নাব্যতা হারানো পদ্মায় এখন আর সেই ঢেউ নেই। নৌকা আছে, তবে তাতে রঙিন পাল তোলা নেই। মাঝি আছে, তবে তাদের মুখে সেই গান আর নেই। তবে এতো শূন্যতার মাঝেও পদ্মাকে ঘিরেই ঢেউ লেগেছে তারুণ্যের। তিলোত্তমা রাজশাহী শহরের সবই যেন এখন পদ্মা নদীকে ঘিরে।
নদীর প্রবহমান সেই জোয়ার, কলকলিয়ে পানির শব্দ, মাঝিদের গান-সবই এখন অতীত। সেই অতীতকে পেছনে ফেলে নদীর কূলে এখন শুধুই তারুণ্যের জয়গান। যেন রাজশাহীর বিনোদনের সব স্রোত এখন মিশে একাকার হয়ে গেছে পদ্মা নদীর তীরেই। শুক্রবার (২৪ আগস্ট) সকাল থেকে সন্ধ্যা গড়িয়ে খানিক রাত অবধি পদ্মা নদীর কূলে থাকছে মানুষের আনাগোনা।
বিশেষ করে ভ্রমণ পিপাসু মানুষ হলে তো আর কথায় নেই। বর্ষণহীন বর্ষাতেও এবার ফুলে ফেঁপে উঠেছে ক’দিন আগের মরাপদ্মা। পদ্মার জলরাশিতে তাই এখন দেখা যায় আলোর নাচন। ঈদের ছুটিতে তাতে যোগ হয়েছে খানিকটা আনন্দের ঢেউ ও শান্তির সুবাতাস। ভরা পদ্মার প্রতি মানুষের যেমন টান থাকে, তেমনই আছে এখন। তাইতো ঈদের তৃতীয় দিন বিকেলেই জন সমাহারে ভরে উঠেছে স্রোতস্বিনী পদ্মানদীর পাড়।কোলাহলপূর্ণ হয়ে উঠেছে তীরবর্তী গোটা এলাকা। পঞ্চবটি থেকে বুলনপুর পর্যন্ত প্রায় পাঁচ কিলোমিটার শহররক্ষা বাঁধ ছুঁয়ে পদ্মার পাড় এখন রাজশাহীবাসীর জন্য সেরা বিনোদনের ঠিকানা। তারুণ্যের হৈ চৈ, ঈদ আনন্দের মাতামাতি, কোথাও ছোট ছোট নৌকায় চরে নদীর বুকে ঘুরে বেড়ানো চলছে।
এমনিতেই সারাবছর মানুষের পদচারণায় মুখরিত হয়ে থাকে রাজশাহীর পদ্মানদীর তীর। এর ওপর ঈদের বাড়তি আনন্দ যোগ হয়েছে এখন। ঈদের ছুটিতে জনসমাগম বেড়েছে দ্বিগুণ। সবাই যেন প্রাণ ভরে অখণ্ড অবসর উদযাপন করছেন। শহুরে আটপৌরে জীবনের ক্লান্তি ঝেড়ে ফেলে আবার সবকিছু নতুন করে শুরু করতে চাইছেন। দীর্ঘ অপেক্ষার পর নদীবক্ষে গিয়ে স্রোতের কলকলানি শব্দে খুঁজছেন মানসিক প্রশান্তি।
বিকেলে পদ্মাপাড়ে বেড়াতে আসা সারাফাত হোসেন বাংলানিউজে বলেন, ঈদের দিন পশু কোরবানিকে ঘিরেই ছিল সব ব্যস্ততা। দ্বিতীয় দিন বিকেলে ছিল বৃষ্টি। কোথাও বের হওয়া যায়নি। তাই আজ বিকেলে পরিবার-পরিজন নিয়ে ঘুরতে এসেছেন পদ্মাপাড়ে। রোজ তো আর এমন সুযোগ পাওয়া যায় না। তাই নদীর তীরে বসে নির্মল বাতাস প্রাণ ভরে উপভোগ করছেন। এমন মুক্ত বাতাস আর অন্য কোথাও নেই।
নৌকা ভাড়া নিয়ে নদীবক্ষে ঘুরে আসা মাসুদ পারভেজ, নাজমুল ও শফিকুল বাংলানিউজকে জানান, পাড়ে যতো আনন্দ তার চেয়ে অনেক বেশি আনন্দ নদীবক্ষে। তাই বন্ধুরা মিলে নদীর মধ্যে নৌকা নিয়ে অনেক্ষণ ঘুরে বেড়িয়েছেন। কোনো পার্কে গিয়ে বা শহরের রাস্তায় বাইক নিয়ে দিনভর দাপিয়ে বেড়ালেও এতো ভালো লাগে না বলেও জানান তারা।
মৌসুমী আক্তার নামে এক গৃহবধূ বাংলানিউজকে বলেন, নদীর তীরে বসে নয়নাভিরাম দৃশ্য উপভোগ করতে ছেলে-মেয়েকে নিয়ে এখানে এসেছেন। চমৎকার পরিবেশ। মানুষের কোলাহলে উৎসবমুখর হয়ে উঠেছে গোটা পদ্মাপাড়৷ পশ্চিমাকাশে সন্ধ্যাতারা জ্বলে না ওঠা পর্যন্ত সেখানে বসে থাকবেন বলেও জানান।
বন্ধুদের সঙ্গে মোটরসাইকেল নিয়ে ঘুরতে এসেছেন নিউমার্কেট এলাকার জুনায়েদ খোকন। তিনি বলেন, ঈদের ফাঁকা শহরে ঘুরতে ভালো লাগে না। অন্য সময় তো যানজটের জন্য রাস্তায় বের হওয়া যায় না। আজ সেই সমস্যা নাই। এরপরও নদীর পাড়ে বিকেল হলে অনেক মানুষের সমাগম ঘটে। তাই এখানে এলে বেশ ভালো লাগে। ঈদের সময় বন্ধুদের সঙ্গে এক জায়গায় বসে চুটিয়ে আড্ডা দেওয়া যায় বলে জানান জুনায়েদ।
এদিকে মহানগরীর পঞ্চবটি আই বাঁধ থেকে শ্রীরামপুর টি-বাঁধ পর্যন্ত ঘুরে দেখা গেছে সব জায়গাতেই এখন মানুষের জটলা। কর্মস্থলে যোগ দেওয়ার কোনো তাড়া না থাকায় শুক্রবার মহানগরীজুড়ে এখন কেবলই ছুটির আমেজ। রাজশাহীতে হাতেগোনা কয়েকটি বিনোদন স্পট থাকায় মানুষের পছন্দের তালিকায় সবার ওপরেই রয়েছে পদ্মাপাড়। ছোট-বড় সবার কাছেই সমান পছন্দ। আর বিনোদন পিপাসুদের ভিড়ে পদ্মাপাড়ের চটপটি থেকে শুরু করে ফুটপাতের সব দোকানগুলোরই ব্যবসা এখন জমজমাট।
খবর কৃতজ্ঞতাঃ বাংলানিউজ২৪