিরাম প্যারিস রোড। যেখানে দৃষ্টি দিলেই চোখ ফেরানো কঠিন। ১৯৫৮ সালে বর্তমান ক্যাম্পাসে দালান-কোঠা ও রাস্তাঘাট নির্মাণ শুরু হয়। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম স্থানান্তর করা হয় মতিহারের নিজস্ব ক্যাম্পাসে এবং ১৯৬৪ সালের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল অফিস ও বিভাগ এখানে স্থানান্তরিত হয়৷ এই ক্যাম্পাসটি গড়ে ওঠে অস্ট্রেলিয়ান স্থপতি ড. সোয়ানি টমাসের স্থাপত্য পরিকল্পনায়৷
রাজশাহীতে এছাড়াও রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (রুয়েট), নিউ গভঃ ডিগ্রী কলেজ, রাজশাহী সরকারি সিটি কলেজ, রাজশাহী সরকারি মহিলা কলেজ, রাজশাহী গভঃ ল্যাবরেটরি হাই স্কুল, রাজশাহী কলেজিয়েট স্কুল, রাজশাহী সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, সরকারি পি এন হাই স্কুল, রাজশাহী ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড হাই স্কুল, শিরোইল সরকারি হাই স্কুল, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় স্কুলসহ রয়েছে অসংখ্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।
৩। সেবায় দেশসেরা রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালঃ
সেবার মানে বর্তমানে দেশসেরা রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতাল। দেশের ১৭টি সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মধ্যে স্বাস্থ্যসেবায় সেরা অবস্থানে উঠে এসেছে রামেক হাসপাতাল। গত ২ রা এপ্রিল, ২০২৩ স্বাস্থ্য অধিদফতর মূল্যায়নের এ সূচক প্রকাশ করে। এর আগে ২০২০ সালে করোনার সময় প্রথমবারের মতো রামেক হাসপাতাল দেশসেরা হয়েছিল। এর স্বীকৃতি হিসেবে পেয়েছিল ‘স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাতীয় পুরস্কার-২০২০।’ রামেক হাসপাতালে এখন শয্যার সংখ্যা ১ হাজার ২০০। কিন্তু রোগী থাকেন দ্বিগুণেরও বেশি। রাজশাহী বিভাগ ছাড়াও রংপুর ও খুলনা বিভাগের রোগীরা এখানে সেবা নেন। রোগী ভর্তি নেওয়ার পাশাপাশি বহির্বিভাগেও সেবা দেওয়া হয়। বহির্বিভাগে প্রতিদিন প্রায় সাত হাজার রোগি চিকিৎসা সেবা নেয়। প্রতিষ্ঠানটি ১৯৫৮ সালের ১লা জুলাই যাত্রা শুরু করে। বতর্মানে ১৮ টি অনুষদের মাধ্যমে স্নাতক পর্যায়ে এমবিবিএস ও বিডিএস এবং স্নাতকোত্তর পর্যায়ে এমএস, এমফিল, এমডি, এমপিএইচ এবং ডিপ্লোমা ডিগ্রি প্রদান করা হয়। স্নাতক পর্যায়ে আসন সংখ্যা ২৩০। এছাড়া সার্কভুক্ত দেশগুলোর ছাত্রছাত্রীদের জন্যও কিছু আসন বরাদ্দ রয়েছে।
৪। পরিচ্ছন্ন সবুজ রাজশাহী, স্বাস্থ্যকর রাজশাহীঃ
সবুজ, সুন্দর ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন নগরী রাজশাহী। দৃষ্টিনন্দন এই শহরটির রাস্তার ল্যাম্পপোস্টে লাগানো বিভিন্ন ধরনের লাইট। রাতের বেলা এই লাইটিংয়ের আলো-আধারির খেলায় বিমোহিত হবেন যে কেউ। এছাড়া রাস্তার মাঝখান দিয়ে লাগানো সারি সারি সবুজ গাছ, যা দেখলেই মনে হবে যেন সবুজ শীতল কোনো গ্রামের মেঠোপথ। উত্তরবঙ্গের অন্যতম এই বড় শহর অনেক আগে থেকেই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও সবুজ নগরী। সে কারণে বিশ্ব দরবারে ‘গ্রিন সিটি’ হিসেবে রাজশাহী পরিচিতি পেয়েছে। ইউনেস্কো ঘোষিত পরিচ্ছন্ন ও সবুজ নগরী হিসেবে স্বীকৃত রাজশাহী শহর।
