দ্বিতীয় মেয়াদে প্রতিমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছেন রাজশাহী-৬ আসনের তিনবারের এমপি শাহরিয়ার আলম। সোমবার বিকালে বঙ্গভবনের দরবার হলে ১৯ জন নতুন প্রতিমন্ত্রীর শপথ নেন তিনি। রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের কাছ থেকে প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন ও গোপনীয়তার শপথ নেন রাজশাহীর একমাত্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম।
বাঘা ও চারঘাট নিয়ে গঠিত রাজশাহী-৬ আসন থেকে তিনবারের নির্বাচিত সাংসদ শাহরিয়ার আলম। তিনি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়েছেন। তার মন্ত্রিত্ব পাওয়াকে ইতিবাচক হিসেবেই দেখছেন রাজশাহীবাসী। তারা মনে করছেন, এতে এলাকার উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে। তবে যোগ্যতা, দক্ষতা ও কর্মনিপূণতা দিয়ে শাহরিয়ার আলম স্বপদে বহাল থাকতে পেরেছেন বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
বিশ্লেষকরা বলছেন, রোহিঙ্গা ইস্যুতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করা, বিদেশি কূটনীতিকদের বাংলাদেশে বিনিয়োগে উৎসাহিত করা, বিশে^ বাংলাদেশকে তুলে ধরাসহ গুরুত্বপূর্ণ নানা কাজ দিয়ে শাহরিয়ার আলম তার মেধা ও মননের স্বাক্ষর রেখেছেন।
রাজশাহী বিশ^বিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য প্রফেসর ড. এম আব্দুল খালেক বলেন, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি জায়গা। প্রতিমন্ত্রী হলেও তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আর শাহরিয়ারকে এই দায়িত্ব দেয়ার ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী নিশ্চয়ই তার পারফরমেন্স দেখেছেন। বিদেশি কূটনীতিকদের সাথে সংযোগ স্থাপন করার ক্ষেত্রে তার দক্ষতা নিশ্চয়ই প্রশংসার দাবি রাখে।
রাজশাহী বিশ^বিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য প্রফেসর ড. আনন্দ কুমার সাহা বলেন, শাহরিয়ার যোগ্যতার প্রমাণ দিয়েছেন বলেই তাকে আবার স্বপদে বহাল রেখেছেন। তবে অনেক যোগ্য ব্যক্তিও কিন্তু মন্ত্রিসভায় স্থান পাননি। এটা সম্পূর্ণ প্রধানমন্ত্রীর ব্যাপার। দেশ পরিচালনার ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী যা বিবেচনা করেছেন আমার মনে হয় সেটাই দেশের জন্য মঙ্গল বয়ে আনবে।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা প্রফেসর ড. এম আব্দুল খালেক বলেন, আমাদের দাবি ছিলো রাজশীতে পূর্ণ মন্ত্রিত্ব পাওয়ার। কিন্তু মন্ত্রিত্ব না দিলেও যে ক্ষতি হবে এমন না। শুধুমাত্র প্রধানমন্ত্রী সুনজর দিলেই হবে। তাহলে আমাদের এমপিরাই এই অঞ্চলে উন্নয়নের জন্য যথেষ্ট ভূমিকা রাখতে পারবেন।
রাজশাহীতে পৈত্রিক নিবাস হলেও বাবার চাকুরীর সুবাদে শাহরিয়ার আলম ১৯৭০ সালের ১ মার্চ চট্টগ্রামে জন্মগ্রহন করেন। তাঁর পিতার নাম মোহাম্মদ শামসুদ্দিন এবং মায়ের নাম হাফিজা খাতুন। শৈশব কাটে লালমনিরহাট ও রাজশাহীতে। শাহরিয়ার আলমের স্ত্রীর নাম আয়েশা আখতার জাহান। এ দম্পতির দুই ছেলে এক মেয়ে।
