ট্যাপ ছেড়ে দিয়ে বন্ধ না করে চলে যাওয়ার বদভ্যাস রয়েছে অনেকেরই। এতে মূল্যবান পানির অপচয় হয় সবসময়ই। আর ট্যাপটি যদি হয় কোনো পথের পাশে, তাহলে তো কথায়ই নেই। পানি পড়ছে তো পড়ছেই। কোনো পথচারী হয়তো মনের ভুলে ট্যাপ ছাড়ার পর বন্ধ না করে চলে গেছেন। সেই ট্যাপ বন্ধ করতে কেউই আর এগিয়ে আসেন না। এমন দৃশ্য চোখে পড়ে প্রতিদিনই।
তাই পানির এই অপচয় থামাতে রাজশাহী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা এবার স্থাপন করেছেন ‘সৌর বিদ্যুৎচালিত সেন্সর ট্যাপের মাধ্যমে সুপেয় পানি’র স্থাপনা।
এই স্থাপনায় কোনো হাতের ছোঁয়া ছাড়াই সৌর বিদ্যুৎচালিত পাম্প দিয়ে ১২০ ফুট গভীরের সুপেয় পানি সংক্রিয়ভাবে উঠে পূর্ণ করবে তিনশ’ লিটারের একটি রিজার্ভ ট্যাংক। এরপর সেই ট্যাংকের নিচে স্থাপিত সেন্সর ট্যাপের নিচে গ্লাস দিলেই সংক্রিয়ভাবে পানি বের হয়ে তা ভর্তি হয়ে যাবে।
আবার কেউ হাত ধুতে চাইলে সেন্সর ট্যাপের সামনে হাত দিলেই পানি বের হয়ে আসবে। হাত সরালেই সংক্রিয়ভাবে বন্ধ হয়ে যাবে পানি পড়া। ফলে যে কেউ আর যখন তখন পানির অপচয় করতে পারবে না। পানির অপচয় রোধে রাজশাহী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা উদ্ভাবান করেছেন ‘সৌর বিদ্যুৎচালিত সেন্সর ট্যাপের মাধ্যমে সুপেয় পানি’র এই প্রজেক্ট।
রাজশাহী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ইলেকট্রিক্যাল বিভাগের জুনিয়র ইন্সট্রাক্টর প্রকৌশলী এস এম আজম উল্লাহ ও পাওয়ার বিভাগের ইন্সট্রাক্টর প্রকৌশলী সুমন সাহার তত্ত্বাবধানে ইলেকট্রিক্যাল বিভাগের চতুর্থ পর্বের ছাত্র তানভির, কাফি, রিয়াদসহ কয়েকজন উদ্ভাবন করেছেন এই পানির স্থাপনা।
উদ্ভাবকরা জানান, ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষ প্রকৌশলী ফরিদ উদ্দিন আহমেদ তাদের সর্বাত্মক সহযোগিতা করেছেন। তার সহযোগিতার কারণেই এই প্রজেক্টটি করতে পেরেছেন তারা। এই স্থাপনায় লজিক কন্ট্রোলার, সেন্সর, সোলার প্যানেল ও রিজার্ভ ট্যাংক ব্যবহার করা হয়েছে।
উদ্ভাবিত এই প্রজেক্টে ব্যবহৃত রিজার্ভ ট্যাংকের পানি নির্দিষ্ট পরিমাপের নিচে এলেই কাজ শুরু হবে। সোলার প্যানেলের সাহায্যে লজিক কন্ট্রোলার স্বয়ংক্রিয়ভাবে ১২০ ফুট গভীর থেকে নিরাপদ পানি তুলে আনবে। রিজার্ভ ট্যাংক ভর্তি হলে স্বয়ংক্রিয়ভাবেই পানি উত্তোলন প্রক্রিয়াটি বন্ধ হয়ে যাবে।
প্রজেক্টের স্থাপনায় ব্যবহৃত সেন্সরে প্রোগ্রামিং এমন অত্যাধুনিকভাবে তৈরি করা হয়েছে যে, সেন্সরের নিচে হাত বা গ্লাস রাখলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ট্যাপ দিয়ে ফোর্সের সঙ্গে পানি পড়তে শুরু করবে। আবার সেখান থেকে হাত অথবা গ্লাস সেন্সরের নিচ থেকে সরিয়ে নিলেই পানি পড়া বন্ধ হয়ে যাবে।
জানতে চাইলে রাজশাহী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ভারপ্রাপ্ত তথ্য কর্মকর্তা ও ইন্সট্রাক্টর (পাওয়ার) বিপ্লব কুমার দেব বলেন, এক বছর হলো প্রজেক্টটি তৈরি করা হয়েছে। গত বছরের মার্চে এটি করা হয়েছিল। এরইমধ্যে রুয়েটের একটি বিশেষজ্ঞ দল এটি পরিদর্শন করে গেছে। এছাড়া অনেকেই এই প্রজেক্ট তৈরির ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন বলেও জানান এই তথ্য কর্মকর্তা।
রাজশাহী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষ প্রকৌশলী ফরিদ উদ্দিন আহমদ জানান, তার শিক্ষার্থীদের উদ্ভাবিত এই প্রজেক্ট অবশ্যই সাড়া ফেলবে। এই প্রযুক্তি যেকোনো প্রতিষ্ঠান কিংবা বাসা-বাড়িতে ব্যবহার করা যাবে। এতে একদিকে সবাই যেমন বিশুদ্ধ পানি পান করতে পারবে। অন্যদিকে পানির অপচয় রোধ করাও সম্ভব হবে।
খবর কৃতজ্ঞতাঃ বাংলানিউজ২৪