আধুনিকতার ছোঁয়ায় হারিয়ে যাচ্ছে মাটির তৈরি বাড়িঘর। গ্রামবাংলায় এখন আর মাটির ঘর তেমন চোখে পড়ে না। এখনো বরেন্দ্র অঞ্চলে চোখে পড়ে হাজার হাজার মাটির ঘর। এখানকার অনেক বাসিন্দারা মাটির ঘরে বসবাস করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। তবে, এখনো মাটির যেসব বাড়ি চোখে পড়ে তার বেশিরভাগ এক বা দুই তলা। মাটির বাড়ি তিন তলা খুব একটা চোখে পড়ে না। এখন এধরনের বাড়ির সংখ্যা খুবই কম। এমন একটি বাড়ি কালের স্বাক্ষী হয়ে এখনো দাঁড়িয়ে আছে নওগাঁ জেলার পোরশা থানার নিতপুর বাঙালপাড়া গ্রামে।
নিতপুর বাঙ্গাল পাড়ার এসএম আতিকুর রহমানের বাড়ি। তিনি জানান, তার পিতা মৃত শামসুজ্জোহা সরকার ১৯৮৫ সালে বাড়িটি নির্মান করেন। বাড়িটি মাটির তিন তলা। তিন তলা বাড়িটিতে ১০টি রুম আছে। বারান্দা আছে ৫টি। বাথরুম আছে ৩টি।
স্থানীয়রা জানান, এক সময় মাটির বাড়ির প্রচলন ছিল। গ্রামের মানুষের কাছে মাটির বাড়ি ঐতিহ্যের প্রতীক ছিল। গ্রামের বিত্তশালীরা অনেক অর্থ ব্যয় করে মাটির দোতলা বা তিন তলা বাড়ি তৈরি করতেন, যা এখনও কিছু কিছু এলাকায় চোখে পড়ে।
এঁটেল বা আঠালো মাটি কাদায় পরিণত করে ৩ থেকে ৪ ফুট চওড়া করে দেওয়াল তৈরি করা হয়। একতলা মাটির বাড়ির জন্য ১২ থেকে ১৪ ফুট উঁচু দেওয়ালে কাঠ-বাঁশ দিয়ে সিলিং তৈরি করে তার ওপর টিনের ছাউনি দেয়া হয়। আর দোতলা বাড়ির জন্য ১৩ থেকে অন্তত ২৫ ফুট উঁচু দেওয়াল তৈরি করে ১৩ ফুটের মাঝে তালের গাছের ফালি দিয়ে পাটাতন তৈরি করে ২ থেকে ৩ ইঞ্চি মোটা কাঠের ছাউনি দেয়া হয় আর ২৫ ফুটের মাথায় একতলা বাড়ির মতো টিনের ছাউনি দেয়া হয়। এভাবেই তিন তলা বাড়ি তৈরি করা হয়। কোনো কোনো বাড়ির এসব মাটির ঘরে বিভিন্ন রকমের আল্পনা এঁকে ঘরের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করা হয়।
এলাকাবাসীর ভাষ্য, ভূমিকম্পে মাটির ঘরের খুব বেশি ক্ষতি হয় না। একেকটি মাটির ঘর এক থেকে দেড়শ বছরেরও বেশি স্থায়ী হয়ে থাকে। কিন্তু বর্তমান সময়ে আধুনিকতার ছোঁয়ায় আর কালের পরিক্রমায় গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী এসব মাটির বাড়ি ইটবালির দালান-কোঠা আর বড় বড় অট্টালিকার কাছে হার মানছে।
খবর কৃতজ্ঞতাঃ দৈনিক সানশাইন