১৯৮৫ সালে রাজশাহী শিরোইল উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি এবং ১৯৮৮ সালে রাজশাহী নিউ গভঃ ডিগ্রি কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেন শাহরিয়ার আলম। পরবর্তীতে ১৯৯০ সালে ঢাকা সিটি কলেজ থেকে বাণিজ্য শাখায় স্নাতক এবং ১৯৯৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়র ইন্সটিটিউট অব বিজনেস এ্যাডমিনিস্ট্রেশন (আইবিএ) থেকে এমবিএ ডিগ্রি লাভ করেন। এছাড়া তিনি ঢাকার মিরপুর সেনানিবাসে অবস্থিত ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজে (এনডিসি) ক্যাপস্টানের সর্ব প্রথম কোর্সটি সম্পন্ন করেছেন।
১৯৯৭ সাল হতে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের একজন সক্রিয় সদস্য হিসেবে কাজ করছেন শাহরিয়ার আলম। তিনি ২০০৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রাজশাহী জেলার সকল নির্বাচনী এলাকার মধ্যে সর্বোচ্চ ব্যবধানে রাজশাহী-৬ আসন হতে প্রথমবারের মতো জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের তথ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য থাকাকালে তিনি তথ্য অধিকার আইনের খসড়ার চুড়ান্তকরণে কাজ করেন।
এছাড়া তিনি বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সদস্য, জলবায়ু পরিবর্তন, শিক্ষা ও দারিদ্র বিমোচন বিষয়ক ‘অল পার্টি পার্লামেন্টারি গ্রুপ’ এবং এমডিজি, পিআরএসপি, বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা এবং বাংলাদেশ উন্নয়ন ফোরাম সংক্রান্ত ‘অল পার্টি পার্লামেন্টারি গ্রুপের’ ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। শাহরিয়ার আলম ‘সংসদ বাংলাদেশ টিভি’র প্রিভিউ কমিটির একজন সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি এর পূর্বে আওয়ামী লীগের তথ্য, গবেষণা ও প্রচার এবং প্রকাশনা বিষয়ক সাব-কমিটির সদস্য ছিলেন।
২০১৪ সালের সাধারণ নির্বাচনে রাজশাহী-৬ (বাঘা-চারঘাট) আসন থেকে দ্বিতীয়বার সদস্য নির্বাচিত হন। এর পর তিনি স্থান পান মন্ত্রিসভায়। দ্বায়িত্ব পান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর।
পোশাক শিল্প উদ্যোক্তা হিসেবে ১৯৯৫ সালে ব্যবসা শুরু করেন শাহরিয়ার আলম। সফল উদ্যোক্তা হিসেবে তিনি ২০০৭-২০০৮ অর্থবছরে নিটওয়ার ক্যাটাগরিতে জাতীয় রফতানি ট্রফি লাভ করেন। সিআরপির সহায়তায় তাঁর কারখানাগুলোতে শারীরিক প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয় এবং সর্বাধিক সংখ্যক প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের কর্মে নিয়োগের জন্য তিনি আন্তর্জাতিক ক্রেতাদের নিকট হতে কর্পোরেট সোশ্যাল রেসপন্সিবিলিটি (সিএসআর) পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন।
রাজশাহীতে ক্রিকেট স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন শাহরিয়ার আলম। এ স্কুলের ক্রিকেটারা জাতীয় দলেও স্থান করে নিয়েছেন। তিনি বাংলাদেশ হকি ফেডারেশনের সহ-সভাপতি ছিলেন এবং বর্তমানে বাংলাদেশ টেনিস ফেডারেশনের সভাপতি ও বাংলাদেশের ক্রীড়া সংগঠন আবাহনী লিমিটেডের একজন পরিচালক। উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য তিনি প্রতিষ্ঠা করেছেন নর্থ বেঙ্গল ডেভেলপমেন্ট ফোরাম।
খবর কৃতজ্ঞতাঃ ডেইলি সানশাইন