রাজশাহী নগরীর নিউমার্কেটের প্রধান ফটকের বিপরীতে মোবাইল মার্কেটের ধার দিয়ে সরু রাস্তা। রাস্তা দিয়ে সামান্য কিছুদুর এগিয়ে যেতেই হাতের বাঁয়ের গোলির দুটি দোকান পেরুতেই ছোট্ট একটি খাবার হোটেল। নিউমার্কেট সংলগ্ন সড়কটির ধারে কোলাহল থাকলেও এই স্থানটি বেশ নিরিবিলি। দুপুর পার হতে চলেছে দেখে খাবর জন্য তরিঘরি হোটেলটিতে বসা। ঢুকতেই বেশ অবাক হতে হলো। ছোট হলেও হোটেলটিতে উপচে পড়া ভিড়। সবাই যে যার মতো দুপুরের আহারে ব্যস্ত। একজন যুবক ফরসা ছিমছাম, তার মুখে সবসময় যেন হাসি খেলা করছে; সকলকে আপ্যায়নে ব্যস্ত।
ক্রেতাদের জন্য সাজান নির্দিষ্ট বেঞ্চে বসতেই হাসিমুখে যুবকটি সমনে এসে হাজির। বললো, কি খাবেন? খাবারের মেনু কি জানতে চইলে সে জানায়, কচুশাক, মাছ, ভাজি, ভর্তা, ডিম, মুরগী আর কালাভুনা। প্রায় সকলের টেবিলেই দেখলাম বাটিতে কালো করে ভাজা মাংস। বুঝতে বাঁকি রইল না এই রেসিপিটি ঐতিহ্যবাহী সেই কালা ভুনা। লোভ সামলাতে না পেরে কালা ভুনাই দিতে বললাম। এক থালা ভাত চলে আসলো। এখন মাংসের জন্য অপেক্ষা।
পাশেই ছোট্ট রান্নঘরে বসে রান্নায় ব্যস্ত দুই জন মধ্য বয়সী নারী। হোটেলটি ছোট হলেও বেশ পরিপাটি। তরি-তরকারি কোটা-বাছাসহ রান্নার সব আয়োজন চোখের সামনেই হচ্ছে। দুজনের মধ্যে একজনের গতিবিধি দেখে বোঝা গেল এখানকার সমস্ত কর্মযজ্ঞের মূলেই রয়েছেন তিনি। মাংস রান্না মাঝে তনি নিজে এসে বাটিতে কালা ভুনা তুলে দিয়ে গেলেন। এর মাঝে যে যার মতো উচ্চস্বরে বলে উঠছেন, খালা ভাত দেন, আবার কেও বলছে, খালা কালা ভুনা দেন।
টেবিলের পাশের জনের সাথে কথা হলে তিনি জানান, নিউমার্কেট এলাকার আশপাশের ব্যবসায়ীদের প্রায় সকলেই বাসা থেকে খাবার না নিয়ে আসলে এখানেই দুপুরের খাবার খেতে আসেন। হোটেলটির খাবারের মান ভালো হওয়ায় প্রতিনিয়তই বাড়ছে এর চাহিদা। ছুটে বেড়ান সেই নারীর দিকে দেখিয়ে তিনি বলেন ইনিই এই হোটেলটির উদ্যোক্তা। তার হাতের রান্নার সুনামের কারণেই আজ হোটেলটি ছোট হওয়া সত্বেও উপচে পড়া ভিড় থাকে। প্রথমে টিফিন বাটিতে করে দোকানে দোকানে খাবার সরবরাহ করতেন। সকলের চাহিদা ও সহযোগীতার পাশাপাশি খাবারের স্বাদ ও মানের কারণে তিনি এখানে এই হোটেলটি খুলে বসেছেন। হোটেলটির উদ্যোক্তা এই পরিশ্রমী নারীর নাম মরজিনা। স্থানীয়দের মাঝে তিনি ‘মরজিনা খালা’ বলেই সুপরিচিত।
গল্পের মাঝে দেড় প্লেট ভাতের সাথে এক বাটি কালা ভুনা খাওয়া শেষ। খাবার শেষে মরজিনা খালা বিল নিয়ে হাজির। বিল আসল ১১৫টাকা (একশ টাকার কালা ভুনা ও ১৫টাকার ভাত)। বিল হাতে নিয়ে খালা বললেন, মামা খাবার ভালো লাগলে আবার আসবেন।
খবর কৃতজ্ঞতাঃ ডেইলি সানশাইন