রাস্তাঘাটের উন্নয়ন রাজশাহী শহরকে করেছে আরও সৌন্দর্যমণ্ডিত। শহরে নামলেই দেখা মিলবে প্রধান সড়ক বিভাজক দিয়ে লাগানো সারি সারি দৃষ্টিনন্দন গাছ। এর ভেতর লাগানো হয়েছে রঙ্গন, কাঠ করবি, চেরি ও এ্যালামুন্ডা। সব নিচে লাগানো হয়েছে সবুজ হেজ। এরপর কাঠ ও বাঁশের আদলে তৈরি করা হয়েছে কনক্রিটের বেড়া। এছাড়া নগরীর এই সৌন্দর্য ধরে রাখতে প্রতিনিয়ত কঠোর পরিশ্রম করেন সিটি করপোরেশনের কর্মীরা। শহর পরিচ্ছন্ন রাখতে নিষিদ্ধ করা হয়েছে অবৈধ পোস্টার, ব্যানার ও ফেস্টুন। অন্যদিকে নগরীর ফুটপাতের ওপর সকাল থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত সব ধরনের ব্যবসা বন্ধ করেছে রাসিক। সব মিলিয়ে এক দৃষ্টিনন্দন নগরী হয়ে উঠেছে রাজশাহী।
হযরত শাহ মাখদুম (রহ.)-এর স্মৃতি বিজড়িত শহর রাজশাহীর পাশ দিয়ে বয়ে গেছে দৃষ্টিনন্দন পদ্মা নদী। পদ্মার পাড়ে গড়ে উঠেছে ছোট ছোট পার্ক-রিসোর্ট। জোসনা ও লাইটিংয়ের আলো-আধারিতে নদীর বুকে চলে অন্য রকম এক খেলা। নদীর ছলাৎ ছলাৎ ঢেউয়ের সঙ্গে লাইটিং- এ যেন এক অন্য রকম অনুভূতি। রাজশাহী যতটা সুন্দর, ততটাই সুন্দর এখানকার মানুষ। কেননা, মানুষ সুন্দর না হলে পরিবেশ সুন্দর থাকে না। রাজশাহীর সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন সাহেবের ভূমিকা অনস্বীকার্য।
৫। রাজশাহী – বার্ডশাহী, আমের রাজ্য
নানা প্রজাতির পাখির জন্য রাজশাহীকে বলা যায় ‘বার্ডশাহী’। সারা দেশে এখন পর্যন্ত রেকর্ড হয়েছে ৭১৪টি পাখি। পাখি বিশেষজ্ঞ হাসনাত রনির মতে, রাজশাহীতে এ পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ৩০০ প্রজাতির পাখি দেখা গেছে। রাজশাহী জেলাতেই যদি দেশের মোট প্রজাতির অর্ধেক প্রজাতির পাখি থাকে, তাহলে সেই জেলাকে ‘বার্ডশাহী’ বললে অত্যুক্তি হয় না!
রাজশাহীর প্রিয় বিষয়গুলোমধ্যে বাহারি আর সুস্বাদু আম সবচেয়ে চমৎকার! রাজশাহীর বিখ্যাত আম দেশের সব অঞ্চলে সমান সমাদৃত। গত কয়েক বছর ধরে ইউরোপের বাজারেও রপ্তানি হচ্ছে রাজশাহীর উৎপাদিত আম। গুটি জাতের আম থেকে শুরু করে গোপালভোগ, লক্ষণভোগ, রাণীপছন্দ, ক্ষিরসাপাত বা হিমসাগর, ল্যাংড়া, আম্রপালি, ফজলি, আশ্বিনা সবই পাবেন রাজশাহীতে। জুন-জুলাইতে রাজশাহী ভ্রমণ করলে রাজশাহীর হাটে-বাজারে, গ্রামে-শহরে পাবেন আমের মেলা। মনে হবে ঠিক যেন আমের রাজ্যে এসে পৌঁছেছেন আপনি!
সুষ্ঠু বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, ফুলের সৌন্দর্য্যে সুদৃশ্য আইল্যান্ড, বৃক্ষরোপণ, সবুজায়ন, সড়ক প্রশস্তকরণ, নতুন রাস্তা ও ড্রেন নির্মাণ এ নগরীকে আরও আকর্ষণীয় নগরীতে পরিণত করেছে। রাজশাহীর এমন দৃশ্য দেখতে সাজিয়ে তুলতে সারা বছর কর্মযজ্ঞ অব্যাহত রাখা হয়েছে।
অন্যান্য দর্শনীয় স্থানসমূহঃ
রাজশাহী শহরের অন্যান্য দর্শনীয় স্থানের মধ্যে শেখ রাসেল শিশু পার্ক, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব হাইটেক পার্ক, বধ্যভূমি, বড়কুঠি, নোঙর রেস্তোরা, বিমান চত্বর থেকে বুধপাড়া বিহাস, মিনি ফ্লাইওভার, রাতের রাজশাহীকে উপভোগ করতে কল্পনা-তালাইমারী কিংবা বন্ধগেট ঐতিহ্য চত্বর হতে কাশিয়াডাঙ্গা রোড রাস্তায় সুদৃশ্য আলোকায়ন, সাহেববাজার, নিউমার্কেট, থিম ওমর প্লাজা, শাহ মখদুম বিমানবন্দর, সিএন্ডবি মোড়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল, শহীদ কামারুজ্জামান স্মৃতি সৌধ, শিলিন্দায় চৈতির বাগান প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য।
কোলাহল থেকে দূরে, পরিকল্পিত এ নগরীতে কিছুদিনের জন্য ঘুরে গেলে সত্যিই পাবেন প্রশান্তির ছোঁয়া। পদ্মাপাড়ের এ শান্ত অঞ্চলটি তাই একবার ঘুরে দেখতেই পারেন। পাঠক, কথা দিচ্ছি, রাজশাহীর অতুলনীয় সৌন্দর্য আপনাকে একেবারেই নিরাশ করবে না!