ঝড়, তাপদাহ ও শিলাবৃষ্টির কারণে চাঁপাইনবাবগঞ্জে গত চার বছর ব্যাহত হয়েছে আম উৎপাদন। একইসঙ্গে উৎপাদিত ফলে ফরমালিন ব্যবহারের অভিযোগে আটকের পর তা ধ্বংসের ফলে ক্ষতি হয়েছে অগুনতি চাষির। ওজন জটিলতার কারণেও বিপদে ছিলেন তারা। তবে, প্রতিকূল পরিবেশ এখন অতীত। এবার ফলন হয়েছে ভালো, বেড়েছে আমের দাম। তাই এখন তাদের মুখে ‘চওড়া হাসি’।
বিগত বছরগুলোতে দাম নিয়ে আমের রাজধানী খ্যাত চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার চাষিরা ছিলেন হতাশ। তাদের দাবি, গত চার বছর আমের সঠিক মূল্য থেকে তারা ছিলেন বঞ্চিত। একইসঙ্গে নানা জটিলতা ছিল তাদের আর্থিক ক্ষতির কারণ। প্রকৃতির আচরণও ছিল বিরূপ। এবার বদল ঘটেছে পরিস্থিতির।
এবছর আমের মৌসুম শুরু হয়েছে রমজান মাসে। সেসময় আদালতের নির্দেশনা ছিল অপরিপক্ক ফলে কেমিক্যাল দেওয়া যাবে না। একইসঙ্গে বেঁধে দেওয়া সময়ের আগে তা পাড়াও যাবে না। এতে বিপাকে পড়েছিলেন অনেক চাষি। মৌসুম শুরুর পরও তারা আম পাড়তে পারছিলেন না। সব মিলিয়ে প্রত্যাশা অনুযায়ী বাজারে আম আসে একটু দেরিতে। এর মধ্যে ওজন জটিলতার কারণে বৃহত্তম আমবাজার কানসাট বন্ধ থাকে দু’দিন। চাষিরা আশঙ্কা করছিলেন আরও একটি মৌসুম হয়তো তাদের ক্ষতি গুনতে হবে। পরে প্রশাসনের হস্তক্ষেপে পুনরায় চালু হলে ঈদের পর জমে ওঠে বাজার।
গোপালভোগ, মোহনভোগ ও গুটি জাতের আম শেষ হওয়ার পর এখন ক্ষিরসাপাত জাতের আমও শেষের দিকে। আছে ল্যাংড়া, ফজলি, লক্ষ্মণভোগসহ নতুন নতুন জাতের আম। ভরা মৌসুমে অন্য বছরগুলোতে আমের দাম থাকতো তুলনামূলক কম। এবার অবস্থা বদলেছে। ভরা মৌসুমেও দাম চড়া, বেড়েছে বেচাকেনা। প্রতিদিন শুধু কানসাটেই কোটি টাকার উপরে আম বেচাকেনা হচ্ছে। আমের বাজার। ছবি: বাংলানিউজকানসাটের আমের বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বাজারে বেচাকেনা চলছে হরদম। জমে ওঠেছে হাট-বাজার। চাষিরা গাছ থেকে আম নামিয়ে ঝুড়ি বা প্লাস্টিকের খাঁচায় করে হাটে আনছেন আম। দর-দাম করে ঝুড়িসহ তা কিনে নিয়ে যাচ্ছেন ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা, সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা ব্যবসায়ীরা। দিন-রাত চলছে কেনাবেচা।
আম ব্যবসায়ী টিপুর কানসাট বাজারের আম কেনাবেচা সম্পর্কে বলেন, সোমবার বাজারে প্রতি মণ ক্ষিরসাপাত আম ৩ হাজার ৮০০ টাকা থেকে শুরু করে ৪ হাজার ৫০০ টাকা এবং ল্যাংড়া আম ২ হাজার ৪০০ থেকে ৩ হাজার ৬০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
আমচাষি ইবনে কায়য়ুম সুজন জানান, তিনি মৌসুমের শুরুতে আমের দাম নিয়ে হতাশ ছিলেন। ৮০০ টাকা মণ দরে তার একটি আমবাগান বিক্রি করতে পারলেও অন্যগুলো পারেননি। শেষ সময়ে ল্যাংড়া জাতের আম ৩ হাজার টাকা মণ দরে বিক্রি করতে পেরে দারুণ খুশি এ চাষি। তিনি চান আমের দাম এ বছরের মতো থাকুক সবসময়।আমের বাজারকানসাট বাজারে আম বিক্রি করতে আসা শহিদুল হক হায়দারী বলেন, আমের গুটি অবস্থায় ক্রেতার অভাবে অধিকাংশ চাষি ‘পানির দরে’ বাগান বিক্রি করে দিয়েছিলেন। সে সময় যেসব চাষি বাগান বিক্রি করতে পারেননি এখন আম পেড়ে বাজারে বিক্রি করছেন শুধুমাত্র তারাই লাভবান হচ্ছেন। তবে এ বছরের মতো আমের দাম ঊর্ধ্বমুখী এবং তা রফতানিতে সুনির্দিষ্ট কিছু পরিকল্পনা নিলে আগামীতে আমবাগান পরিচর্যাসহ চাষে আগ্রহ বাড়বে।
তিনি আরও বলেন, গত কয়েকবছর আমবাগান বিক্রি করে বাগান পরিচর্যা খরচই ওঠাতে পারেননি চাষিরা। কিন্তু এ বছর কম পরিচর্যায় বেশি লাভ হওয়ায় আবারও চাষিরা আশায় বুক বাঁধছেন। আম কেন্দ্রিক ব্যবসা গ্রামীণ এ জনপদের অর্থনীতি পাল্টে দিয়েছে। অঞ্চলের প্রায় দেড় লাখ মানুষ মৌসুমি এ কর্মসংস্থানের সঙ্গে সম্পর্কিত।
আম বাগানের পরিচর্যায় নিয়োজিত শ্রমিক ও ঝুড়ি বানানোসহ নানা সহায়ক কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা। এ ব্যস্ততা চলবে পুরো জুন-জুলাই মাস জুড়ে। স্থানীয় কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় প্রায় ৩২ হাজার হেক্টর জমিতে আম বাগান রয়েছে। এতে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে তিন লাখ মেট্রিক টন।
খবর কৃতজ্ঞতাঃ Daily Sunshine