সকাল আটটায় টিকিট বিক্রি শুরু হচ্ছে। শেষ হচ্ছে আধাঘণ্টার মধ্যেই। সামনে দাঁড়িয়ে থাকা টিকিটপ্রত্যাশীরা না সরতেই বলা হচ্ছে টিকিট শেষ! ফলে টিকিটপ্রত্যাশীরা হৈচৈ করে খালি হাতে বাড়ি ফিরছেন। এটি এখন রাজশাহী রেলস্টেশনের প্রতিদিনের চিত্র।
গত বুধবার (১৫ আগস্ট) থেকে রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশনে ঈদুল আজহার আগাম ফিরতি টিকিট বিক্রি শুরু হয়েছে চলবে ২০ আগস্ট পর্যন্ত। কিন্তু নানান কোটার হিসেব দেখিয়ে টিকিট বিক্রি নিয়ে শুরু হয়েছে শুভঙ্করের ফাঁকি। টিকিট বিক্রি শুরু হতেই শেষ হয়ে যাচ্ছে। যে অংকের হিসেব মিলছেনা কোনো সূত্র দিয়েই।
রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশনে আসা শিরোইল এলাকার অধিবাসী রুহুল আমিন বলেন, শনিবার (১৮ আগস্ট) সকালে টিকিট বিক্রি শুরু হয় ৮টা ১০ মিনিটে। ৩০ মিনিট পর সামনের ১৫জন কাউন্টারে যেতেই তার ভেতর থেকে বলা হয় সব টিকিট শেষ। কথা শুনে সবাই হতবম্ব! তাহলে মুহূর্তের মধ্যে তিন হাজার ৩৬০টি টিকিট গেলো কোথায়? আর কেইবা নিল?
এরপর প্রতিদিনের মতো শুরু হয় হট্টগোল। পরে জিআরপি থানা পুলিশ, রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী (আরএনবি), বোয়ালিয়া থানা পুলিশ এবং র্যাব সদস্যরা গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করে। ফলে ঈদের ফিরতি টিকিট নিয়ে রাজশাহীতে মানুষের হাহাকার মিটছে না। বিভিন্ন কোটা এই সংকটকে আর ঘনীভূত করে তুলেছে। মাঠে আছে কালোবাজারিও।
যাত্রীদের অভিযোগ, ২৪ ঘণ্টা আগে লাইনে দাঁড়িয়েও টিকিট পাওয়া যাচ্ছে না।
শনিবার সকালের দিকে গিয়ে লক্ষ্য করা যায়, স্টেশন চত্বরে নারী-পুরুষের লম্বা লাইন। তারা ২৭ আগস্টের টিকিট নিতে এসেছেন। কেউ আগের দিন রাতে কেউ শনিবার ভোরে এসে লাইনে দাঁড়িয়েছেন। কিন্তু এতে কেবল টিকিটপ্রত্যাশীদের লাইনই দীর্ঘ হয়েছে। অধিকাংশ মানুষই টিকিট না পেয়ে শূন্য হাতে বাড়ি ফিরে গেছেন। টিকিটপ্রত্যাশী শিরোইল মঠপুকুর এলাকার আশরাফুল ইসলাম জানান, ভোর থেকে লাইনে দাঁড়িয়েও টিকিটের দেখা পাননি তারা। কাউন্টার থেকে বলা হচ্ছে টিকিট শেষ। তবে টিকিট বিক্রি শুরুর পর দেখা যায় খুব বেশি হলে হাতে গোনা ৩০ থেকে ৪০জন মানুষ টিকিট পেয়েছেন। তাহলে আজকের এতো টিকিট কী হলো? অথচ রেলের হিসেবে মোট টিকিটের ৬৫ শতাংশ দেওয়ার কথা কাউন্টার থেকে।
বাকি ৩৫ শতাংশের ৩০ শতাংশ অনলাইন ও মোবাইলে। ৫ শতাংশ ভিআইপি ছাড়াও রেল কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়। কিন্তু এখানে যেনো প্রায় সব টিকিটই জাদুর মতো হাওয়া হয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ করেন ঈদের আগাম ফিরতি টিকিটপ্রত্যাশী আশরাফুল ইসলাম। তাই টিকিট কালোবাজারীর অভিযোগ করেছেন অনেকে।
তারা বলেছেন, দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট মিলছে না। আর স্থানীয়রা এসে নিজেরা ও মেয়েদের লাইনে ঢুকিয়ে দিচ্ছে। একটু পর শোনা যায় টিকিট শেষ। সবমিলিয়ে ঈদের ফিরতি টিকিক যেনো সোনার হরিণ হয়ে গেছে।
এদিকে বিক্রি শুরুর পর এরই মধ্যে গত বৃহস্পতিবার (১৬ আগস্ট) রাজশাহী স্টেশনে কালোবাজারি চক্রের পাঁচ সদস্যকে ট্রেনের টিকিটসহ হাতেনাতে আটক করে রেলওয়ে পুলিশ। পরে তাকে ভ্রাম্যমাণ আদালত বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়া হয়। তারপরও এখানে টিকিট কালোবাজারি বন্ধ হয়নি।
আর রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ বলছে, লোকবল সংকট ও বঙ্গবন্ধু সেতুর সীমাবদ্ধতার কারণে ট্রেন বাড়ানো কিংবা বেশি বগি যোগ করা যাচ্ছে না। এ কারণে টিকিটের সংকট থেকেই যাচ্ছে।
জানতে চাইলে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের সুপারিন্টেন্ডেন্ট গোলাম মোস্তফা বলেন, টিকিট কালোবাজারী হচ্ছে না, এ কথা বলা খুবই মুশকিল। তবে তারা এটি ঠেকাতে যাথাসাধ্য চেষ্টা করছেন। এ কারণে একজন মানুষকে চারটির বেশি টিকিট দেওয়া হচ্ছে না। এরপরও কেউ টিকিট নিয়ে কালোবাজারে বিক্রির চেষ্টা করলে তাকে আটক করা হচ্ছে। এছাড়া জেল-জরিমানাও করা হচ্ছে।
এ সময় রেল কর্তৃপক্ষের সংকটের কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, ঈদ উপলক্ষে যত টিকিট বিক্রি হচ্ছে, এর প্রায় ৩৮ শতাংশই চলে যাচ্ছে কোটায়। আর বিপুল চাহিদা থাকার পরও নানা সংকটের কারণে ট্রেনের সংখ্যা বাড়ানো যাচ্ছে না বলেও স্বীকার করেন এই রেলওয়ে কর্মকর্তা।
খবর কৃতজ্ঞতাঃ বাংলানিউজ২৪