ছোটবেলায় আমাদের সকলেরই কোন না কোন সখ থাকে। তবে আমরা কজন সেই সখকে পুঁজি করে বড় হবার সাথে সাথে জীবনে প্রতিষ্ঠিত হতে পারি বা অন্যদেরর কাছে দৃষ্টান্ত হিসেবে নিজেকে মেলে ধরতে পারি। তবে নিজের সখকে কর্মসংস্থান বা পেশা হিসেবে গড়ে তুলতে পেরেছে; এমন সফল দৃষ্টান্তের সংখ্যা এই সমাজে নগন্যই বলা চলে।
সখকে পেশা হিসেবে কাজে লাগানো এমনই এক সফল তরুণের নাম আবু সুফিয়ান তাজ। ছাত্র জীবনের শেষ না হতেই নিজের সৌখিনতাকে কাজে লাগিয়ে তাজ এখন স্বাবলম্বী, বন্ধুদের মঝে তাজ এক দৃষ্টান্তের নাম। তার বাড়ি রাজশাহী নগরীর উপশহর হাইজিং এলাকায়। বর্তমানে সে স্থানীয় একটি প্রাইভেট বিশ^বিদ্যালয়ে ব্যবসায়ী শাখার (বিবিএ) তৃতীয় বর্ষের ছাত্র।
ছোটবেলা থেকেই তাজের পছন্দ বা সখ শরীর চর্চা। স্কুল জীবনের শেষের দিকে শুরু হয় তার এই শরীর চর্চার সখ। তবে লেখাপড়াসহ নানা কারণে সেসময় তার পক্ষে ব্যায়ামাগার বা জিমে গিয়ে ব্যায়াম করা সম্ভব হয়নি। কলেজে ভর্তি হওয়ার পর স্থানীয় একটি জিমে ভর্তি হয় সে। জিম দেখে সে তখনই মনে মনে ফন্দি আঁটে ব্যক্তিগত উদ্যোগে নিজেই একটি জিম প্রতিষ্ঠা করবে। লেখাপড়া ও ব্যয়ামের পাশাপাশি সেই লক্ষ নিয়েই আগাতে থাকে সে।
উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার পর তাজ নিজে জীম প্রতিষ্ঠার জন্য বাড়িতে জানায়। তবে তার বয়স কম থাকায় বাড়ি থেকে তাকে না শুনতে হয়। এর পর সে তার ইচ্ছটা বন্ধুদের জানায় এবং বন্ধুরা তার আইডিয়াকে স্বাগত জানিয়ে তারাও বিনিয়োগের কথা জানায়। বন্ধুদের নিয়ে উপশহর এলাকায় বাড়ি খুজতে শুরু করে জিম প্রতিষ্ঠার জন্য। এর মাঝে তার মামা সালাউদ্দিন ভাগিনার উদ্যোগের কথা জানতে পারে। মামা তাজকে ডেকে নিয়ে তার সমস্ত কথা শোনেন এবং দুই বছর আগে তাজকে এক লক্ষ টাকা দেন জিম প্রতিষ্ঠার জন্য। সেই টাকা দিয়ে জিম প্রতিষ্ঠর জন্য প্রাথমিক সরঞ্জাম কিনে উপশহর এলাকায় একটি বাড়ি ভাড়া নিয়ে শুরু হয় তার পথ চলা। এর পর আর পেছনে ফিরে তাকাতের হয়নি তাকে। তার প্রতিষ্ঠিত জিমের নাম ‘ফিটলাইফ জিম’। শুরুতে তারা পরিবার থেকে এই জিম প্রতিষ্ঠা করা নিয়ে নানা প্রতিবন্ধকতা আসলেও তাজের উদ্যম ও সফতায় এখন তারাও হার মেনেছে। পরিবারের পাশাপাশি তার বন্ধুমহলেও তাজ এক অনুপ্রেরণার নাম।
তাজ জানায়, শুরুতে যখন জিম প্রতিষ্ঠার জন্য বাসায় জানাই, তখন সবাই বলে রাজশাহীতে কেও টাকা দিয়ে ব্যায়াম করবে না। তবে বাস্তবতা বিন্ন। এখন সব সয়সের মানুষের মাঝেই শারীকির সচেতনতা এসেছে। বাসা থেকেও এখন আমাকে সবাই উৎসাহ দেয়।
দুই বছর আগে ছোট পরিসরে শুরু করা জিমটিতে এখন তার আনুমানিক ১০লাখ টাকা বিনিয়োগ। সম্প্রতি পারিবারের এক সদস্যের কাছ থেকে ৪লাখ টাকা ঋণ নিয়ে জিমে বিনিয়োগ করেছে, আর সেই ঋণের অর্থ প্রতিমাসে নিয়মিত শোধও করছে সে। বর্তমানে নগরীর দড়িখরবোনা মোড় এলাকায় একটি বাণিজ্যিক ভবনে ২হাজার ৪শত স্কয়ার ফিটের বিশাল এরিয়া ভাড়া নিয়ে দিব্বি চলছে তার সেই ‘ফিটলাইফ জিম’। জিমে বর্তমানে সদস্য সংখ্যা ২৫০জনের বেশি। নারী ও পুরুষদের জন্য রয়েছে তিনটি সিফটে পৃথক ভাবে ব্যায়ামের ব্যস্থা। তাজের ইচ্ছে, তার এই জিমটি হবে নগরীর মনোরম পরিবেশে সবচাইতে সুন্দর ও বিশাল জিম। যেখানে সব বয়সের মানুষ আসবে সুস্থ ও সুন্দর জীবনের প্রত্যাশায়।
খবর কৃতজ্ঞতাঃ ডেইলি সানশাইন