রাজশাহীর নওদাপাড়ায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে একটি বাস রাস্তার পার্শ্ববর্তী দোকানে ঢুকে ঘটনাস্থলে ৩ জন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আরও পাঁচজন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। তাদের উদ্ধার করে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
বুধবার (১৫ আগস্ট) বেলা সোয়া ১২টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন- নগরের শাহ মখদুম থানার ভাড়ালিপাড়া এলাকার রুস্তম আলীর মেয়ে ও নওদাপাড়া গার্লস স্কুলের সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী শারমিনা আশরাফিয়া আনিকা (১৩), বোয়ালিয়া থানার ম্যাচ ফ্যাক্টরি এলাকার মো. ইসলামের ছেলে ইসমাঈল হোসেন টিংকু (২৫), পবা মঠপুকুর এলাকার মোহাম্মদ আলীর ছেলে সবুজ (৩০)।
আহতরা হলেন- রাজশাহী কলেজের দর্শন বিভাগের ছাত্র জুলিয়ান মুর্মু (২০), নওদাপাড়া এলাকার রিমা বেগম (৪৫), মিঠু (২৫), মালদাহ কলোনী এলাকার সজিব হোসেন (৩৫) ও পবার সারংপুর এলাকার আসমত আলী (৩৫)। আহতরা রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ৩, ৮ ও ৩১ নম্বর ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রাজশাহী থেকে নওগাঁ অভিমুখে যাওয়ার পথে অ্যারো বেঙ্গল (রাজ মেট্রো-জ-০৪-০০০৪) নামের বেপরোয়া গতির একটি খালি বাস নওদাপাড়া এলাকায় এসে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে। বাসটি পোস্টাল একাডেমি গেট পার হয়ে প্রথমে একটি মোটরসাইকেলকে পেছেন থেকে চাপা দেয়। এক পর্যায়ে ওই মোটরসাইকেলটিকে টেনে আরও কিছু দূর নিয়ে যায়।
এ সময় পর পর দু’টি ব্যাটারিচালিত যাত্রীবাহী অটোরিকশাকে ধাক্কা দিয়ে ঘাতক বাসটি নওদাপাড়া বাজার রাস্তার বাঁ পাশে থাকা সবুজ-সাথী অ্যান্ড লাইব্রেরির সানসেট ভেঙে পার্শ্ববর্তী জাহাঙ্গীর ট্রেডার্সে ঢুকে পড়ে। এতে ঘটনাস্থলেই মোটরসাইকেলের দুই আরোহী টিংকু ও সবুজ এবং দোকানে দাঁড়িয়ে থাকা অপর স্কুলছাত্রী আনিকা নিহত হন। পরে পুলিশ গিয়ে নিহতের মধ্য আনিকার মরদেহ রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠায় এবং অপর দুজনের মরদেহ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়৷
ঘটনার পর রাজশাহীর আম চত্বর এলাকায় বিক্ষোভ করে স্থানীয় বিক্ষুব্ধ জনতা। এ সময় কয়েকটি বাস ভাঙচুর করেছে বিক্ষুব্ধরা। এতে বেলা আড়াইটা পর্যন্ত ওই রাজশাহী-নওগাঁ রুটে বাসসহ সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকে।
বিক্ষুব্ধদের অভিযোগ- অ্যারো বেঙ্গল নামের ওই বাসটি খালি ছিল। বাসটি রাজশাহী-চাঁপাইনবাবগঞ্জ রুটের। মহানগরীর রেলগেট হয়ে বাসটিকে নওদাপাড়া টার্মিনালে রাখার জন্য নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। আর এ সময় বাসের হেলপার বাসটি চালাচ্ছিল। যে কারণে বেপরোয়া গতির ওই বাসটি নওদাপাড়া মোড়ে গিয়ে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে এ দুর্ঘটনা ঘটায়। তবে ঘটনার পর কৌশলে পালিয়ে যাওয়ায় তাকে আটক করা যায়নি।
পরে পুলিশ বিক্ষুব্ধদের সরিয়ে দিলে ওই সড়কে আবারও যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক হয়। এর আগে বাসটিকে আটক করে রেকার দিয়ে টেনে শাহ মখদুম থানায় নিয়ে যাওয়া হয়।
রাজশাহী মহানগর পুলিশের মুখপাত্র সিনিয়র সহকারী কমিশনার (সদর) ইফতে খায়ের আলম জানান, ঘটনার পরপরই খবর পেয়ে মহানগর পুলিশ কমিশনার একেএম হাফিজ আক্তার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। এ সময় নিহতদের সম্পর্কে খোঁজ-খবর নেন এবং দোষী বাস চালককে দ্রুত গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনার নির্দেশ দেন। এ সময় নগর পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা তার সঙ্গে ছিলেন।
এদিকে, ঘটনার পর রাজশাহী জেলা প্রশাসক এসএম আব্দুল কাদের ঘটনাস্থলে আসেন। ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে নিহতের পরিবারের প্রত্যেককে তাৎক্ষণিকভাবে ২০ হাজার টাকা করে সরকারি অনুদানের ঘোষণা দেন। এছাড়া ঘাতক বাস চালককে গ্রেফতার করে তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য পুলিশকে নির্দেশ দেন।
রাজশাহীর শাহ মখদুম থানার ভারপ্রাপ্ত কমকর্তা (ওসি) জিল্লুর রহমান জানান, নিহতদের মধ্যে টিংকু ডিশ লাইনের কাজ করে বলে তার কেবল অপারেটর জহিরুল ইসলাম নিশ্চিত করেছেন। আর সবুজ টিংকুর সঙ্গেই ছিলেন। তারা মোটরসাইকেল নিয়ে নওদাপাড়ার দিকে আসার সময় এ দুর্ঘটনার কবলে পড়েন। তাদের মরদেহ উদ্ধার করে থানায় রাখা হয়েছে।
ময়নাতদন্ত শেষে বিকেলের মধ্যে তাদের মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে। এছাড়া বিক্ষুব্ধদের সড়িয়ে দেওয়ায় ওই সড়কে যানবাহন চলাচল আবারও স্বাভাবিক হয়ে এসেছে। বর্তমানে বাসটি যে চালিয়ে যাচ্ছিল তাকে খোঁজা হচ্ছে। এ ব্যাপারে থানায় মামলা করা হবে বলেও জানান শাহ মখদুম থানার এ পুলিশ কর্মকর্তা।
খবর কৃতজ্ঞতাঃ বাংলানিউজ২৪