রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের মেয়র বা রাসিক মেয়র হলেন রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের দায়িত্বপ্রাপ্ত মেয়র। সিটি কর্পোরেশনের কার্যনির্বাহী প্রধান হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন এবং প্রতি পাঁচ বছর পরপর নাগরিকের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত হন তিনি। সর্বশেষ রাসিক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় গত ২১ শে জুন, ২০২৩ তারিখে। উল্লেখ্য সিটি কর্পোরেশনে উন্নীত হওয়ার পূর্বে ১৮৬৯ সাল থেকে বিভিন্ন সময়ে চেয়ারম্যান ও প্রশাসকগণ শহরের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। প্রিয় রাজশাহী এক্সপ্রেস পাঠক, চলুন সংক্ষেপে জেনে নিই নব-নির্বাচিত রাসিক মেয়র সম্পর্কে –
জনাব এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন (পুরো নাম আবুল হাসনাত মোহাম্মদ খায়রুজ্জামান লিটন) ১৯৫৯ সালের ১৪ আগস্ট রাজশাহী জেলার কাদিরগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম আবুল হাসনাত মোহাম্মদ কামারুজ্জামান এবং মাতা জাহানারা বেগম। আবুল হাসনাত মোহাম্মদ কামারুজ্জামান জাতীয় চার নেতার অন্যতম একজন এবং প্রথম স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও স্বাধীনতা যুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ছিলেন। ছয় ভাই-বোনের মধ্যে লিটন চতুর্থ এবং ভাইদের মধ্যে জ্যেষ্ঠ। তাঁর দাদা আবদুল হামিদ রাজশাহী অঞ্চলে মুসলিম লীগের সভাপতি ও পূর্ব পাকিস্তান আইন সভার সদস্য (এমএলএ) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। আব্দুল হামিদের পিতার নাম হাজী লাল মোহাম্মাদ যিনি দুই মেয়াদে পূর্ববঙ্গ লেজিসলেটিভ কাউন্সিলের (এমএলসি) সদস্য ছিলেন। তিনি রাজশাহী অ্যাসোসিয়েশন ও বরেন্দ্র একাডেমির একমাত্র মুসলিম সদস্য ছিলেন।
খায়রুজ্জামান লিটন ঐতিহ্যবাহী রাজশাহী কলেজিয়েট স্কুল থেকে প্রাথমিক শিক্ষা লাভের পর ১৯৭৬ সালে রামকৃষ্ণ মিশন বিদ্যাপীঠ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক সম্পন্ন করেন। এরপর কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজির বিভাগে ভর্তি হন এবং ১৯৭৯ সালে স্নাতক ডিগ্রী অর্জন করেন। তারপর ১৯৮৩ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন বিদ্যায় স্নাতক ডিগ্রী অর্জন করেন। তিনি আইনজীবী হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন এবং ১৯৮৫ সালে বার কাউন্সিলের সদস্য হন।
খায়রুজ্জামান লিটন ১৯৮৪ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগে যোগদানের মাধ্যমে রাজনীতিতে প্রবেশ করেন। ২০০৮ সালের রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রথমবারের মতো মেয়র নির্বাচিত হন এ এইচ এম খায়রুজ্জামান। ২০১৮ সালের ৩০ জুলাই দ্বিতীয়বারের মতো এবং ২০২৩ সালের ২১ জুন রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের সর্বশেষ নির্বাচনে তিনি পুনরায় মেয়র নির্বাচিত হন। খায়রুজ্জামান লিটন দীর্ঘদিন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্যের পাশাপাশি রাজশাহী মহানগরের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। এরপর ২০২১ সালের ১৯ নভেম্বর তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী কমিটিতে প্রেসিডিয়াম সদস্য হিসেবে অন্তৰ্ভুক্ত হন।
তাঁর স্ত্রী শাহীন আকতার রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি। খায়রুজ্জামান লিটন- শাহীন আকতার দম্পতির দুই মেয়ে, আনিকা ফারিহা জামান অর্ণা এবং মায়শা জামান শ্রেয়া। বড় মেয়ে অর্ণা আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশ বিষয়ক উপকমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
গত ২১ শে জুন, ২০২৩ তারিখে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বিপুল ভোটে জয়লাভ করেন খায়রুজ্জামান লিটন। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে গত পাঁচ বছরের উন্নয়ন মডেলে তার ওপর আস্থা রেখেছেন মানুষ।
তৃতীয়বার মেয়রের শপথ নিতে যাওয়া খায়রুজ্জামান লিটন গণমাধ্যমকে বলেছেন, বেকারত্ব কমাতে এবার কর্মসংস্থান সৃষ্টিই তার অগ্রাধিকার। এর আগে নির্বাচনী ইশতেহারে ৫০ হাজার কর্মসংস্থানের কথা বলেছিলেন তিনি।
নির্বাচনে বিজয়ী হবার পর রাজশাহী মহানগরবাসীর প্রতি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়ে তিনি অনলাইনে বার্তা দিয়েছেন। রাজশাহী এক্সপ্রেস পাঠকের জন্য তা তুলে ধরা হলো,
প্রিয় নগরবাসী,
আসসালামু আলাইকুম। ২১ জুন ২০২৩, বুধবার উৎসবমুখর ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে অনুষ্ঠিত রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে আপনারা আমাকে বিপুল ভোটে পুনরায় মেয়র পদে নির্বাচিত করেছেন। সম্মানিত ভোটারসহ নগরীর সর্বস্তরের নাগরিকবৃন্দকে আমার আন্তরিক কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানাচ্ছি। একইসঙ্গে রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের সর্বস্তরের নেতাকর্মী, ১৪ দল রাজশাহীর নেতৃবৃন্দ ও সদস্যবৃন্দ, রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, ক্রীড়া, পেশাজীবী, শ্রমজীবী এবং সাংবাদিকসহ বিভিন্ন সংগঠনের সর্বস্তরের নেতাকর্মীর প্রতি অশেষ ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।
আমি নগরীর চলমান উন্নয়ন ও ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টিসহ আমার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে নিরলসভাবে কাজ করে যাবো ইনশাল্লাহ। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার সহায়তা, আপনাদের ভালোবাসা ও সহযোগিতায় রাজশাহী মহানগরীকে আরো পরিচ্ছন্ন, সবুজ, উন্নত, বাসযোগ্য ও কর্মচঞ্চল নগরী হিসেবে গড়ে তুলবো।
আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি আপনারা অতীতের ন্যায় আগামীতেও আমার পাশে থেকে রাজশাহী মহানগরীর উন্নয়নকে বেগবান করবেন। আগামী প্রজন্মের জন্য একটি সুন্দর মহানগরী গড়ার লক্ষ্যে একসঙ্গে কাজ করে যাবো- এই আমার প্রত্যাশা।
ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতায়
এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন
পুন:নির্বাচিত মেয়র
রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন